জিহাদ হোসেন রাহাত
অনলাইনে কেক বিক্রি করে স্বাবলম্বী রোদেলা
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার বামনি ইউপির বাসিন্দা ইলমে জাহান রোদেলা। পড়াশোনার পাশাপাশি ঘরে বসে কেক বানানো তার শখ। শখের কাজটাকে কাজে লাগিয়ে বর্তমানে কেক বিক্রয় করে স্বাবলম্বী হয়েছেন তিনি। নিজের হাতের বানানো এই কেক বিক্রি করে ইতিমধ্যে বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন রোদেলা
সফল নারী উদ্যোক্তা ইলমে জাহান রোদেলা জানান, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে অনার্স প্রথম বর্ষের প্রথম দিকে তিনি শুরু করেন এই ব্যবসা। তখন হঠাৎ তারা মাথায় চিন্তা এলো নিজ থেকে কিছু একটা করার। এ সময় অনেকটা শখের বসে কেক বানানো শুরু করে সে। পরে তার পরিবারের সদস্যরা কেকের প্রশংসা করলে কেক বানানোর প্রতি উৎসাহ আরো বেড়ে যায় রোদেলার। রোদেলা বলেন, হঠাৎ এক দিন আমার এক প্রতিবেশীর কাছ থেকে কেক বানানোর ফরমায়েশ পাই। সেদিন চমৎকার কেক তৈরি করে চমক লাগিয়ে দিই। কেক খেয়ে প্রতিবেশীরা কেকের প্রশংসা করলেন এবং টাকা দিলেন। এই কেক বিক্রির টাকা এবং আমার জমানো কিছু টাকা দিয়ে কেক তৈরির সরঞ্জাম কিনি। আমার ফুপাতো বোনকে দেখেছি কেক বানাতে। তার কাছেও শিখেছি। আমার বানানো প্রথম অর্ডারের কেকটি এতটাই সুস্বাদু হয়েছিল যে যারা খেয়েছেন তারা সবাই এর প্রশংসা করেছেন। ধীরে ধীরে কেকের সুনাম ছড়িয়ে পড়ার পর আমার নিজ উপজেলা রায়পুর ও লক্ষ্মীপুরসহ অন্যসব উপজলা থেকেও কেকের জন্য ফরমায়েশ আসতে লাগল। এভাবে ২০২৪ সালে এসে পুরোদমে অনলাইন এবং অফলাইনে হরেক রকমের কেকের অর্ডার পেতে লাগলাম এবং সফলভাবে তা তৈরি করে আমি স্বাবলম্বী হতে লাগলাম।
কোন ধরনের কেক বানাতে পারদর্শী এই বিষয়ে জানতে চাইলে ইলমে জাহান রোদেলা জানান, তিনি বিভিন্ন প্রকারের কেক তৈরি করতে পারেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য চকলেট, ভ্যানিলা, স্ট্রবেরি, লেমন, অরেঞ্জ, বাটার কচ, পানদান ফ্লেভারের বিভিন্ন ডিজাইনের কেক বেশি তৈরি করেন। তা ছাড়া ছোট বাচ্চাদের জন্মদিনের ডল কেক, ডোরিমন, কার কেকসহ বিভিন্ন কার্টুনের কেক বানাতে পারদর্শী তিনি। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো তিনি ক্রেতাদের পছন্দ অনুযায়ী হুবহু ডিজাইন-সংবলিত কেক তৈরি করে চমক লাগিয়ে দিতে পারেন। চকলেট হোক কিংবা ভ্যানিলা, যে কেকই তিনি বানান না কেন- উপকরণে সব সময় বজায় রাখেন সমতা। খেতে ভালো লাগবে ভেবে অতিরিক্ত উপকরণ না দেওয়ায় তার তৈরি কেক মান, গন্ধ আর স্বাদেও অনন্য। এখন পর্যন্ত প্রায় দশটিরও অধিক ভিন্ন ডিজাইন ও ফ্লেভারের কেক তৈরির হাতেখড়ি অর্জন করেছেন তিনি। রোদেলা এইচএসসি সমাপ্ত করেছেন জেলার শ্রেষ্ঠ মহাবিদ্যালয় প্রিন্সিপাল কাজী ফারুকী কলেজ থেকে। মূলত কলেজে পড়াকালীন সময়ে ধীরে ধীরে অনলাইন ব্যবসা ও কেক তৈরির প্রতি আগ্রহের সঞ্চার হয় তার মধ্যে। বান্ধবীদের পরামর্শে একবার শুরু করতে গিয়েও পর্যাপ্ত সাহসের অভাবে হারিয়েছেন সেই উদ্যমসমেত আগ্রহমুখর ভাব। সবকিছু ছাপিয়ে তার কেকের ব্যবসা দাঁড়িয়েছে ধারণার চেয়েও বেশি।
অনলাইন প্ল্যাটফরমে কেকের ব্যবসা শুরু আগে ও পরে রোদেলা হয়েছেন ছোটখাটো নানা বাধার সম্মুখীন। কেউ বলেছেন, এই ব্যবসা দাঁড়াতে পারবে না, কেউ বলেছেন প্রতিযোগীর সংখ্যা বেশি। তবে মিডিয়া বিল্পবের এ সময়ে তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরিবেশেও টিকে আছেন তিনি। শুধু টিকে থাকার প্রশ্নেই শেষ নয়, তার উদ্যোক্তা জীবনের গতিপ্রকৃতি। ব্যবসা শুরুর পর আশপাশের অন্তত আরো দশজনকে শিখিয়েছেন কেক তৈরির প্রক্রিয়া। কীভাবে অনলাইন ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে হয়, সেটি রোদেলা আজও ঠিকমতো আয়ত্ত করতে না পারলেও বেশ জমে উঠেছে তার ব্যবসা। গতানুগতিক ব্যবসা সম্প্রসারণ ধারণার বাইরে গিয়ে তিনি গুরুত্ব দিচ্ছেন ক্রেতা সন্তুষ্টিকে। ক্রেতাদের সুবিধা-অসুবিধা নানা বিষয়ের প্রতি খেয়াল রেখে এগিয়ে যাওয়া রোদেলার স্বপ্ন কতটুকু সফলতার দেখা পাবে, তা পরিমাপ করে বলা না গেলেও তিনি যে একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে সেরা হয়ে উঠবেন ক্রমেই, সেটি হয়তো সময়ই বলে দেবে।
বর্তমানে ইলমে জাহান রোদেলার একটি নিজস্ব অনলাইন ব্যবসার ফেসবুক পেজ রয়েছে। যার নাম Rodela’s Pastry world Bakery. পেইজটি থেকে তিনি কেক বিক্রির জন্য অনেক ফরমায়েশ পান। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, কেক বিক্রির ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চান। ভবিষ্যতে এটি নিয়ে আরো ভালো কিছু করতে চান। তা ছাড়া তিনি নিজের পেশার পাশাপাশি সমাজে পিছিয়ে থাকা নারীদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তার স্বাবলম্বী হওয়ার পেছনে যাদের অবদান অনেক বেশি- বিশেষ করে তার বাবা ইকবাল হোসেন ও মা রোকসানা ইকবালসহ পরিবারের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
"