reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ৩০ এপ্রিল, ২০২৪

কিডনি প্রতিস্থাপন ও কিডনি কেনা-বেচা সংক্রান্ত কিছু সঠিক তথ্য এবং ভুল ধারণা

কিডনি স্থায়ীভাবে অকার্যকর হয়ে গেলে বেঁচে থাকার পথ দুটি: ডায়ালাইসিস করা অথবা কিডনি প্রতিস্থাপন। দুটি বিষয় নিয়েই মানুষের মাঝে রয়েছে নানা বিভ্রান্তি, আতঙ্ক ও ভুল ধারণা। কিডনির চূড়ান্ত পর্যায়ের অকার্যকারিতা বা End Stage Renal Disease (ESRD) হলে তবেই বিকল্প উপায়ে কিডনির কাজ চালানোর কথা ভাবা হয়।

কিডনি বিক্রি নিয়ে আমাদের সমাজে বিভ্রান্তিকর অনেক কথার প্রচলন রয়েছে। আইনত কাউকে কিডনি দান করা যায়, কিন্তু বিক্রি করা যায় না। কিডনি প্রতিস্থাপনের আগে দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষা, সঠিক ম্যাচিং ও প্রস্তুতির ব্যাপার রয়েছে। সবকিছু মিলে গেলে তবেই কিডনি দাতা ও গ্রহীতা দুজনের অস্ত্রোপচার একই সঙ্গে শুরু হয়। এই অস্ত্রোপচার জটিল এবং যে কোনো জায়গায় যে কেউ চাইলে করতে পারেন না।

আইন অনুযায়ী জীবিত দাতার কাছ থেকে কিডনি নিয়ে সংযোজন করা যায়। এ ক্ষেত্রে মা-বাবা, ভাই-বোন, ছেলে-মেয়ে, চাচা, মামা, খালা, ফুফু ও স্বামী-স্ত্রী কিডনি দান করতে পারেন। কেউ যদি মৃত্যুর আগে কিডনি দান করে যান, তাঁর আত্মীয়স্বজনের অনুমতি সাপেক্ষে সেই কিডনি অন্য কারও শরীরে সংযোজন করা যায়। কিডনি নিয়ে আমাদের শিক্ষিত সমাজেও ভুল ধারনা আছে। গত কিছুদিন ধরে ফেসবুক সহ সোস্যাল মিডিয়ায় জনৈক মিল্টন সমাদ্দর এর ওল্ড এন্ড চাইল্ড কেয়ার হোমে আশ্রিত অসহায়, অবহেলিত মানুষের কিডনি কেনাবেচা নিয়ে যে প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে সে ব্যাপারে কিছু কথা বলা জরুরী।

কিডনি বেচাকেনা করা এতো সহজ না। তাও আবার বৃদ্ধ রোগাক্রান্ত মানুষের কিডনি! । বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ৬০ বছর পর্যন্ত কিডনি ডোনেট করা যায়। গ্রুপে মিললেও সেই কিডনি আর একজনের (গ্রহীতার) শরীরে ম্যাচ করবে কিনা সেটার জন্যও যিনি কিডনি দাতা তাকে অনেক ধরনের টেষ্ট করতে হয়। কিডনি ট্রান্সফার করতে গেলে পাশাপাশি দুইটা অপারেশন থিয়েটার প্রস্তুত রাখতে হয়। ৩০-৪০ মিনিটের মধ্যে একজনের শরীর থেকে অন্য জনের শরীরে ট্রান্সফার করতে হয়। তারপরেও কিডনি প্রতিস্থাপন ফেইলিউর (Rejection) হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ব্যাপারটা এমন না যে কিডনি খুলে ফ্রিজে রেখে দিলেন তারপর সময় সুযোগ মতো বিক্রি করলেন।

দশ বিশটা কিডনি খুলে রেখে কিডনি পাচার এগুলো হয়তো সিনেমা দেখে পাওয়া ভুল ধারনা। আপনি আপনার একটি কিডনি বিক্রি করতে গিয়ে দেখেন তো একটা কিডনি বিক্রি করা এত সহজ কিনা। কারো গ্রুপের সাথে মিললেও, আপনার কিডনি যাকে দান করছেন তার শরীরে সেই কিডনি ম্যাচ করবে কিনা, আপনার রক্তে, ইউরিনে, হরমোন, ব্লাড প্রেসার এবং ডায়াবেটিস সহ আরো অনেক প্রবলেম আছে কিনা এগুলো টেষ্ট করার পর সিদ্ধান্ত নিবে আপনি ফাইনালি কিডনি দিতে পারবেন কিনা ।

বিশ্বাস করুন, বাংলাদেশের যে পরিমান লোক ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, কিডনি বেচাকেনা যদি সত্যিই এতোটা সহজলভ্য হতো তাহলে বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ কিডনি বেঁচে দিত।

মিল্টন সমাদ্দার এর অনেক দোষ গুণ থাকতে পারে, তিনি রাস্তা থেকে তুলে এনে অসহায় অবহেলিত মানুষগুলোকে আশ্রয় দিচ্ছেন সেটা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। তবে অসহায় মানুষের জন্য সাধারণ মানুষের দান কৃত টাকার সুষ্ঠু এবং সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। পাশাপাশি নিরেপক্ষ এবং বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিটি করে তার এযাবৎ কালের সকল কর্মকান্ডের তদন্ত ও আর্থিক বিষয়গুলো অডিট করা যেতে পারে। আর পরিশেষে সাংবাদিকদের মধ্যে যারা হেলথ বিট কাভার করেন বা স্বাস্থ্য সম্পর্কিত রিপোর্ট করেন। তাদের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জ্ঞানলাভ করা আবশ্যক। পাশাপাশি এ ব্যাপারে তাদের প্রশিক্ষণের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে উদ্যোগ নিতে হবে।

লেখকঃ

ডাঃ ফজলে এলাহী খাঁন, সহযোগী অধ্যাপক (কিডনি বিভাগ) এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক কলামিস্ট।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কিডনি,কিডনি প্রতিস্থাপন,কিডনি ডায়ালাইসিস কমপ্লেক্স
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close