গাজী শাহনেওয়াজ

  ২২ মার্চ, ২০২৪

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে গম কেনায় জোর

খাদ্য নিরাপত্তার ভবিষ্যৎ বিকল্প চিন্তা থেকে গম কেনার দিকে ঝুঁকেছে সরকার। আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম বেশি থাকা এবং দেশে খাদ্যসংকট দেখা দিলে বিকল্প হিসেবে এ চিন্তা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে সার্বিকভাবে সক্রিয় রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা মজবুত করার জন্য এর মধ্যেই সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন। এ খবর জানা গেছে সরকারি সূত্রে।

খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে টনপ্রতি চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৮০ ডলারে। বিপরীতে গম ৩০০ ডলারের নিচে। দুটিই খাদ্য পণ্য। বাজারে বর্তমানে চালের সরবরাহের ঘাটতি নেই। কিন্তু মাঝে মধ্যেই অসাধু চক্র বাজার অস্থিতিশীল করতে চালের দাম বাড়িয়ে দেয়। চালের বিকল্প গম। যেহেতু অর্ধেক দামে পাওয়া যাচ্ছে তাই বেশি করে কিনে রাখা হচ্ছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর আদেশে রয়েছে এ ব্যাপারে। তবে গমের মান যাচাই করে এটি গুদামজাত করা হবে; সেভাবেই চুক্তি সম্পন্ন করা হয়েছে। সরকারের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা শক্তিশালী করা। খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার কমিটি বেশকিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির অনুমোদনে সম্মতি দিয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ৩ লাখ টন গম রয়েছে। সরকার থেকে সরকার (জিটুজি) পদ্ধতিতে রাশিয়া থেকে ৩ লাখ টন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই থেকে আরো ৫০ হাজার টন গম আমদানি করা হবে। এর আগে রাশিয়ার সরকারিভাবে অনুমোদিত সংস্থা পোডিংটনের সঙ্গে সরকারের খাদ্য অধিদপ্তর এগ্রিমেন্ট চুক্তিতে সমঝোতায় পৌঁছে। ক্রয়সংক্রান্ত কমিটির অনুমোদনসাপেক্ষে আগামী এপ্রিল থেকে পরবর্তী দুই মাস অর্থাৎ জুনের মধ্যে গম দেশে পৌঁছাবে। ১ লাখ টন গম প্রতি মাসে আসবে।

বিপুল পরিমাণ গম কেনার পেছনে সরকারের বিকল্প দুটি চিন্তা মাথায় রেখেছে। একটি আন্তজার্তিক বাজারে গমের দাম কম এবং কোনো রকমে চালের সংকট দেখা দিলে বিকল্প খাদ্য হিসেবে গম বাজারে ছেড়ে সাময়িক খাদ্য ঘাটতি মোকাবিলা করা। কারণ ভাতের পাশাপাশি আটার রুটিতে জনসংখ্যার বড় একটি অংশ অভ্যস্ত। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজার নিয়ন্ত্রণ হয় ডলারের ওঠাণ্ডপড়ার ওপরে। বর্তমানে সরকার থেকে ডলারের মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে ১১৫ টাকা। বিপরীতে ডলারের মূল্য এর চেয়ে বেশি।

ধারণা পাওয়া গেছে, বর্তমান বিশ্বে ১ টন মোটা চাল কিনতে খরচ হয় ৬৮০ ডলার। সেখানে সমপরিমাণ গম কিনতে সরকারের ব্যয় হচ্ছে ২৮৮ ডলার। অর্থাৎ অর্ধেক দামেরও কম। এ কারণে প্রধানমন্ত্রী নিজেই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বেশি করে গম কিনে রাখার জন্য উৎসাহিত করেছেন মন্ত্রণালয়কে। মন্ত্রণালয় বলছে, প্রধানমন্ত্রীর উৎসাহমূলক এ নিদের্শনা আমাদের কাছে অনুশাসন বলে মনে হয়েছে। তার নির্দেশ মত গম সংগ্রহের কাজ চলছে।

শুধু রাশিয়া থেকে ৩ লাখ টন গম কিনতে সরকারের ব্যয় হচ্ছে ৯৫০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে প্রতি টনের দাম পড়ছে ২৮৮ ডলার। আগে এ দাম ছিল ৩০৩ ডলার ১৯ সেন্ট। এছাড়া খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আরেক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে দুবাইয়ের গ্রেইন ফ্লাওয়ারের কাছ থেকে ৫০ হাজার টন গম কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। প্রতি টনের দাম পড়েছে ২৭৯ ডলার ৯৫ সেন্ট। আগে দাম ছিল ৩০৩ ডলার। দাম অনেক কমেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় খরচ হচ্ছে ১৫৩ কোটি ৯৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা। প্রতি কেজি গমের দাম পড়ছে ৩২-৩৩ টাকা।

মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা জানান, গম থেকে উৎপাদিত আটা-ময়দা শুধু সাধারণ মানুষ খায় তা নয়। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), সেনাসদস্য এবং পুলিশের রেশিং হিসেবেও বণ্টন হয়। ওই সময় নিম্নমানের গম পেয়ে আপত্তি তুলেছি রেশন প্রাপ্তরা। পরে সংসদে বিষয়টি উত্থাপন হলে হইচই পড়ে যায়। তৎকালীন ২০১৫ সালে ব্রাজিল থেকে নিম্নমানের প্রোটিনসমৃদ্ধ পচা গম এনে সরকারকে বিপাকে ফেলা হয়। নথির তথ্যমতে, বাংলাদেশের গম আমদানির বর্তমান যে বিনির্দেশ বা নীতি তাতে নিম্নমানের গম আসার সুযোগ নেই। সাড়ে ১২ মাত্রার প্রোটিনযুক্ত ভালো মানের গম আনতে গেলে টেন্ডারকারীদের কম লাভ হয়।

সাড়ে ১২ প্রোটিনের গম উৎপাদন হয় কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে। ওইসব দেশ থেকে গম আনতে গেলে লাভের পরিমাণ কম হয়। এ মানের গম ভারতের পাঞ্জাবেও কিছুটা উৎপাদন হয়। কিন্তু অতিরিক্ত চাহিদার কারণে তা অনেক সময় পাওয়া যায় না। আর সাড়ে ১০ থেকে ১১ প্রোটিনের গম সহজেই ভারত থেকে আনা যায়। মূলত সরবরাহকারীদের সুবিধার জন্য গমের বিনির্দেশ বদলের চেষ্টা করা হচ্ছে। এমনকি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমান সরকারের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন থাকায় রাশিয়া থেকে এবার গম কেনায় ঝুঁকেছে সরকার।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিট রয়েছে। তাদের কাজ হচ্ছে খাদ্যশস্যের চাহিদা, জোগান, সহজলভ্যতা, বাজার পরিস্থিতি এসব বিষয়ে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া। এই ইউনিটের আওতায় খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটি গঠন করা হয়। দেশে খাদ্য নীতিনির্ধারণী বিষয়ে এটা হচ্ছে সর্বোচ্চ ফোরাম। খাদ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এ কমিটিতে অর্থ, কৃষি, স্থানীয় সরকার, বাণিজ্যসহ আট মন্ত্রী রয়েছেন। তবে এবার গম আমদানিতে সরকার সতর্ক রয়েছে। ভালোমানের গম কিনতে রাশিয়াকে বেছে নেওয়া হয়েছে। নিম্নমানের গম সরবরাহ করা হলে সেটি গ্রহণ না করার চিন্তা রয়েছে মন্ত্রণালয়ের।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close