reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০২ এপ্রিল, ২০২৪

নাজমা বিনতে আমিনের গল্প

নাজমা বিনতে আমিন। সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করা সংগ্রামী এক নারীর নাম। পরিবারের সিদ্ধান্তে দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় নাজমার বিয়ে হলেও জীবনযুদ্ধের দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে তিনি হয়েছেন ৩৩তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার। পরিবার, সংসার, সমাজসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করছেন গুরুদায়িত্ব। মা হিসেবে সন্তান লালনপালনের পাশাপাশি তিনি হয়ে উঠেছেন অদম্য নারী জয়িতার বাস্তব উদাহরণ। নাজমার সংগ্রামমুখর জীবন নিয়ে লিখেছেন জিহাদ হোসেন রাহাত

কেমন আছেন?

জি, আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।

আপনার জন্ম কোথায়?

আমি জন্মেছি দেশের দক্ষিণের জনপদ কক্সবাজারে। আমার বাবার নাম মোহাম্মদ আমিন, মায়ের নাম রাহেলা আক্তার। বাবা পেশায় একজন কলেজশিক্ষক ছিলেন। বাবার সহযোগী হয়ে মা পালন করেছেন একজন আদর্শ গৃহিণী ও সংসারী নারীর ভূমিকা। কক্সবাজার সদরে আমি বেড়ে উঠেছি। শৈশব, কৈশোর, পড়ালেখা ও অন্যান্য বিষয়ে হৃদয়ের সবটুকু জুড়েই রয়েছে আমার জন্ম জনপদ কক্সবাজারের স্থান।

পড়াশোনার বিষয়ে কিছু বলবেন কি?

স্থানীয় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দশম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার আগেই আমার বিয়ে হয় সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া শেষ করা তরুণ, মুহাম্মদ আমির হোসাইনের সঙ্গে। বিয়ের পর ২০০০ সালে আমি এসএসসি ও ২০০২ সালে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছি। পড়াশোনা চলাকালীন সময়ে আমি সব সময় প্রথম সারিতে ছিলাম। প্রথম থেকে তৃতীয় স্থানের বাইরে আমার অবস্থান ছিল না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পড়েছি, আমাদের পরিবারে রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারনীতি থাকায় আমার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ হয়নি। এ ক্ষেত্রে স্নেহময় পরশে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন আমার স্বামী।

কোনো বাধাবিপত্তির শিকার হয়েছিলেন কি না?

কিছু বাধাবিপত্তি ছিল, তবে আমি চেষ্টা করেছি। আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন, বাবা-মা সবাই আমাকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সহযোগিতা করেছেন।

তখন কেমন পরিশ্রম করেছিলেন?

আমি আসলে পড়াশোনার গতিময়তা বজায় রাখার জন্য একসময় দুপুরবেলা না ঘুমানোর প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। এখনো খুব একটা অসুস্থ না হলে ঘুমাই না। এমন অনেক সময় গিয়েছে রাতে তাহাজ্জুদ পড়ে আমি নিজের পড়াশোনা শুরু করেছি, ফজর পড়ে নিয়ম করে তিন ঘণ্টা পড়াশোনার জন্য ব্যয় করেছি। নারী হয়েও ঘুমকে প্রশ্রয় দিইনি। নিজেই নিজেকে বলেছি- ‘ঘুমিয়ে গেলে হেরে যাবি নাজমা’।

বিসিএস নিয়ে কীভাবে স্বপ্ন দেখেছেন?

সত্যি বলতে আমি কক্সবাজার সরকারি কলেজে স্নাতক তৃতীয় বর্ষে পড়াকালীন সময়ে বিসিএস দেওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করি। স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমি বিসিএস প্রস্তুতি সংশ্লিষ্ট বই পড়া শুরু করি। মাঝের সময়াটায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিও করেছি। আমার শিক্ষকদের উৎসাহ আমাকে স্বপ্ন দেখতে অনুপ্রাণিত করেছিল।

চাকরি জীবনের শুরুটা কীভাবে?

