reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৫ মার্চ, ২০২৪

বিসিএস স্বপ্ন ছেড়েও তিনি স্বপ্নময়ী

নাসরিন সুলতানা শ্যামলী। যুগান্তরের পথযাত্রী এক শিক্ষিকার নাম। বয়সের কোটা অভিজ্ঞতার সাজে খুব মায়াবীরূপে সজ্জিত হলেও তিনি যেন শিক্ষাবিপ্লবে চির সম্মানিত। এই শিক্ষিকার জন্মভূমি দেশের দক্ষিণের জনপদ লক্ষ্মীপুর। বাবা-মায়ের আদুরে কন্যা শ্যামলী শৈশব থেকেই স্বপ্নময়ী। সামাজিক বাধা ও বিপত্তির থোড়াই কেয়ার করে এক প্রতিষ্ঠানেই চাকরি করে কাটিয়েছেন দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময়। শ্রেষ্ঠ শিক্ষক, কর্মরত প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পদকসহ পেয়েছেন নিজ কাজের রেকর্ডসংখ্যক স্বীকৃতি। লক্ষ্মীপুরের স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রিন্সিপাল কাজী ফারুকী কলেজে সহকারী অধ্যাপক পদে মেধা বিলিয়ে দেওয়া এই মহীয়সী জয়িতার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জিহাদ হোসেন রাহাত

কেমন আছেন?

জি, আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।

সম্প্রতি আপনি যুগান্তরের সহযাত্রী নামক একটি স্মারক পেয়েছেন, সে বিষয়ে জানতে পারি?

আসলে আমি লক্ষ্মীপুরের সর্বাধিক চর্চিত বিদ্যাপীঠ প্রিন্সিপাল কাজী ফারুকী স্কুল অ্যান্ড কলেজে কর্মরত। এখানে একটানা এক যুগেরও বেশি সময় পার করেছি। ফলে সম্প্রতি আমি আমার কর্মরত প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ এ সময় পার করায় প্রতিষ্ঠানের সাবেক শিক্ষার্থীদের সংগঠন এক্স-ফারুকীয়ান’স অ্যাসোসিয়েশন ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে উপহার পেয়েছি- যুগান্তরের সহযাত্রী নামক একটি সম্মাননা স্মারক।

আপনার শিক্ষকতার শুরু কীভাবে বলবেন কী?

বিস্তারিতভাবে বলি, আমি এই প্রতিষ্ঠানে যোগদান করি ২০১১ সালের পহেলা ডিসেম্বর। এটিই আমার প্রথম চাকরি। অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ার সময় এক কাজিনের সঙ্গে প্রাইমারিতে এপ্লাই করি। পরীক্ষা দিয়ে পাস করি এবং চাকরিও হয়। কিন্তু আমার পরিবার সেটি পছন্দ করেনি। অবশ্য আমারও প্রাইমারিতে তেমন আগ্রহ না থাকায় সেটিতে আমি যোগদান করিনি- এসব এই প্রতিষ্ঠানে যোগদান করার আগেকার কথা। আমি এখানে মানবিক বিভাগে প্রভাষক হিসেবে শুরু করেছি। এখন সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছি। শুরুর দিকে তিন বছর ও বর্তমানে দুবছর রয়েছি বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্বে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যাপক যা ভাইস প্রিন্সিপাল বলা হয় সে দায়িত্ব সফলভাবে পালন করেছি দীর্ঘ দুই বছর।

পুরস্কার-সম্মানা বিষয়ে বিস্তারিত জানা

যাবে?

জি, আমি ২০১৬ সালে উপজেলায় শ্রেষ্ঠ শিক্ষক, ২০১৭ সালে কর্মদক্ষতা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা, ভালো পাঠদান, কর্তব্যপরায়ণতা এবং সুন্দর-সুচারুরূপে দায়িত্ব পালন করায় এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা, ঢাকা কমার্স কলেজের স্বপ্নদ্রষ্টা, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অধ্যাপক কাজী নুরুল ইসলাম ফারুকী স্যার (চেয়ারম্যান স্যার) আমাকে চেয়ারম্যান পদকে ভূষিত করেন। এর আগে ও পরে এ পর্যন্ত আমি আরো অনেক পুরস্কার সম্মাননা পেলেও সম্প্রতি যুগান্তরের সহযাত্রী-সম্মাননা স্মারকটি আমাকে করেছে মন্ত্রমুগ্ধ। গত তেসরা ফেব্রুয়ারি (২০২৪) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৯তম উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল স্যার আমার হাতে যে ক্রেস্ট তুলে দিয়েছেন সেটিও আমাকে করেছে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত।

পদক-পুরস্কার, সম্মাননা ও কর্মরত প্রতিষ্ঠান নিয়ে আপনার অনুভূতি কেমন?

