চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে ঠিকাদারী কাজে প্রতারণাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। হলফনামায় মামলার তথ্য গোপন রেখে তিনি বর্তমানে নির্বাচনী গণসংযোগ করছেন।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে এসব মামলার সত্যতা পাওয়া গেছে। আদালত সমন জারির করার পরও হাজির হননি বলে অভিযোগ রয়েছে ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে। তবে তথ্য গোপনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি।

উপজেলার পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে ২১ মে শাহরাস্তিতে ভোট হবে। এতে আনারস প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মো. ওমর ফারুক। তার ডাক নাম রুমি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে ঠিকাদারী কাজে অংশীদারীর নামে অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার অভিযোগ দুটি মামলা রয়েছে। এই দুটি মামলার বাদী বিয়ন্ত মিডিয়া লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইবনে হাসান খান। তিনি ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে ঢাকা চিফ মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সিআর ৭৮৯/২০২২ এবং সিআর ২৪২১/২০২২ নম্বরে দুটি মামলা করেন।

মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার গাজীখালি নদীর ১৫ কিলোমিটার খাল খননের কাজে অংশীদারীর নামে ওমর ফারুক ২০২০ সালে বিয়ন্ত মিডিয়া লিমিটেডের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে মোট সাড়ে ৩ কোটি টাকা নেন। পরে কাজটি শেষ না হলেও সেই টাকা ফেরৎ দেননি ফারুক। টাকা পরিশোধের এক পর্যায়ে বিয়ন্ত মিডিয়াকে ২৫ লাখ টাকার দুটি চেক দেন তিনি। কিন্তু ব্যাংকে তার তহবিল অপ্রতুল দেখিয়ে চেক ফেরতদেন আইএফআইসি ব্যাংকের বনানী শাখা।

বাদী পক্ষের আইনজীবী তুহিন হাওলাদার বলেন, ‘ওমর ফরুকের বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তিনি অগ্রিম টাকা নিয়েছিলেন। টাকা নিয়ে কিছু কাজও করেছেন। পরে বাকি কাজ আর করেননি। পিবিআই তদন্তে বলা আছে, আসামি ওমর ফারুক ওই টাকা আত্মসাৎ করেছেন।’

• পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে মিলেছে মামলার সত্যতা
• দুটি মামলার বাদী বিয়ন্ত মিডিয়া লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইবনে হাসান খান
• মামলাকে ‘ছোট বিষয়’ বলে ফোনে বিরক্তি প্রকাশ ওমর ফারুকের

আইনজীবী তুহিন হাওলাদার জানান, আদালত পিবিআই তদন্ত গ্রহণ করে আসামি ওমর ফারুককে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে প্রতারণাসহ ঢাকার আদালতে একাধিক মামলার প্রমাণ রয়েছে। আগামি ধার্য তারিখে ওমর ফারুকের বিরুদ্ধ গ্রেপ্তারি পরোয়ান জারি করার জন্য আবদেন করা হবে। কারণ তিনি সমন এড়ানোর চেষ্টা করছেন।

অভিযোগ বিষয়ে জানতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে ওমর ফারুক মামলার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে বিয়ন্ত মিডিয়ার সঙ্গে কোনো লেনদেন নেই। আমি ব্যবসার করতে গিয়ে কতজন থেকেই টাকা নিই। ওই ব্যক্তি কীভাবে কী করলেন, সেটাতো আমি জানি না। আমাকে মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করার সুযোগ দিয়েছে কি না, সেটাও আমি জানি না। আপনি যদি মনে করেন কোর্টে মামলা আছে, তাহলে কোট দেখবে। ছোট বিষয় নিয়ে আমাকে কেন বার বার বলা হচ্ছে। অবশ্যই তথ্যবহুল বিষয় নিয়ে আমাকে প্রশ্ন করতে পারেন।’

এদিকে ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে দুটি মামলা ঢাকা চিফ মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারধীন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে বিয়ন্ত মিডিয়া লিমিটেডের একটি মামলা তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পিবিআই। তবে তিনি তার নির্বাচনী হলফনামায় তার বিরুদ্ধে প্রতারণাসহ দুটি মামলা আছে বলে এমন তথ্য উল্লেখ করেননি।

চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা বশির আহমেদ প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘বিভিন্ন মাধ্যমে প্রার্থী ওমর ফারুকের মামলার বিষয়টি আমরা কাছে আসছে। যাচাই-বাছাই সময়ে তার হলফনামায় মামলার কোনো তথ্য ছিল না, থানা থেকেও আসেনি। সরকারি কোনো নির্ভরযোগ্য সংস্থা অভিযোগ দেয়নি। এখন কেউ যদি তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দেয়, তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া হবে।’

পিডিএস/আরডি