reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

দুই শিক্ষার্থীর সফলতার গল্প

পড়াশোনার পাশাপাশি তারা দুজনেই ছবি আঁকেন। ছবি আঁকায় পেয়েছেন সফলতা। অন্যরা যখন অলস সময় কাটান, তখন তাদের রংতুলিতে রঙিন হয়ে ওঠে ক্যানভাস। আঁকাআঁকি থেকে তাদের হাতখরচের জোগান হয়। তাদের নিয়ে লিখেছেন মুহাম্মদ শফিকুর রহমান

সাবিহা বিনতে শহীদ (স্বর্ণা)

মা বিভিন্ন হস্তশিল্প তৈরি করতেন। প্রবল আগ্রহ নিয়ে তা দেখতেন। ভাবতেন এমনটা কবে করবেন। মায়ের কাজ দেখেই তার মধ্যে আগ্রহের জন্ম। নজরুল সরকারি কলেজে ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন তিনি। পাশাপাশি ছবি এঁকে পেয়েছেন সফলতা। এই সফল আঁকিয়ের নাম সাবিহা বিনতে শহীদ। ডাকনাম স্বর্ণা। তিনি উত্তরা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেছেন সফলতার সঙ্গে। পরিবার নিয়ে ঢাকার উত্তরায় থাকেন।

মানুষ তো শখের বসে নানা রকম কাজ বেছে নেয়। ছবি আঁকার মধ্যে নিজের আত্ততৃপ্তি খুঁজে পান। সে কারণে তিনি ছবি আঁকা বেছে নিয়েছেন। গ্রামের প্রাকৃতিক দৃশ্য তাকে খুব টানে। তার ভালো লাগে। সে কারণে বেশির ভাগ প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি আঁকেন তিনি। তবে পেনসিল স্কেচ করতে তার খুবই ভালো লাগে। তিনি অয়েল প্যাস্টেল, অ্যাক্রিলিক কালার, পেন স্কেচ, ক্রাফটিং করে ছবি এঁকেছেন অনেক।

চেষ্টা করতে করতেই তার ছবি আঁকা শেখা। মাঝেমধ্যে যখনই ঠেকে গেছেন। ইউটিউবের সাহায্য নিয়েছেন। এ পর্যন্ত শতাধিক ছবি এঁকেছেন। একদিকে পড়াশোনা, অন্যদিকে ছবি আঁকা। কোনো সমস্যা হয় কি না জানতে চাইলে বলেন, আমি সময় বের করে নিয়ে ছবি আঁকি। আসলে ভালো লাগার জিনিসের জন্য সময় বের করে নেওয়া খুবই সহজ। কোনো কিছু আঁকার ইচ্ছা জাগলে আমি যেকোনো সময় আঁকা শুরু করি। দেখা যায়, গাড়ির মধ্যে জ্যামে থাকলেও ছোট নোটবুকে স্কেচ করা শুরু করি।

স্বর্ণার মতো যারা পড়াশোনা করেন। তারা ইচ্ছে করলে ছবি আকার মতো সৃজনশীল কাজ করতে পারেন- এমনটাই মনে করেন তিনি। মাস শেষে ছবি বিক্রি করে যা আয় হয়। তাতে তিনি সন্তুষ্ট। তার মতে, আয় সামান্য হলেও আনন্দ অসমান্য। অন্ত হাত খরচের জন্য মা, বাবার কাছে চাইতে হয় না।

ভালো ছবি আঁকেন যারা। তাদের তো এক্সিবিশনের ডাক পড়বেই। স্বর্ণাও এর বাইরে নয়। তিনি অনেকগুলো এক্সিবিশনে অংশ নিয়েছেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো igcontest art – Date (8-18 august 2021),Youth Photography Fiesta, workshop & Art Fest-2022, Abhijan Presents International Youth Carnival: IYC Season 0.2Õ (7-14 October, 2022) (Got Silver Award), Carnival Di Creativity season-0.3 (Best award) (8 Feb-2023),Way to artistry dream Season-5 (23rd-24th September, 2022) (জাতীয় চিত্রশালা ভবন), BIJOY (12-21 December, 2022) Dubai International Art Center .

এর মধ্যে তিনি ৪টি এক্সিবিশনে পুরস্কার পেয়েছেন। ফেসবুকে তার পেজের নাম আর্টিসান ভ্যালি। এখানে গেলে তার শিল্পকর্ম দেখা যায়। আবার অর্ডারও দেয়।

নতুন যারা ছবি আঁকতে চান। তাদের জন্য তার পরামর্শ হলো, শুরুতেই কেউ কখনো সফলতার সর্বোচ্চ পর্যায়ে যাওয়া সম্ভব না। প্রথম দিকে খারাপ হবেই আঁকা, সে জন্য হাল ছেড়ে দেওয়া যাবে না। তুমি কিছু পারো না এমন ভাবা যাবে না। সময় দিতে হবে, নিজের ইচ্ছাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তবেই ভালো কিছু হবে।