আমার মতে, অনুভূতিই স্মৃতি আর স্মৃতিতেই অনুভূতি। এই প্রতিষ্ঠান নিয়ে আমার অনুভূতি বলে শেষ করা যাবে না। শ্রদ্ধেয় প্রফেসর কাজী নুরুল ইসলাম ফারুকী স্যারের সান্নিধ্যে থেকে শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় সেবা দিতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। আমার শিক্ষকতা জীবনের প্রায় সব অর্জন এই প্রতিষ্ঠানকে ঘিরেই আবর্তিত।

কেন বিসিএস দেননি জানতে পারি?

রিটেনের প্রস্তুতি নিয়েছি। অভিজ্ঞতার উদ্দেশে শুরু হয় শিক্ষকতা পেশার সূচনা। অবশ্য এটি অভিজ্ঞতা অর্জনের লক্ষ্যে আমার দেখা স্বপ্নেরই অংশ। স্বপ্নময় সেই শুরু যে যুগ পেরিয়ে যুগান্তরের পথ ধরবে এবং আমাকে সম্মানিত করবে- সেটি কল্পনাও করিনি। আমি সব সময় জন্ম হোক যথাতথা, কর্ম হোক ভালো- প্রবাদটি নিয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতন করি। বিসিএস একটি স্বপ্নের জায়গা। যেখানে জন্মস্থান, জাত, ধর্মের ঊর্ধ্বে গিয়ে মেধার কদর হয়। মেধাকে আমি সম্মান করি। একসময় বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন থাকলেও যখন এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছি, সহকর্মীসহ শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা, প্রতিষ্ঠান থেকে মূল্যায়ন, সম্মান এবং কর্তব্যবোধ সব ভুলিয়ে পিকেএফএসসি মুখী করে দিয়েছে। এখন আমি বিসিএস ক্যাডার তৈরি করার এবং শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ার জন্য সেবা দিয়ে যাচ্ছি।

আপনার জন্ম মূলত কোথায়?

লক্ষ্মীপুর জেলা সদরের মান্দারী গ্রাম আমার শেকড় জনপদ- বাবার বাড়ি। তবে মূলত আমার জন্ম হয়েছে রংপুরে। আমার বাবার নাম নেছার আহমেদ পাটওয়ারী এবং মায়ের নাম আয়েশা খান।

শিক্ষকতার শুরুর দিকটা কেমন ছিল?

প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীর কোনো পথই মসৃণ নয়। আমার পথও মসৃণ ছিল না। আমি শুধু কাজ করে গেছি। কর্মমুখরতাই বদলে দিয়েছে আমার নিয়তি।

স্বপ্ন দেখাকে আপনি কতটুকু সমর্থন করেন?

পৃথিবীতে স্বপ্নহীন মানুষ হয় না। স্বপ্ন যে কেউ দেখতে পারে। তবে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে সবাই একাগ্রচিত্তে কাজ করতে পারে না। আমি স্বপ্ন দেখাকে সমর্থন করি, তবে নিজ স্বপ্ন বাস্তবায়নে পরিশ্রম ও চেষ্টা না করাদের সমর্থন করি না। চেষ্টাশীল স্বপ্নবাজ মানুষ মাত্রই সফল। আমি আগেও স্বপ্ন দেখতাম, এখনো দেখি। আগে স্বপ্নের একটি বড় অংশ নিজেকে নিয়ে দেখলেও এখন দেখি মানুষ গড়ার স্বপ্ন।

একজন শিক্ষিকা হিসেবে আপনি কতটুকু সফল?

সফলতা দানের মালিক আল্লাহ। আমার শিক্ষার্থীরা যেদিন বাংলাদেশ ছাড়িয়ে বিশ্বের সম্পদ হয়ে উঠবে, সেদিনই আমি সফল হব।

শিক্ষকতার পাশাপাশি আর কিছু করেন

কি?

জি আমি একজন এমএএস গবেষক। গবেষণাকর্ম চালাচ্ছি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। এমএএসে শুধু রিচার্স পেপার জমা দেওয়া বাকি আছে। দুটো পরীক্ষা হয়। সেগুলোতে ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছি। পাশাপাশি একজন সংসারী নারীও বটে। শিক্ষকতার পাশাপাশি এ দুটো জিনিসও আমার শেকড়ের অংশ।

পরে এই মহীয়সী সাহসী জয়িতার প্রতি সম্মান ও ধন্যবাদ জানিয়ে সাক্ষাৎকার পর্বটি শেষ হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close