মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি

  ১০ মে, ২০২৪

‘ছেলে তো আমাকে খেতে বলে নাই’

আমার একটাই সন্তান। ও আমাকে ভীষণ ভালোবাসতো। সবসময় আমার খোঁজ-খবর নিতো। আমি খেয়েছি কি না কী করছি- সবকিছু ফোন করতে জানতে চাইতো। বুধবার আমার ছেলে (আসিম জাওয়াদ) খুব টেনশনে ছিল। ফোন করে ছেলে আমাকে বলেছে, মা তুমি ছাদে যেতে পারবে না। আমাকে নিয়ে ছেলে সবসময় চিন্তা করত। সেই নাড়ি ছেঁড়া ধনকে হারিয়ে আমি কীভাবে বাঁচব। প্রতিদিন ছেলে ফোন দিয়ে বললে আমি ভাত খেতাম। এখন আমি খাব না, ছেলে তো আজ (গতকাল) আমকে খেতে বলে নাই।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মানিকগঞ্জ শহরের পৌর ভূমি অফিসের পাশের লেনের গোল্ডেন ভিলার নিজ বাসভবনে একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে বিলাপ করছিলেন মা নিলুফার খানম। মাঝে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন সন্তানহারা এ মা।

ছেলে আসিম জাওয়াদের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে তিনি পাগলপ্রায়। ছেলের শোকে কাতর নিলুফার খানমের অবস্থাও সংকটাপন্ন। পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনরা তাকে সান্ত¦না দেওয়ার ভাষা পাচ্ছেন না।

নিহতের খালাতো ভাই মশিউর রহমান শিমুল জানান, বিমান দুর্ঘটনায় পাইলট আসিম জাওয়াদের ব্যাচমেট ফোন করে খালাকে (নিলুফার খানম) যেতে বলেছিলেন। খবর পেয়ে আমরা যাওয়ার জন্য বিমানের টিকিটও কেটে ছিলাম। যখন আমাদের খবর দেওয়া হয়েছিল তখনও আসিম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। কিন্তু মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর খালা সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন।

সর্বশেষ রোজার ঈদের মধ্যে চার দিনের ছুটিতে বাড়িতে এসেছিলেন এবং ছুটি পেলেই তিনি মায়ের কাছে ছুটে আসতেন। এছাড়া প্রতিদিন বেশ কয়েকবার ফোন করে মায়ের খোঁজ নিতেন আসিম। খালা কী করে, ঠিকমতো খেয়েছে কি না, হাঁটছে কি না, ছাদে গেছে কি না এসব। ফোন করে এসব বিষয়ে সব সময় খোঁজ রাখতেন।

তিনি আরো জানান, স্কুল জীবন থেকেই আসিম জাওয়াদ খুব মেধাবী ছিলেন। চাকরি জীবনের প্রত্যেক ট্রেনিংয়ে তিনি ফার্স্ট হতেন এবং তার ব্যাচের মধ্যেও তিনি ফার্স্ট ছিলেন। তিনি রাশিয়া, চায়না ও ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণেও ফার্স্ট হন।

নিহতের মামা সুরুজ খান জানান, বিমান বাহিনীর চাকরির সুবাদে স্ত্রী অন্তরা আক্তার, ৬ বছরের মেয়ে ও ১ বছরের ছেলেকে নিয়ে চট্টগ্রামে থাকতেন। আর ওর বাবা ডা. আমানউল্লাহ (বোন জামাতা) ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত থাকায় ঢাকা থাকতেন। মানিকগঞ্জ শহরের পৌর ভূমি অফিস লেনের বাসায় শুধু বাসায় ওর মা একাই থাকতেন। আসিম জাওয়াদ মানিকগঞ্জে তেমন আসতেন না। তবে প্রতিদিনই ওর মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। বুধবার বিকেলও ফোন করে ওর মায়ের খোঁজ-খবর নেন।

তিনি আরো জানান, বিমান বাহিনীর অফিশিয়াল কাজ শেষে আগামীকাল (শুক্রবার) ওর মরদেহ হেলিকপ্টারে মানিকগঞ্জ আসবে। পরে মানিকগঞ্জ শহরের সেওতা কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।

চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীতে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিএনএস পতেঙ্গা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পাইলট স্কোয়াড্রন লিডার আসিম জাওয়াদ রিফাত মারা যান।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close