নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৮ এপ্রিল, ২০২৪

সাত বছরে ঢাকার তাপমাত্রা বেড়েছে ৩ ডিগ্রি

ফের ৩ দিনের হিট অ্যালার্ট

গত ৭ বছরে রাজধানীর গড় তাপমাত্রা প্রায় ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। কারণ হিসেবে একদিকে যেমন সবুজ কমে যাওয়াকে দুষছেন গবেষকরা; অন্যদিকে বলছেন অপরিকল্পিত কংক্রিটের

অবকাঠামো, বিভিন্ন ধরনের গ্যাস ও শীততাপ যন্ত্রের আধিক্যে প্রতিনিয়ত ঢাকার তাপমাত্রা বাড়ছে। মধ্য বৈশাখের তীব্র খরতাপ। পুড়ছে মানুষ, প্রাণ-প্রকৃতি। ওষ্ঠাগত হাঁপিয়ে ওঠা প্রাণ, খুঁজে ফিরছে একটু স্বস্তি। এমন কাঠফাটা তপ্ত রোদের দিনেও শ্রমজীবী মানুষের থেমে থাকার জো নেই। গরমে কাহিল হলেও ছুটতে হয় পথে পথে। নগরবাসী বলছেন, যানবাহনের আধিক্য, সবুজপ্রাণ কমে যাওয়ায় আবহাওয়া এখন অসহনীয়। এ অবস্থায় সিলেট অঞ্চল ছাড়া সারা দেশে আবারও ৩ দিনের তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা বা হিট অ্যালার্ট জারি করা হবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, আজ রবিবার থেকে শুরু হয়ে টানা ৩ দিন সারা দেশে হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়। তবে হিট অ্যালার্ট শেষ হওয়ার পর একটু একটু করে বৃষ্টি শুরু হতে পারে। গতকাল শনিবার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে এবং সেইসঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

তবে আশার কথা জানিয়ে আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ জানান, মে মাসের ১ থেকে ২ তারিখের মধ্যে সারা দেশে বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টি শুরুর আগে ঝড়ো হাওয়া বইতে পারে। এছাড়া হতে পারে কালবৈশাখী ঝড়। গবেষকরা বলছেন, মানবসৃষ্ট কারণে ভারসাম্য হারাচ্ছে ঢাকার প্রকৃতি। ফিটনেসবিহীন যানবাহনের নির্গত ধোঁয়া থেকে ব্ল্যাক কার্বন তাপমাত্রা বাড়াচ্ছে। শহরজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ময়লা-আবর্জনা থেকে উৎপন্ন হচ্ছে ক্ষতিকর নানা ধরনের গ্যাস। দূষণ বাড়াচ্ছে ইটভাটাসহ শিল্পকারখানা থেকে নির্গত গ্যাস ও তরল রাসায়নিক। এতে প্রাকৃতিক কারণ ছাড়াও শিল্পসৃষ্ট কর্মকাণ্ডে তাপমাত্রা অনুভূত হচ্ছে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সালাম বলেন, ‘ফিটনেসবিহীন গাড়ি ধোঁয়ায় দূষণের মাত্রা বেড়ে যায়। আবার কিছু দূষণ সরাসরি তাপমাত্রা বৃদ্ধি করছে। এছাড়া অপরিকল্পিত নগর উন্নয়নও এ তাপমাত্রা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।’

নগরের উন্নয়ন মনস্তত্ত্বে যেন শুধুই কংক্রিট। কাটা পড়ছে গাছ, তৈরি হচ্ছে প্রাকৃতিক আলো-বাতাসহীন কাঁচঘেরা ভৌত অবকাঠামো। বাড়ছে হিমাগার ও শীততাপ যন্ত্রের আধিক্য, যা থেকে নির্গত গ্যাসও উত্তপ্ত করে তুলছে নগরের পরিবেশ। নগরবিদদের মতে, রাজধানী ঢাকায় সবুজ আচ্ছাদন প্রয়োজন কমপক্ষে ১৫ শতাংশ, কিন্তু আছে ৮ শতাংশের কম। অন্যদিকে ১০ থেকে ১২ শতাংশ জলাশয়ের বিপরীতে নগরীতে আছে ৫ শতাংশের কম। পর্যাপ্ত গাছপালা ও জলাশয়ের অভাব শহরের বাতাস ও মাটিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলছে। নগরবিদ আদেল মোহাম্মদ খান বলেন, ‘মানুষ বাঁচাতে হলে প্রকৃতিকে বাঁচাতে হবে। প্রাকৃতিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে নগর চলতে পারে না।’

গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচের এক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, পুরো বিশ্বের বনায়ন কমে যাওয়ার হার যেখানে ৭.৪ শতাংশ, সেখানে গত দুই দশকে বাংলাদেশ হারিয়েছে ৮.৭ শতাংশ বনায়ন। অন্যদিকে ২০০১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ঢাকা হারিয়েছে ১০৮ হেক্টর সবুজ আচ্ছাদন। শান্ত, ছায়া সুনিবিড় এ এলাকায় অনেকেই দেখা যায় একটুখানি স্বস্তির জন্য বসে থাকতে। তাদের মতে, নগরে পর্যাপ্ত গাছপালা থাকলে তাপমাত্রা সহনীয় থাকে। জলবায়ু বিশেষজ্ঞ জাকির হোসাইন খান বলেন, ‘বর্তমানে যে তাপপ্রবাহ বইছে তা অনেকটা নিউ নরমাল। পরিস্থিতি মোকাবিলায় নগরকে বাসযোগ্য করতে সবুজায়ন বাড়ানোসহ প্রাকৃতিকভাবে কম উত্তাপ ধারণ করে এমন নকশায় ভবন নির্মাণ করতে হবে।’ তাপপ্রবাহকে হেলাফেলা নয়, বরং নিয়ন্ত্রণে যথাযথ প্রকল্প ও সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড হাতে নিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে তৎপর হওয়ার আহ্বান বিশেষজ্ঞদের।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close