ফারজানা বাতেন

  ২১ মে, ২০২৪

শত পদের ভর্তার কথা

আধুনিক বাংলায় ভর্তা শব্দটি শুধু খাবার বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। সংস্কৃত ‘ভর্ত্তা’ থেকে আগত ভর্তা শব্দের অর্থ স্বামী। ভর্তা শব্দটি খুব একটা ব্যবহৃত না হলেও এর অপভ্রংশ রূপ ‘ভাতার’ লোকজ বাংলায় বহুল ব্যবহৃত হয়। বাংলায় কোনো কিছু পিষে ফেলাকে ভর্তা বলা হয়। সব ধরনের ‘বাঙালি ভর্তা’ হাতে কিংবা বিভিন্ন উপায়ে পিষে তৈরি করা হয়ে থাকে। ভর্তা মানে দলাই-মলাই। চিপে চিড়েচ্যাপ্টা করে ফেলা। ভর্তার সঙ্গে বাঙালি জাতির সুদূর ঐতিহ্যগত সম্পর্ক। ঠিক কবে থেকে বাঙালি জাতি ভর্তা খেতে শুরু করেছে তার কোনো নৃ-তাত্ত্বিক ইতিহাস রচিত হয়নি। ধারণা করা যায়, হাজার বছর ধরেই বাঙালি ভর্তা খেয়ে আসছে। বিশেষ করে, শুঁটকি ভর্তা। মাছে-ভাতে বাঙালির শুঁটকির ভর্তা খাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না কারণ মাছ শুকিয়ে শুঁটকি করা ছাড়া মৎস্য সংরক্ষণের অন্য কোনো উপায় ছিল না। তার সঙ্গে কৃষিভিত্তিক সমাজে স্বাভাবিকভাবেই যুক্ত হয়েছিল আলুভর্তা, বেগুনভর্তা ইত্যাদি সবজিভিত্তিক ভর্তা। শুনলে আশ্চর্য হবেন, এখন মাংসভর্তাও খাওয়া হয়।

ভর্তার নানা রকম আধুনিক সংস্করণও হয়েছে। এমন কিছু নেই, যা ভর্তা হয় না। যেমন মিষ্টি কুমড়ার ছিলকা, পটোলের ছিলকা এমনকি লাউয়ের পাতা, বিচি- এসবের ভর্তা। মাছের ভর্তা, শুঁটকির ভর্তা তো বিখ্যাতই। তবে সবজি, পাতাণ্ডলতা, ফলমূলের ভর্তা-পটোল, বেগুন, ঢ্যাঁড়স, বরবটি, শিম, কপি, কচু এখন তরকারির চেয়ে ভর্তা করে খেতেই পছন্দ করে অনেক মানুষ। ভর্তার সুবিধা হচ্ছে তাতে সময় কম লাগে। সেদ্ধ করে নিয়ে কাঁচা মরিচ, শুকনো মরিচ, পেঁয়াজ আর একটু সরিষার তেল মেখে নিলেই হয়। স্বল্প সময়ে স্বল্পব্যয়ে সুস্বাদু খাবার।

একসময় ভর্তা ছিল একটু নিম্ন আয়ের লোকজনেরই খাবার। বাংলাদেশের গরিব জনপদে ভর্তা ছিল ঠেকে কাজ চালানো। ঘরে কিছু না থাকলে যা কিছু আছে তা ডলে একটু ভর্তা বানিয়ে নেওয়া হতো। এখন ভর্তা পাচ্ছে ঐতিহ্যের মর্যাদা। দেশের নামিদামি রেস্টুরেন্টেও এখন বহুপদের ভর্তা রাখা হয়।

হুমায়ূন আহমেদ ভর্তা সম্পর্কে লিখেছেন, ‘বেশির ভাগ ছোট মাছের জন্মই হয়েছে ভর্তা হওয়ার জন্য। এত দিন শুনে এসেছি ভাতে-মাছে বাঙালি, এখন থেকে ভর্তা-ভাতে বাঙালি।’

ভর্তা শুধু যে ভাতের সঙ্গে খাওয়া হয় এমন নয়। বাংলাদেশে শীত মৌসুমে পিঠার দোকানগুলোতে বিশেষ করে চিতই পিঠার দোকানে বাহারি পদের ভর্তার সমাহার লক্ষ করা যায়।

তাই আমি অনেক চিন্তা করে দেখলাম, যদি আমি আমাদের চিরাচরিত আলুভর্তা, শুটকিভর্তা ছাড়া আরো সবকিছুর ভর্তা, যা আছে কিছুটা নতুনত্ব সবার সঙ্গে শেয়ার করতে পারি তাহলে সবাই কিছুটা খুশি ও উপকৃত হবে। এরই ধারাবাহিকতায় তাই ভিন্ন আঙ্গিকে নানা রকম ভর্তার এই বই আমি সবার জন্য নিয়ে এলাম।

কিছুটা হলেও যদি কারো উপকারে আসে আমার এই ‘শত ভর্তার ভুবনে’ বইটি তাহলে আমি নিজেকে ধন্য মনে করব।

লেখক : রন্ধনবিশেষজ্ঞ, রেসিপি রাইটার, নারী উদ্যোক্তা

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close