ক্যানভাসকন্যা আরিফা
নিজ এলাকায় মোটামুটি অঘোষিতভাবে তিনি পরিচিত ক্যানভাসকন্যা হিসেবে। লাল-নীলের মিশ্রণে আঁকা দিগন্ত, রংতুলির জাদুতে লাল-সবুজের পতাকা কিংবা নদীতে নব্য নির্মিত বাঁশের সাঁকো। কোনো কিছুই বাদ যায় না ক্যানভাসকন্যা আরিফার রংতুলির আঁচর থেকে। ছোটবেলা থেকে আরিফা প্রকৃতিপ্রিয়। বিলে জন্মানো শাপলা, পদ্ম কিংবা গাছের লাল টুকটুকে গোলাপ- সবার সঙ্গেই সমান সখ্য তার। আঁকেন সবার ছবি। রীতিমতো ক্যানভাসকন্যা হিসেবে পরিচিতি পাওয়া আরিফার জন্ম দেশের দক্ষিণের জেলা লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায়। সবে মাত্র এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়া আরিফার বয়স প্রায় বিশ। বছর কুড়িতে বহু অর্জন এই ক্যানভাসকন্যার ঝুড়িতে।
ছবি আঁকার পাশাপাশি সুন্দর গলায় গান গাইতে পারেন তিনি। ক্যানভাসে ছবি আঁকা ছাড়াও করতে পারেন সুন্দর ক্যালিওগ্রাফি। আল-কোরআনের আয়াত কিংবা আল-হাদিসের উদ্ধৃতি স্থান পায় তার ক্যালিওগ্রাফিতে। হঠাৎই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এই ক্যানভাসকন্যা এঁকেছেন অন্তত অর্ধশতাধিক ক্যানভাস। তার ক্যানভাসে স্থান পাওয়া জিনিসগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো- প্রকৃতি, স্বদেশ, গ্রামবাংলার স্বরূপ, যান্ত্রিক কাঠামো, পাহাড়ি পরিবেশ, পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে চন্দ্র-নক্ষত্র ইত্যাদি।
তা ছাড়া মহান স্বাধীনতা দিবস, মহান বিজয় দিবসে আয়োজিত স্থানীয় কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে মানব শরীরে পতাকা ও লাল-সবুজের আঁচর দিতে ব্যস্ত থাকে তার তুলি। অল্প সময়ের ব্যবধানে জনপ্রিয়তা অর্জন করা আরিফা বেশ কয়েকবার এঁকেছেন মহান মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি। আর্ট উইথ আরিফা নামে খোলা একটি পেজে তার রয়েছে অসংখ্য ফলোয়ার। তবে অনলাইনের চেয়ে অফলাইনেই তিনি বেশ জনপ্রিয়। এত দিন ক্যানভাস, ক্যালিওগ্রাফি করলেও সম্প্রতি শুরু করেছেন লোগো ডিজাইন। পাচ্ছেন দেশি-বিদেশি ফরমায়েশ। স্বল্প পরিসরে ছবি আঁকার হাতেখড়ি অর্জন করা আরিফা স্বপ্ন দেখেন বিশ্ব জয়ের।
কথা হয় এই উদ্যোক্তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জিহাদ হোসেন রাহাত
আপনি কীভাবে আঁকাআঁকি শুরু করেছেন?
আমি আসলে ছোটবেলা থেকেই আঁকতে পছন্দ করি। ছবি আঁকার বিষয়টি আমার ভীষণ পছন্দের। আমার আঁকার হাত ছোটবেলায় এবড়োথেবড়ো হলেও এখন অনেকটা সুন্দর। তবে আমি এখনো শিখছি। শেখার কোনো শেষ নেই।
ছবি আঁকার অনুভূতি কেমন?
আসলে অনূভুতি বললে ভুল হবে। এটা আমার স্বপ্নের অংশ। আমি স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি। স্বপ্নপূরণের জন্য কাজে নেমে পড়ার বিষয়টি আমার রক্তের সঙ্গে মিশে আছে।
কতটুকু সফলতা এসেছে?
অনেকাংশেই আমি সফল। কারণ আমি চেষ্টা করি। চেষ্টা করাকেই আমি সফলতা মনে করি। সফলতা আমার চেষ্টার অংশ।
ছবি এঁকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
আলহামদুলিল্লাহ, অনেক ভালো সাড়া পেয়েছি। আমি বর্তমানে স্নাতক প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত আছি। পাশাপাশি স্থানীয় রায়পুর উপজেলা প্রশাসন আর্ট স্কুলে শিক্ষিকা পদে কর্মরত আছি।
ছবি আঁকা নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানাবেন কী?
বর্তমানে আমি বিবাহিত। আমার হাসবেন্ড আমাকে এসব বিষয়ে অনেক সাপোর্ট দিচ্ছে। আমি তার হাত ধরে এগিয়ে যেতে চাই। আমার স্বামী হবে- আমার সফলতার অংশ। তাকে সঙ্গে নিয়েই হবে আমার পথচলা। আপাতত এটুকুই আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।
"