গাজী শাহনেওয়াজ

  ০৮ মে, ২০২৪

উপজেলা পরিষদে প্রথম ধাপের ভোট আজ

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আজ বুধবার প্রথম ধাপে ১৩৯ উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এসব উপজেলায় চেয়ারম্যান, সাধারণ ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১ হাজার ৮৯১ জন প্রার্থী। নির্বাচনের জন্য ওই সব উপজেলায় ভোটের দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন এরই মধ্যে সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। এ ধাপে ১৩৯ উপজেলার মধ্যে ২২টিতে ইভিএম এবং বাকিগুলোয় ব্যালটে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে এ ধাপে ১ হাজার ৬৩৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৫৭০, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬২৫ এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৪০ জন প্রার্থী রয়েছেন। প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান পদে ৮, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১০ জন করে অর্থাৎ ২৮ জন প্রার্থী এরই মধ্যে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন।

হাতিয়া, মুন্সীগঞ্জ সদর, বাগেরহাট সদর, পরশুরাম ও শিবচর এ পাঁচটি উপজেলার সব পদের প্রার্থীরা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন। অর্থাৎ এ পাঁচ উপজেলায় কোনো পদেই ভোটের প্রয়োজন পড়ছে না। এ ছাড়া পার্বত্য জেলা বান্দরবানে তিনটি উপজেলায় নির্বাচন স্থগিত করেছে ইসি।

শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নেওয়া হয়েছে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মাঠে থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তিন লাখ সদস্য। নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত রাখতে বৈধ অস্ত্র প্রদর্শনেও বিধিনিষেধ জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আগামী ১৪ দিন এ নিদেশনা বলবৎ থাকবে। তবে মন্ত্রী-এমপিদের এবং বেশিরভাগ উপজেলায় ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী থাকায় নানা শঙ্কা রয়েছে এ ভোটে। কারণ সবাই চাইছে দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে বিজয় নিশ্চিত করতে। ফলে ভোটে সহিংসতা ও সংঘর্ষের শঙ্কা রয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য প্রভাব বিস্তার প্রতিরোধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।

ইসির তথ্যমতে, প্রথম ধাপে প্রতিটি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন চেয়ারম্যান পদে ৮ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১০ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১০ জন করে। তবে গড়ে প্রতিটি উপজেলায় প্রার্থী রয়েছে ৪ জন করে। আর সাধারণ কেন্দ্রে অস্ত্রসহ ৩ জন পুলিশ ও আনসারসহ ১৭ জন, গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে অস্ত্রসহ ৪ জন পুলিশ ও আনসারসহ ১৮ থেকে ১৯ জন এবং দুর্গম সাধারণ কেন্দ্রে ১৯ জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ২০ থেকে ২১ জন দায়িত্ব পালন করবে। এবার প্রার্থী ১ হাজার ৬৩৫ এর মধ্যে চেয়ারম্যান ৫৭০ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬২৫ এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৪০ জন। আর ভোটার ২০ লাখ ৮৮ হাজার ৬৬৭ জন, যার মধ্যে পুরুষ ১০ লাখ ৯৩ হাজার ৯২৬ জন, মহিলা ৯ লাখ ৯৪ হাজার ৭৩৫ জন ও হিজড়া ৬ জন। ভোটকেন্দ্র ও কক্ষ যথাক্রমে ৭৭৭টি, ৫ হাজার ৯২টি ও অস্থায়ী ভোটকেন্দ্র ৩৫২টি। ভোটের মাঠে ৪৫ দিনের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আগামী ৫ মে পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া র‌্যাব ও বিজিবি কেন্দ্রের নিরাপত্তায় থাকবে।

ভোটের বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল প্রার্থী না দেওয়ায় মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মধ্যে। এ কারণে নির্বাচনে সংহিতা ও সংঘাতের শঙ্কা রয়েছে। মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন ও পছন্দের প্রার্থী থাকায় নির্বাচনী শঙ্কা বাড়িয়েছে অনেকাংশে। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার না করতে মন্ত্রী-এমপিদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। প্রভাব বিস্তারে কমিশনের নানা নির্দেশনাও কাজে আসছে না। তবে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে। গত সোমবার মধ্য রাত থেকে সবধরনের প্রচার-প্রচারণা বন্ধ রয়েছে। কেন্দ্রওয়ারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

এদিকে, ভোটে কোনো প্রার্থীর পক্ষ-বিপক্ষে সংসদ সদস্যসহ (এমপি), সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নির্বাচনের প্রচারের কোনো রকম অংশগ্রহণ করতে পারবে না বলে নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এরই মধ্যে এ নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য সব রিটার্নিং কর্মকর্তাদের চিঠি পাঠিয়েছে ভোট আয়োজনকারী সংস্থাটি।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬ এর ২২ বিধিতে বলা হয়েছে, সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী নির্বাচন-পূর্ব সময়ে নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণা বা নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। তবে শর্ত থাকে যে, ওইরূপ ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ভোটার হলে তিনি কেবল তার ভোট প্রদানের জন্য ভোট কেন্দ্রে যেতে পারবেন।

