নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

বিচারপতির প্রশ্ন

মশার জ্বালায় বাঁচি না, কোটি টাকা যায় কই

রাজধানীজুড়ে বেড়েছে মশার উৎপাত। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে খাওয়ার সময়, ঘুম, বাথরুমে কোথাও মশার জ্বালায় শান্তি নেই। মশার এমন উৎপাতের কারণে কদর বেড়েছে মশা তাড়ানোর সামগ্রীর। কয়েল, মশারি, স্প্রে, থেকে মশা মারার ব্যাট (মসকিউটো র‌্যাকেট) সবকিছুর চাহিদা বেড়েছে। এই উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে হাইকোর্টে ঢাকা শহরের বায়ুদূষণের একটি মামলার কার্যক্রম চলাকালীন বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের আইনজীবীকে উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, মশা নিধনে কোটি কোটি টাকা যায় কোথায়? গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।

বিচারপতি আরো বলেন, মশার জ্বালায় বাঁচি না। মশার জন্য প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ হয়, এই টাকা কই যায়! আল্লাহ ভালো জানেন। এ সময় সিটি করপোরেশনের আইনজীবী উঠে বললেন, আমরা চেষ্টা করছি।

বিচারপতি আইনজীবীর কথার পরিপ্রেক্ষিতে আবারও বলেন, এসবে হবে না। দুর্নীতি কমান। আমি বলছি না বন্ধ করে দেন। কমান; তাহলেই মানুষ শান্তি পাবে। মশার কামড়ে মানুষ হাসপাতালে যাচ্ছে বেশি। একই সঙ্গে ঢাকা শহরের বায়ুদূষণ প্রতিরোধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা দুই সপ্তাহের মধ্যে পরিবেশ অধিদফতর, সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্টদের জানাতে বলা হয়েছে।

এদিকে মশা নিধনের উপকরণেরও দাম বেড়েছে। এর মধ্যে সব থেকে বেশি দাম বেড়েছে মশা মারার ব্যাটের। একসময় ২০০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে বিক্রি হওয়া মশা মারার ব্যাটের দাম এখন বেড়ে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা ছুঁয়েছে।

গুলিস্তান থেকে মশা মারার ব্যাট কিনেছেন মধ্যবয়সী মো. রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, ঘরের ভেতরে স্প্রে বা কয়েল জ্বালালেও মশা ঘোরাঘুরি করে। মশার কারণে ছেলেমেয়ের পড়ার বেশ ব্যাঘাত ঘটে। তাই ওদের আবদারে মশা মারার ব্যাট কিনতে এসেছি। গত বছরও ব্যাট কিনেছিলাম। কিন্তু এবার দাম অনেক বেশি। গত বছর যে ব্যাট ২০০ টাকা দিয়ে কিনেছিলাম এবার সেই ব্যাটের দাম ৫০০ টাকা হয়েছে।

তিনি বলেন, স্প্রে বা কয়েল স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আবার এর গন্ধও সহ্য করা যায় না। অপরদিকে মশারি ঝুলিয়ে তার ভেতরে বসে পড়া কিছুটা হলেও কষ্টকর। সেদিক থেকে মশার ব্যাট কিছুটা হলেও ভালো। এর কোনো গন্ধ নেই। হাত দিয়ে নাড়াচাড়া করেই মশা মারা যায়। ফলে মশার ব্যাটের চাহিদা ভালোই রয়েছে। এ কারণেই ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।

মশা মারার ব্যাটের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে গুলিস্তানের ব্যবসায়ী মো. আইয়ুব আলী বলেন, মশার ব্যাটের ওপর সরকার ভ্যাট বাড়িয়েছে। যে কারণে ব্যাটের খরচ বেড়ে গেছে। আগে যে ব্যাট ১৫০ টাকা দিয়ে কিনতাম এখন তা ৪০০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়। ফলে আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

এদিকে ব্যাটের পাশাপাশি বেড়েছে মশারির চাহিদা। অবশ্য ব্যাটের চেয়ে মশারির চাহিদা বেড়েছে অনেক বেশি। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর না হওয়ায় বরাবরই মশা দমনের ক্ষেত্রে মশারির চাহিদা সবার ওপরে। আবার দামও সাধারণের নাগালের মধ্যেই।

নিউমার্কেটের মশারি বিক্রেতা মো. আলমগীর হোসেন বলেন, মশারির চাহিদা সবসময় থাকে। তবে মাসখানেক ধরে মশারির চাহিদা বেড়েছে। আমাদের দোকানে ২০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা দামের মশারি আছে। এর মধ্যে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা দামের মশারির চাহিদা বেশি। সাধারণত দিনে ২০ থেকে ২৫টি মশারি বিক্রি হয়। তবে মাসখানেক ধরে দিনে গড়ে ৪০টির মতো বিক্রি হচ্ছে।

ফুলবাড়িয়া সিটি সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী ইদ্রিস আলী বলেন, আমরা মশারি পাইকারি বিক্রি করি। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ী এসে আমাদের কাছ থেকে মশারি কিনে নিয়ে যায়। মাসখানেক ধরে ঢাকার ব্যবসায়ীরা মশারি কেনার পরিমাণ বাড়িয়েছেন। আগে যারা ৫০০ মশারি কিনতেই, এখন তারা ১ হাজারের ওপরে মশারি কিনছেন। তবে জেলা শহরের ব্যবসায়ীরা এখনও সেভাবে অতিরিক্ত মশারি কেনা শুরু করেননি। আমাদের ধারণা কয়েক দিনের মধ্যেই জেলা শহরের ব্যবসায়ীরাও মশারি কেনার পরিমাণ বাড়িয়ে দেবেন।

এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি মশার স্প্রে ও কয়েল বিক্রির পরিমাণও কিছুটা বেড়েছে। রামপুরার ব্যবসায়ী মো. আনোয়ার বলেন, আগে দিনে এক প্যাকেটের মতো কয়েল খুলে বিক্রি করতাম। এখন দিনে খুলেই বিক্রি হয় দুই-তিন প্যাকেট। আবার কেউ কেউ আছেন প্যাকেট ধরেই কিনে নিয়ে যান। শুধু কয়েল না, স্প্রে বিক্রিও বেড়েছে। আগে যারা আমার কাছ থেকে শুধু কয়েল কিনতেন তাদের অনেকেই স্প্রেও কিনে নিয়ে গেছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close