নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

চুড়িহাট্টা মামলা

তদন্ত এগোচ্ছে না রাসায়নিক সরাতে সবে কাজ শুরু

চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় করা মামলার তদন্ত যেন এগোচ্ছে না কিছুতেই। অথচ তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য দফায় দফায় তারিখ দিয়ে যাচ্ছেন আদালত। ওই ঘটনায় নিহতদের ময়নাতদন্ত এক বছরেও শেষ করা যায়নি ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে। তদন্ত কর্মকর্তা অপেক্ষায় আছেন সব লাশের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের। কিন্তু কবে সেসব পাওয়া যাবে তাও নিশ্চিত নয়। তাছাড়া মামলার বাদী ও সাক্ষীদের জবানবন্দিও নেওয়া হয়নি।

এদিকে, ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত যে সুগন্ধির গুদাম ও বোতলজাত করার কারখানা থেকে তার মালিকরা এখনো আড়ালেই রয়ে গেছেন। নাম জানা গেলেও তাদের ঠিকানা কিংবা অবস্থান জানা যায়নি। প্রতিষ্ঠানের দুটি কার্যালয়েও তালা ঝুলছে। এই অবস্থায় আজ ২০ ফেব্রুয়ারি সেই ঘটনার এক বছর পূর্ণ হলো। কিন্তু এখন পর্যন্ত ওই ঘটনায় করা মামলার তদন্তই শেষ হয়নি। মামলার দুর্বল এজাহারে আলোচিত সেই ভবনটির নামও নেই। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে সুগন্ধি বোতলজাত করার কারখানা ও গুদামে আগুনের সূত্রপাতের তথ্য মিললেও এজাহারে উল্লেখ ছিল সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কথা। এসব ভুলের সুযোগ নিয়ে ভবন মালিকের দুই ছেলে দীর্ঘদিন জামিনে রয়েছেন। এমনকি নিহত ব্যক্তিদের সবার ময়নাতদন্তও এখনো শেষ হয়নি।

অন্যদিকে, পুরান ঢাকার রাসায়নিক কারখানা ও গুদাম সরাতে কাজ শুরু করেছে সরকার। এজন্য প্রাথমিকভাবে গাজীপুরের টঙ্গীতে অস্থায়ীভাবে গুদাম নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে চুক্তি সই হয়েছে।

গত ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের (বিএসইসি) সম্মেলন কক্ষে ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান বিএসইসি এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্ক্স লিমিটেড (ডিইডব্লিউ), বাংলাদেশ নৌবাহিনীর মধ্যে এ চুক্তি সই হয়।

চুক্তি অনুযায়ী প্রকল্প এলাকা গেল সপ্তাহে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ১৩৫ দিনের মধ্যে প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ সম্পন্ন করবে। নির্ধারিত সময়ে কাজ সম্পন্নে ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।

মামলার নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, তদন্ত প্রতিবেদন জমার জন্য ৯টি তারিখ পার হয়েছে। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি তারিখ ঠিক করা রয়েছে প্রতিবেদনের জন্য। তদন্তের এই শম্বুকগতিতে হতাশ মামলার বাদী মো. আসিফ জানিয়েছেন, মামলার তদন্তের অগ্রগতির কোনো খবর তার কাছে নেই। তার সঙ্গে তদন্ত কর্তৃপক্ষ যোগাযোগও করছে না। আমরা চাই দ্রুত তদন্ত শেষ হোক।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৬ এপ্রিল এজাহারভুক্ত আসামি দুই ভাই ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এর আগে রিমান্ডে নিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাদের। মো. হাসান ও সোহেল ওরফে শহীদ গত বছরের ৮ আগস্ট হাইকোর্ট থেকে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পান। এরপর গত রোববার এই জামিনের মেয়াদ আরো এক বছরের জন্য বাড়িয়ে দেন বিচারপতি আবদুল হাফিজ এবং মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন চকবাজার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মুহাম্মদ মোরাদুল ইসলাম। তিনি বদলি হওয়ার এখন তদন্ত করছেন পরিদর্শক কবীর হোসেন।

তদন্তের বিষয়ে বলেন, ৭১ মৃত ব্যক্তির ময়নাতদন্ত শেষ করতে পারেননি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ময়নাতদন্ত বিভাগের চিকিৎসক সোহেল মাহমুদ। অবহেলার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে আরো ৫/৬ জনের বিরুদ্ধে। কিন্তু তাদের সঠিক বতর্মান বা স্থায়ী কোনো ঠিকানাই পাওয়া যাচ্ছে না। যে ঠিকানা অনুসন্ধানে পাওয়া গিয়েছিল সেখানে যেয়ে দেখি তারা সেখানে থাকেন না। সেটি তাদের সঠিক ঠিকানাও নয়। আশপাশের কেউ ঠিকানা দিতেও পারছে না। তাছাড়া ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনও তো এখনো রেডি হয়নি। আগে একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছিল, নিয়মিত মামলা হওয়ার পর ওই মামলা শেষ হয়ে গেছে। এখন একটিই মামলা রয়েছে। আমি এখনো ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাইনি। হয়তো একসঙ্গে আমাকে সরবরাহ করবেন চিকিৎসক।

এক প্রশ্নে তিনি বলেন, চেষ্টা করছি তাড়াতাড়ি তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার। আদালত আমার কাছে এখনো তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাননি, কোনো তাগিদও দেননি। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক সোহেল মাহমুদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছিল।

ময়নাতদন্তের অগ্রগতি কতটুকু জানতে চাইলে তিনি বলেন, এরই মধ্যে ৭/৮টি লাশের ময়নাতদন্ত শেষ করেছি। বাকিগুলোর করা হচ্ছে। কবে শেষ করা যাবে জানতে চাইলে তিনি ‘পরে কথা হবে’ বলে কল কেটে দেন। পরে কয়েকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close