নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২০ মে, ২০২৪

এসএমই মেলা উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী

বর্জ্য শোধনের পয়সা বাঁচাতে গিয়ে দেশের সর্বনাশ করবেন না

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে দেশ ও জনগণকে বাঁচাতে এবং শিল্পায়নকে পরিবেশবান্ধব করতে শিল্প-কারখানা নির্মাণে সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘শিল্প আমাদের গড়ে তুলতে হবে। কিন্তু শিল্প বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অবশ্যই সবাইকে করতে হবে। বর্জ্য পরিশোধনের ক্ষেত্রে কেমিক্যাল ক্রয়ের পয়সা বাঁচাতে গিয়ে দেশের সর্বনাশ, পাশাপাশি নিজের সর্বনাশ কেউ করবেন না।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রবিবার সকালে রাজধানীতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ১১তম জাতীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প পণ্য (এসএমই) মেলা উদ্বোধনকালে দেওয়া প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন।

আমাদের দেশ ভৌগোলিক সীমারেখায় ছোট এবং জনসংখ্যার দিক দিয়ে বড় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সেক্ষেত্রে আমাদের নিজেদের দেশের পরিবেশ ও সবকিছু অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে হওয়া উচিত। স্বাস্থ্যসম্মত হওয়া উচিত। সঙ্গে সঙ্গে জলবায়ুর অভিঘাতে যেন আমরা ক্ষতিগ্রস্ত না হই সেদিকে সবাইকে দৃষ্টি দিতে হবে। শিল্প খাতকে আমরা আরো পরিবেশবান্ধব করতে চাই।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এসএমই পণ্য মেলায় দেখা যাচ্ছে উদ্যোক্তা ৬০ শতাংশই নারী। এই নারীদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের নারী-পুরুষ সবাইকে যদি আমরা উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করতে পারি তাহলে সমানভাবে দেশটা দ্রুত উন্নত হবে।

এজন্য নারী উদ্যোক্তা আমাদের দরকার। শিল্প মন্ত্রণালয় এবং এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে নারী উদ্যোক্তাদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে সেক্ষেত্রে পুরুষরা ঘরের নারীদের (স্ত্রী-কন্যা-বোন) নামে, তাদের সঙ্গে নিয়ে এখানে যুক্ত হতে পারেন বলেও তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। কেননা অন্যত্র কিন্তু ৪ শতাংশ সুদে ঋণ পাওয়া যাবে না।

শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা ও এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন। স্বাগত বক্তব্য দেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ড. মো. মাসুদুর রহমান। ২০২৩ সালের জাতীয় পুরস্কার বিজয়ী এসএমই উদ্যোক্তাদের পক্ষে ‘রংপুর ক্রাফটস’-এর স্বত্বাধিকারী স্বপ্না রানী সেন অনুষ্ঠানে নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করেন।

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী শিল্প মন্ত্রণালয় প্রণীত ২০২৪ থেকে ২০২৮ কর্মপরিকল্পনার ওপর রচিত একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।

শ্রমবান্ধব কর্মপরিবেশ সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করে সরকারপ্রধান বলেন, শ্রমিকদের বিষয়ে সবাইকে আন্তরিক হতে হবে। আপনি যদি বেশি কাজ চান তাহলে তাদের সেই কর্মপরিবেশ দিতে হবে। শুধু হুকুম দিলে হয় না। হুকুম দিয়ে যা অর্জন করতে পারবেন, ভালোবাসা দিয়ে পারবেন তার চেয়ে অনেক বেশি। আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করে আরো বেশি আপনি কাজ করিয়ে নিতে পারবেন। সেদিকে অবশ্যই সবাইকে দৃষ্টি দিতে হবে।

নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আরো সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা যে সুবিধাগুলো দিচ্ছি সেটা তাদের (নারী) গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে আমাদের নারীদের আরো বেশি উদ্যোক্তা হতে হবে। বিশেষ করে যাতে সবাই (নারী-পুরুষ) যৌথভাবে কাজ করতে পারে সে ব্যবস্থাটা আমাদের করতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, এসএমই খাতের উন্নয়নে আমাদের ঐতিহ্যবাহী পণ্যের পাশাপাশি উন্নত বিশ্বে ভোক্তাদের চাহিদানুযায়ী শতভাগ রপ্তানিমুখী পণ্য উৎপাদনে আরো মনোযোগ দিতে হবে। বুঝতে হবে এখন অর্থনৈতিক কূটনীতির যুগ।

আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আশবাদ ব্যক্ত করেন, এই এসএমই পণ্য মেলার মাধ্যমে দেশের মানুষ আরো জানতে পারবে এবং উৎসাহিত হবে। আরো উদ্যোক্তা তৈরি হবে এবং এই মেলার মাধ্যমেই আমাদের এসএমই ফাউন্ডেশন আরো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে। ফলে বিদেশে পণ্য রপ্তানি আরো বাড়ানো সম্ভব হবে এবং দেশেও বাড়তি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস দেশীয় এসএমই শিল্পের উন্নয়নে এই মেলা ক্রমান্বয়ে আন্তর্জাতিক মাত্রা ও মর্যাদা পাবে এবং এর ফলে দেশীয় পণ্যের বাজার দেশ-বিদেশে বৃদ্ধি পাবে। তিনি বলেন, আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা যারা তাদের প্রতি আমি মনে করি বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কারণ তাদের ছোট উদ্যোগগুলো সময়ের ব্যবধানে বড় শিল্পে পরিণত হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close