নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২২ মার্চ, ২০২৪

লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত আন্দোলন চলবে : বঙ্গবন্ধু

২২ মার্চ ১৯৭১। প্রেসিডেন্ট ভবনে ইয়াহিয়া খান ও জুলফিকার আলী ভুট্টোর সঙ্গে বৈঠক করে নিজের বাসভবনে ফিরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন চলছে। লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’ দুপুরে প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে কড়া সামরিক পাহারায় হোটেলে ফিরে ভুট্টো তার উপদেষ্টাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। হোটেলের বাইরে ভুট্টোবিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন বিক্ষুব্ধরা। সন্ধ্যায় ভুট্টোর নেতৃত্বে পিপলস পার্টির নেতারা প্রেসিডেন্ট ভবনে যান। রাতে সেখান থেকে ফিরে হোটেল লাউঞ্জে সংবাদ সম্মেলন করেন ভুট্টো।

তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট এবং আওয়ামী লীগ প্রধান বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে একটি সাধারণ ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। তবে ওই ঐকমত্য অবশ্যই পিপলস পার্টির কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। পিপলস পার্টির অনুমোদন ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত পশ্চিম পাকিস্তানিরা মেনে নিতে পারে না।’

ঢাকার কয়েকটি পত্রিকা ‘বাংলার স্বাধীকার’ শিরোনামে একটি ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। সেখানে বঙ্গবন্ধু স্বাক্ষরিত একটি বাণীও ছিল। ওই ক্রোড়পত্রে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ চৌধুরী, অধ্যাপক রেহমান সোবহান প্রবন্ধ লেখেন। অবজারভার গ্রুপের পত্রিকাগুলো সেদিন ওই ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেনি। তারা পরদিন ছাপে। ওই ক্রোড়পত্রের মূল পরিকল্পনায় ছিলেন নাট্য আন্দোলনের কর্মী রামেন্দু মজুমদার।

এদিন বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক বাঙালি সৈনিকরা সমাবেশ ও কুচকাওয়াজ করেন। তারা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যে অভূতপূর্ব ঐক্য গড়ে উঠেছে, তাতে আমরা আর প্রাক্তন হিসেবে বসে থাকতে পারব না।’

সারাদিন জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে মিছিলের ঢল ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে যায়। এক দিনে এত মিছিল এর আগে কখনো ৩২ নম্বরে যায়নি।

বাসভবনে জনতার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেশ কয়েকবার বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘সাত কোটি বাঙালি যখন ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, তখন আমি অবশ্যই দাবি আদায় করে ছাড়ব। ২৩ বছর মার খেয়েছি, আর মার খেতে রাজি নই। শহিদদের রক্ত বৃথা যেতে দেওয়া হবে না। প্রয়োজন হলে আরো রক্ত দেব। কিন্তু এবার সুদে-আসলে বাংলার দাবি আদায় করে আনব।’

স্বাধীনতার মাস অগ্নিঝরা মার্চে দৈনিক ইত্তেফাক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। ২২ মার্চ প্রকাশিত দৈনিক ইত্তেফাকের প্রথম পাতায় প্রধান খবরের শিরোনাম করা হয়, ‘ইয়াহিয়া-মুজিব অনির্ধারিত বৈঠক’। এতে জানানো হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রেসিডেন্ট জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান ২১ মার্চ সকালে ঢাকায় প্রেসিডেন্ট ভবনে এক অনির্ধারিত বৈঠকে মিলিত হন। প্রায় ৭০ মিনিট স্থায়ী এই বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন তাজুদ্দিন আহমদ। প্রথম কলামে ছাপা হয়, জনগণের প্রতি বঙ্গবন্ধুর আহ্বান, ‘আন্দোলন অব্যাহত থাকিবে’।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close