reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ৩০ এপ্রিল, ২০২৪

লালমনিরহাট-মির্জাপুর-উল্লাপাড়া

নলকূপে উঠছে না পানি, সেচ-গৃহের কাজে দুর্ভোগ 

উল্লাপাড়ায় ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় অগভীর নলকূপে পানি কম উঠছে সেচ নিয়ে শঙ্কায় কৃষকেরা। ছবি: প্রতিদিনের সংবাদ

তাপপ্রবাহের কারণে লালমনিরহাট, টাঙ্গাইলের মির্জাপুর ও সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় দেখা দিয়েছে পানির সংকট। লালমনিরহাটে পানিসংকটে ব্যাহত হতে পারে জেলার বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা। অন্যদিকে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে নলকূপে পানি না ওঠায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে সংসারের কাজকর্ম। অপরদিকে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায়ও অগভীর নলকূপে পানি কম ওঠায় সেচ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে লালমনিরহাট জেলাজুড়ে। চলমান তাপপ্রবাহে পুড়ছে ভুট্টা, ধান ও সবজির খেত। তবে সাধ্যমত কৃত্রিমভাবে পানি দিয়ে কোনোরকম খেত বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছে কৃষকরা। এছাড়া পানির সংকটে ব্যাহত হতে পারে বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা।

সরেজমিন দেখা গেছে, পানির অভাবে ভুট্টা খেত যেন শুকনো খড়িতে রুপান্তরিত হয়েছে। যেসব গাছে ভুট্টা এসেছে তার মোছা শুকিয়ে দানাগুলো একেবারে ক্ষুদ্র হয়ে গেছে। যেগুলো বাজারজাত বা প্রক্রিয়াজাত করার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের ভুট্টা চাষী বেলাল হোসেন জানান, তিনি তার ৫ বিঘা জমিতে ভুট্টা লাগিয়েছেন। এর মধ্যে তিন বিঘায় হালকা সেচের ব্যবস্থা করেছেন। এমন সময় বৃষ্টিসহ কালবৈশাখী ঝড় হয় কৃষকদের সেচ সমস্যা হয় না। কিন্তু এ সময়ে এমন খরা এর আগে কখনো চোখেই পড়েনি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর লালমনিরহাটের উপপরিচালক ড. মো. সাইখুল আরিফিন এ বিষয়ে জানান, এ সময়টা হারভেস্ট করার জন্য উপযুক্ত। তবে যেসব খেতে পানি সংকট দেখা দিবে সেসব খেতে সকাল বা বিকেল বেলা কৃত্রিমভাবে সেচ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এ বছর জেলা জুড়ে ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষাবাদ হয়েছে।


  • মির্জাপুরে দেড় মাস ধরে পানির অভাবে বাধাগ্রস্ত গবাদিপশু পালন ও সংসারের কাজকর্ম
  • ৩০ ফুটের বেশি নিচে নেমে যাওয়ার কারণে নলকূপে পানি উঠছে না বলছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর
  • জমিতে সেচে সময় ও খরচ বেড়েছে। এখন সাবমার্সিবলই ভরসা

মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি জানান, টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। নলকূপে (টিউবওয়েল) পানি ওঠা বন্ধ হওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পানির অভাবে গবাদিপশু পালন ও সংসারের কাজকর্মও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বলছে, পানির স্তর নিচে নামার কারণে নলকূপে (হ্যান্ড টিউবওয়েল) পানি উঠছে না। তবে বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলেও আশা তাদের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে নলকূপে (হ্যান্ড টিউবওয়েলে) পানি উঠছে না। গত মার্চ থেকেই পানি ওঠা কমে যায়। আর এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে এই সমস্যা তীব্র হতে শুরু করে। পানিসংকটের কারণে সামর্থ্যবান অনেকেই বাড়িতে মোটর বসিয়ে নিচ্ছেন।

সরেজমিনে উপজেলা বহুরিয়া গ্রামে দেখা যায়, অধিকাংশ নলকূপে পানি উঠছে না। অনেকে নলকূপের সঙ্গে মোটর বসিয়েছেন। তবে সেখানেও পানির দেখা মিলছে না।

বহুরিয়া গ্রামের জুলহাস বয়াতী বলেন, ‘গত দেড় মাস ধরে পানির সমস্যা। বর্তমানে টিউবওয়েলে পানি ওঠে না। এখন দূরের একটি শ্যালো মেশিন থেকে পানি এনে খেতে হচ্ছে।’ উপজেলার চান্দুলিয়া গ্রামের পরিস্থিতি একই। গ্রামটির অধিকাংশ নলকূপে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে। পানিসংকটের কারণে সংসারের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে।

চান্দুলিয়া গ্রামের মেহের আলী বলেন, এক জগ পানি তুলতে কমপক্ষে ১০ মিনিট সময় লাগে। আশপাশের পুকুর ও খালেও পানি নেই। এমন অবস্থায় খুব কষ্টে আছি।

মির্জাপুর বাজার, পোস্টকামুরী, উয়ার্শী, রোয়াইল, বাইমহাটি, দেওহাটা, গোড়াই, সাহাপাড়া, কুমারজানি, পাহাড়পুর, কুতুববাজার, বুড়িহাটি এসব এলাকা ঘুরেও দেখা যায়, টিউবওয়েলে পানি উঠছে না।

মির্জাপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মো. বাহার উদ্দিন জানান, সারাদেশেই পানির সংকট। পানির স্তর ৩০ ফুটের বেশি নিচে নেমে যাওয়ার কারণে হ্যান্ড টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। এজন্য আমরা এখন টিউবওয়েল আর সাবমার্সিবল মোটর বরাদ্দ দিচ্ছি। বৃষ্টিপাত না হলে এই সমস্যার সমাধান হবে না বলেও জানান তিনি।

উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, তাপপ্রবাহে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় খরা ভাব দেখা দিয়েছে। উপজেলার অনেক এলাকায় ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। বিভিন্ন মাঠে বোরো (ইরি) ধান আবাদে অগভীর সেচ মেশিনগুলোয় কম মাত্রায় পানি উঠছে। এছাড়া জমিতে পানি সেচে বেশি সময় লাগায় মাঠের বোরো ধান ফসল নিয়ে নানা ভাবনায় দিন পার করছেন কৃষকেরা। এদিকে অনেক এলাকাতেই নলকূপে (টিউবওয়েল) পানি খুবই কম উঠছে। কৃষক ও গৃহস্থ পরিবারগুলোর কাছে ভূগর্ভের পানি তোলায় সাবমার্সিবলই এখন ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কৃষি অফিস সূত্রে জান যায়, উপজেলায় এবার মোট ৩০ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯৫ হেক্টর বেশি জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে। এখন প্রায় সব মাঠেই ধানের ছড়া বেরিয়েছে। চলমান তাপপ্রবাহে অগভীর সেচ মেশিনগুলোয় পানি কম উঠায় বোরো ধান জমিতে পানি সেচে বেশি সময় লাগছে। এতে সেচ বাবদ খরচ বেশি হচ্ছে।

নাগরৌহা গ্রামের কৃষক করিম, শফিউদ্দিন সরকার, জাফর মিয়া, কাদের মিয়া জানান, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় তাদের অগভীর সেচ মেশিনগুলোয় পানি কম মাত্রায় উঠছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সূবর্ণা ইয়াসমিন সূমী বলেন, চাহিদা মোতাবেক সেচ মেশিনগুলো চালিয়ে সেচ দেওয়া ঠিক রাখতে হবে।

পিডিএস/আরডি

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close