বদরুল আলম মজুমদার

  ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

ব্যর্থ বিএনপিতে নেতৃত্ব বদলের চাপ বাড়ছে

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিগত কয়েক বছরের আন্দোলনের পরও সরকারকে গদি থেকে এক চুল পরিমাণও নড়াতে পারেনি বিএনপি। উল্টো দলটিতে বেড়েছে নেতৃত্বের টানাপড়েন। এই অবস্থায় স্থায়ী কমিটি পুনর্গঠনের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে কাউন্সিল নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না দলটি। জানা গেছে, বিএনপিতে নেতৃত্বের পালাবদলের কাজ শুরু হয়েছে সর্বোচ্চ স্তর থেকে প্রবাসী শাখা পর্যন্ত। সরকারকে নতুন নির্বাচনে বাধ্য করতে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য দল পুনর্গঠনের এসব চিন্তা-ভাবনা চলছে। এরই মধ্যে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ ধারায় যুক্ত দলগুলোর সর্বোচ্চ নেতারাও বিএনপির পুনর্গঠন-চিন্তার বিষয়টি আঁচ করতে পেরেছেন। ২০১৮ ও ২০২৪ সালে পর পর দুটি নির্বাচনকালে দায়িত্বে থাকা একই নেতৃত্বকে কেন ব্যর্থ হতে হলো সে বিষয়টিও বিবেচনায় নিয়েছে বিএনপি।

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র ও স্থায়ী কমিটির কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, বিদায়ি বছরের ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ প- হওয়ার পর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ অনেক নেতাকর্মী কারাবন্দি। ওই অবস্থায় যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত দলগুলোর পরামর্শ ছাড়াই অবরোধ ও হরতাল দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় যারা যুক্ত ছিলেন তাদের নিয়ে দলের সর্বোচ্চ পর্যায়েও অবগত রয়েছে।

বিএনপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যুগপদে যুক্ত একাধিক দলের শীর্ষ নেতারা বলছেন, বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে পুনর্গঠন করা জরুরি। কারণ দল ও দলের রাজনৈতিক কর্মকৌশল নির্ধারণে বহু মত আছে বিএনপিতে। ফলে পুনর্গঠন, পুনর্বিন্যাস প্রয়োজন। গণতন্ত্র মঞ্চের এক নেতা বলেন, ‘আন্দোলনে ব্যর্থতার প্রথম দায় বর্তায় দলটির এক নম্বরের ওপর। তিনি যদি ভারতের রাহুল গান্ধীর মতো দায়িত্ব থেকে সরে যেতেন তাহলে তার সম্মান ও মর্যাদা আরো বেড়ে যেত। যদিও আমাদের দেশে এর কোনো চর্চা নেই।’ সরকারকে নতুন নির্বাচনের দাবি মানাতে আন্দোলনের ধরন, কৌশলে পরিবর্তন আনতে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের ওপর চাপ বাড়ছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য বলছেন, স্থায়ী কমিটিতে দল পুনর্গঠনের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে কাউন্সিল নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না বিএনপি।

দলের প্রভাবশালী একাধিক দায়িত্বশীল জানান, কাউন্সিলের প্রশ্ন এলেই বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিষয়টি সামনে চলে আসে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে। সেক্ষেত্রে কাউন্সিলের বিষয়টি প্রায় অনিশ্চিত। এক্ষেত্রে দলের শূন্য পদগুলোতে নিয়োগ হতে পারে। রদবদল আসতে পারে বিভিন্ন পদেও। এই রদবদল দলের অন্যতম শীর্ষ পদ থেকে শুরু করে প্রবাসে যারা দায়িত্বে ছিলেন তাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে।

২০১৬ সালের ১৯ মার্চ দলের ষষ্ঠ কাউন্সিলের পর দুই দফায় ৬০০ জনের বেশি সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করে বিএনপি। সেই সদস্য সংখ্যা কমে এখন ৫০২ জনে দাঁড়িয়েছে। বাকি ৯৮ জনের মধ্যে বেশিরভাগই মারা গেছেন। আবার কেউ কেউ বহিষ্কৃত হয়েছেন, কেউ দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটির সদস্যের মধ্যে মারা গেছেন তরিকুল ইসলাম, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এম কে আনোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হান্নান শাহ। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় আছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন (বিদেশে চিকিৎসাধীন) ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। দলের সবচেয়ে প্রবীণ নেতা ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার বয়সের ভারে প্রায় অচল।

সক্রিয়দের মধ্যে কেবল মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী (কারাগারে) এবং গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান রয়েছেন। দেশের বাইরে রয়েছেন ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও সালাহউদ্দিন আহমেদ। তবে নেতৃত্বে কোনো সংকট হচ্ছে না জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছি বর্তমান নেতৃত্ব ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অধীনেই। তিনি আমাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেন। মতামত গ্রহণ করেন। যেহেতু বেগম জিয়া অসুস্থ, তাই আমাদের দলে যৌথ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। এছাড়া ড. মোশাররফ হোসেন অসুস্থ, সত্যিই আমরা তাকে অনুভব করি। কিন্তু আমাদের তো সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির দুজন সদস্য বলছেন, এরই মধ্যে স্থায়ী কমিটিতে জায়গা পাওয়ার জন্য বেশ কয়েকজন প্রবীণ ও নবীন নেতার নাম ভেতরে ভেতরে আলোচনায় এসেছে। এদের মধ্যে আবদুল আউয়াল মিন্টু, বরকত উল্লাহ বুলু, মো. শাহজাহান, রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদের নামও উঠে আসছে কারো কারো আলোচনায়।

স্থায়ী কমিটির একজন নেতা বলেন, স্থায়ী কমিটির শূন্যপদে নিযুক্তির ক্ষেত্রে তারেক রহমান চাপে রয়েছেন। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হওয়ার পর তিনি সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে নিয়োগ দেন স্থায়ী কমিটিতে, এরপর আর কাউকে দেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় নতুন সদস্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে শীর্ষ নেতার ওপর প্রবল চাপ, সেটা হচ্ছে সদস্য করার চাপ। ‘অনেকেই মনে মনে স্থায়ী কমিটির সদস্য হয়ে বসে আছেন। কবে নাগাদ শূন্যপদে নিযুক্তি হতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে স্থায়ী কমিটির এক জন নেতা বলেন, ফোরামে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা শুরু হয়নি। বিষয়টি শীর্ষ নেতৃত্বের সরাসরি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়ে আসছে। ফলে কবে নাগাদ তিনি এই সিদ্ধান্ত দেবেন তা এখনো স্পষ্ট নয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close