মায়ের পাশাপাশি বড় ভাই স্বর্ণার ছবি আঁকায় প্রচুর উৎসাহ দেন। একবার তার ছবি আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর জন্য মনোনীত হওয়ার পর ভাইকে ফোন করে জানান। তখন ভাই খুশি হন। যেটা তার কাছে অন্যতম আনন্দের ঘটনা বলে জানান।

জীবনে যত খারাপ সময়ই আসুক না কেন আমি আমার ছবি আঁকা চালিয়ে যেতে চাই। সবার কাছে আমি আর্টিস্ট সাবিহা হিসেবে পরিচিতি পেতে চাই। এটাই হলো তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।

নিম্মি আক্তার তিসা

ছোটবেলা থেকেই তার ছবি আকার প্রতি আগ্রহ। স্কুলে পড়ার সময় এমন সুন্দর সব ছবি আঁকতেন। মানুষ অবাক বিস্ময়ে তা দেখত। এখন ফেনী সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ার পাশাপাশি শখের বসে ছবি আঁকেন। ছবি বিক্রি করে যা আয় হয় তার তাতে মাসের হাত খরচ চলে যায়। এই সফলতার গল্প যার তিনি হলেন নিম্মি আক্তার তিসা। ফেনী শহরে ছোট বোন, বাবা, মাকে নিয়ে থাকেন। ফেসবুকে তার পেজের নাম নিম্মিস আর্ট গ্যালারি। এখানে গেলে তার শিল্পকর্ম দেখা যায়। আবার যে কেউ অর্ডার করতেও পারেন। শখের নানা বিষয় থাকতে ছবি আঁকা কেন? এমন প্রশ্নে তিসা বলেন, ছবি আঁকতে ভালো লাগে ছোটবেলা থেকেই। ছবি আঁকার প্রতি এক ধরনের আকর্ষণ অনুভব করি। ছবি আঁকলে মন ভালো থাকে। ছবি আঁকার প্রতি যে ভালোবাসা, আকর্ষণ অনুভব করি, তা অন্যকিছুতে তা করি না তাই ছবি আঁকি। ছবি আঁকতে ভালোবাসি।

অ্যাক্রেলিক রং, পোস্টার রং, পেনসিল রং, সাইন পেন, গোয়াস রং ইত্যাদি অনেক কিছু দিয়েই ক্যানভাস রাঙিয়ে তোলেন। এ পর্যন্ত তিনি পাঁচ শতাধিক ছবি এঁকেছেন। পড়াশোনার ফাঁকে অবসর সময়ে ছবি আঁকেন। তার মতে, অবসর সময়ে ছবি আঁকলে কোনো ক্ষতি হয় না। আয়ের কথা জানতে চাইলে বলেন, পড়াশোনার সময়ে শখের কাজে যা আয় হয়। তাই বা মন্দ কীসে। সৃজনশীলতার বিকাশ হচ্ছে। অবসর সময় ভালো কাটছে। আর দক্ষতা অর্জন তো হচ্ছেই। এতেই তিনি খুব খুশি। তবে লেগে থাকলে ভালো আয় করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। শুরুতেই ভালো হবে না। কিন্তু পরিশ্রম করলে সফলতা আসবে। সেটা আজ হোক বা কাল হোক। নিজের ভুলটা কোথায়। সেটা বের করে সংশোধন করতে হবে। অনলাইনে একটা আর্ট কম্পিটিশন তিনি পুরস্কার জিতেছেন। অবশ্য ছোটবেলায়ও আঁকাআঁকিতে তার ভাগ্যে অনেক পুরস্কার জুটেছিল বলে জানান।

নতুন যারা ছবি আঁকতে চায় তাদের জন্য তিসার পরামর্শ হলো, ভালো ছবি আঁকার জন্য দরকার প্রচুর পরিমাণে অনুশীলন। ভালো ছবি আঁকতে অনুশীলনের বিকল্প কিছু নেই। ছবি তো অনেকেই আঁকে। তার ছবিতে কোনো ভিন্নতা আছে কি না জানতে চাইলে তিসা বলেন, আমি রিয়েলিস্টিক পেইন্টিং করতে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করি। অনেকেই রিয়েলিস্টিক পেইন্টিং করতে পারেন না। আর কোনো পেইন্টিং করতে গেলে সেটা রিয়েলিস্টিক না হলে আমার ভালো লাগে না।

ছবি আঁকা নিয়ে একটি আনন্দ-বেদনার গল্প জানতে চাইলে তিসা বলেন, আমি যে ছবি আঁকি তা দেখে আমার স্কুলের প্রধান শিক্ষক আমার অনেক প্রশংসা করেছেন। এমনকি তিনি আমাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা অনুষদে পরীক্ষা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। আমার বাবাকে স্কুলে ডেকে নিয়ে তাকেও এ বিষয়ে অবগত করেছেন। এটাই আমার ছবি আঁকা নিয়ে সবচেয়ে আনন্দের গল্প। এক্সিবিশনে ছবি সিলেক্ট না হলে তার মন খারাপ হয়। ভবিষ্যতে তিসা চিকিৎসক হতে চান। অসহায়, দুঃখী মানুষের সেবা করতে চান। পাশাপাশি ছবি আঁকা চালিয়ে যাবেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close