এদিকে, প্রথম ধাপের ভোটে বেশকিছু উপজেলায় সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রথম ধাপের এ ভোটে আইনপ্রণেতা, ১৩জন মন্ত্রী-এমপির স্বজন ভোটের মাঠে লড়ছেন। এর মধ্যে সাবেক নৌমন্ত্রী ও এমপি শাজাহান খানের এলাকা মাদারীপুর সদর উপজেলা, রাজবাড়ীর পাংশা, চুয়াডাঙ্গার দামূড়হুদা, সিরাজগঞ্জের বেলকুচি, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া ও নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলাসহ অর্ধশতাধিক উপজেলায় নাজুক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এসব এলাকায় মন্ত্রী ও এমপিদের সন্তান-ভাই ও স্বজনরা প্রার্থী হয়েছেন। নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে শেরপুরের এসপি ও চর জব্বারের ওসিকে প্রত্যাহার, সরিষাবাড়ি উপজেলার চেয়ারম্যান রফিকুলের প্রার্থিতা বাতিল এবং শরীয়তপুরে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় এক চিকিৎসককে শোকজ করা হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে আগামী ১৪ দিনের জন্য বৈধ অস্ত্র প্রদর্শনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা এ সংক্রান্ত পরিপত্র থেকে বিষয়টি জানা গেছে।

এবার ৪৭৬টি উপজেলায় চার ধাপে ভোটগ্রহণ করা হবে। ১৯টি উপজেলা পরিষদে নির্বাচনের সময় হয়নি, পরবর্তীতে সে সব পরিষদে ভোট নেওয়া হবে। তফসিল অনুযায়ী, প্রথম ধাপে ১৪০টি উপজেলায় ৮ মে, দ্বিতীয় ধাপে ১৬০ উপজেলায় ২১ মে, তৃতীয় ধাপে ১১২ উপজেলায় ২৯ মে ও চতুর্থ ধাপে ৫৫ উপজেলায় ৫ জুন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ধাপে ২২টি, দ্বিতীয় ধাপে ২৪টি, তৃতীয় ধাপে ২১ ও চতুর্থ ধাপে দুটি উপজেলায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হবে।

আজ যেসব উপজেলায় ভোট

রংপুর : রংপুর সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মোতাহসিম জানান, যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ভোটকেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথেষ্ট তৎপর রয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : মঙ্গলবার দুপুরে নাসিরনগর ও সরাইল উপজেলায় ১৭৭টি ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জাম বিতরণ করা হয়। জেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. সাদেকুল ইসলাম জানান, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ এবং শতভাগ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

শেরপুর : ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৫, ভাইস চেয়ারম্যান ১২ ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭ জন লড়ছেন। নির্বাচনে ৫৫টি ভোটকেন্দ্রের ৩৬৫টি কক্ষে ৭৫ হাজার ১৩৭ পুরুষ, ৭৬ হাজার ৮৯২ নারী ও একজন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার দেবেন। শ্রীবরদী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৭, ভাইস চেয়ারম্যান ১৪ ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ জন লড়ছেন। এ নির্বাচনে ৮৬টি ভোটকেন্দ্রে ১লাখ ১৭ হাজার ৯২৪ পুরুষ, ১ লাখ ১৮ হাজার ৫১২ নারী ও তিনজন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ভোট দিতে পারবেন।

ফুলপুর (ময়মনসিংহ) : মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তন থেকে নির্বাচনী সরঞ্জাম বিতরণ করা হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ বি এম আরিফুল ইসলাম বলেন, সার্বিক বিষয়টি তদারকি করা হচ্ছে। বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শন করা হয়েছে।

জয়পুরহাট : কালাই, ক্ষেতলাল ও আক্কেলপুর- এ ৩ উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ১০৯টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হবে। তিন উপজেলায় ৩৪ জন চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

বগুড়া : বগুড়ার তিন উপজেলার নির্বাচন নিয়ে মঙ্গলবার বেলা ১১টায় গাবতলী পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী ব্রিফিং করেন। ব্রিফিংকালে ইউএনও নুসরাত জাহান বন্যা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্নিগ্ধ আখতার, সুমন রঞ্জন, গাবতলী থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রুহুল আমিন উপস্থিত ছিলেন।

মাগুরা : মাগুরা সদরে ১২০টি ও শ্রীপুরে ৫৭টি কেন্দ্রের ১ হাজার ২৪৪টি বুথে ভোট গ্রহণ হবে আজ। সদর উপজেলায় ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ২৩ হাজার ৫০৬ ও শ্রীপুরে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৬৫২।

নাটোর : জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল লতিফ শেখ জানান, আগামীকাল (আজ বুধবার) নাটোরের সিংড়া উপজেলা, নাটোর সদর উপজেলা ও নলডাঙ্গা উপজেলার ভোট হবে। সিংড়া উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হবে।

ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) : মঙ্গলবার দুপুরে ঘোড়াঘাট উপজেলায় নির্বাচনী সরঞ্জাম বিতরণ করা হয়। ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাচন অফিসার শাহিনুর আলম জানান, ১টি পৌরসভা ও চারটি ইউনিয়নের ৪৪টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হবে।

মিরসরাই (চট্টগ্রাম) : মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা সম্মেলনকক্ষে ১১৩টি কেন্দ্রের ৮৩৮টি ভোটকক্ষের নির্বাচন সরঞ্জাম প্রিসাইডিং অফিসারদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মিরসরাই উপজেলায় ভোটার ৩ লাখ ৭২ হাজার ২৫৭ জন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close