চাকরির শুরুটা মূলত বেসরকারি অঙ্গন থেকে। একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরির পাশাপাশি আমি টিউশনিও করতাম। অবশ্য টিউশন পড়ানোটা আমি আরো আগেই শুরু করেছিলাম। বিসিএস দেওয়ার ক্ষেত্রে এটি আমার জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। জীবনের কোনো চাকরি পরীক্ষায় আমি নিরাশ হয়নি। যতটুকু স্মরণ হয়- কোনো চাকরি পরীক্ষায় আমি অকৃতকার্য তালিকায় পড়িনি। সম্প্রতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছি। এটি আসলে আমাদের রুটিন পদোন্নতির অংশ।

আগের কর্মস্থল নিয়ে আপনার অনুভূতি কেমন?

পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, নোয়াখালী হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার আগে আমি সয়াল্যান্ড নামে পরিচিত মেঘনা তীরের জনপদ লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত ছিলাম। অনুভূতি বলতে, আমি একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে সমাজের সব শ্রেণিপেশার মানুষের স্বার্থে অর্পিত দায়িত্ব পালনে কাজ করেছি। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন স্যার, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মামুনুর রশিদ, জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুরাইয়া জাহান স্যারসহ সবার সহযোগিতা পেয়েছি। আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞ।

প্রশাসনের পাশাপাশি সংসার কীভাবে সামাল দিচ্ছেন?

সংসার পরিচালনা নারীর নারীত্বের অংশ। সংসার জীবনে আমি এক মেয়ে ও দুই ছেলের জননী। আমার বড় মেয়ে ফারিহা তাসনীম রুহি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম বর্ষ আইন বিভাগের শিক্ষার্থী। ছেলেদের একজন এসএসসি, আরেকজন তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। আমার নিজের পরিবারের মতো প্রশাসনিক কাজকেও আমি পরিবারের অংশ মনে করি। বৃহত্তর প্রশাসনিক পরিবার পরিচালনা করতে গিয়ে নিজের পরিবার পরিচালনায় কিছুটা বেগ পেতে হলেও আমি দমে যাইনি। দুটো পরিবারের প্রথমটি আমার শেকড় এবং অন্যটি অস্তিত্বের অংশ।

পেশাগত জীবন নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী ও কেমন?

আমি প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী। দেশের মানুষের কল্যাণ কামনা করা ও দেশের সার্বিক মঙ্গলে কাজ করাই আমার ভবিষ্যৎ লক্ষ্য।

পাঠকদের জন্য কোনো পরামর্শ আছে কি?

জি অবশ্যই, জীবনের মোক্ষম সময় শিক্ষা জীবন। শিশু, কিশোর, তরুণ ও যুবক বয়সে অর্জিত শিক্ষা গড়ে তোলে সুন্দর ভবিষ্যৎ। বিসিএস হোক বা অন্যকিছু, যে সেক্টরই বলুন না কেন- এগিয়ে যাওয়ার জন্য পড়া, শেখা ও জ্ঞান অর্জনের বিকল্প নেই। সেটা হোক ধর্মীয়, রাষ্ট্রীয়, সামাজিক কিংবা অন্য কোনো দৃষ্টিকোণ থেকে। শিক্ষার্থীদের উচিত নিজের পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়া। অভিভাবকদের উচিত সন্তানের পড়াশোনার জন্য সর্বোচ্চ সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব পোষণ করা।

সরকারি সেবা প্রদানে শুদ্ধাচার চর্চা ও কর্মদক্ষতার ওপর ভিত্তি করে ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাঙ্গামাটিতে শুদ্ধাচার পুরস্কার পান তিনি। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি ছোট-বড় পুরস্কার পেয়েছেন এই নারী কর্মকর্তা।

গল্পে গল্পে পেরিয়ে যায় দীর্ঘ সময়। নাজমা বিনতে আমিনের সঙ্গে শেষ স্মৃতির ইতি টেনে সমাপ্ত হয় বাস্তব জীবনের সুন্দর কথা বিস্তৃত সাক্ষাৎকার-পর্ব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close