সু চির জন্য শেষ সুযোগ
বিবিসির হার্ডটক অনুষ্ঠানে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, আগামীকাল মঙ্গলবার সু চি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। তার জন্য এই ভাষণই হবে রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযান বন্ধের শেষ সুযোগ। সু চি যদি তার অবস্থান থেকে সরে না আসেন, অবস্থান পরিবর্তন না করেন, তাহলে এ সংকট আরো ঘনীভূত হবে। মহাসচিব বলেছেন, রোহিঙ্গাদের নিজভূমিতে, তাদের বাড়িতে ফিরিয়ে নেওয়াটাই হবে একটি মানবিক কাজ এবং মিয়ানমারকে এ কাজ থেকে পিছিয়ে আসাটা অনুচিত হবে। তিনি আরো বলেছেন, মিয়ানমারে এখনো ‘সেনাবাহিনী সবার ওপরে’। রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে তারা যা করেছে, তার প্রতিফলন তাদের অবশ্যই দেখতে হবে।
এদিকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার বাংলাদেশে পালিয়ে আসার ঘটনাকে সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ শরণার্থী সঙ্কট হিসেবে আখ্যায়িত করেছে জাতিসংঘ। গত পাঁচ বছরের মধ্যে এবারই একসঙ্গে এত সংখ্যক লোকজন প্রাণ বাঁচাতে তাদের ভূখন্ড ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। কক্সবাজারে মানবিক সহায়তার কাজে যুক্ত ‘ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ’ (আইএসসিজি) তথ্য মতে, ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে চার লাখ নয় হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। অপরদিকে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) মুখপাত্র দুনিয়া আসলাম খান বলেছেন, কক্সবাজার ও এর আশপাশে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেওয়ায় প্রতিদিনই পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। এ ছাড়া আগে থেকেই বাংলাদেশে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা রয়েছে। তাই নতুন করে আসা কয়েক লাখ রোহিঙ্গা সামাল দেওয়ার পরিস্থিতি বাংলাদেশের নেই। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি বেশ জটিল।
ইউএনএইচসিআর সূত্র মতে, দক্ষিণ সুদান থেকে ১৬ লাখ শরণার্থী সুদান, ইথিওপিয়া, কেনিয়া, কঙ্গো ও মধ্য আফ্রিকায় ছড়িয়ে পড়েছে। ওই সময় প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার শরণার্থী দক্ষিণ সুদান ছেড়ে পালিয়েছে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার মুখপাত্র বাংলাদেশের পরিস্থিতিকে সুদানের চেয়েও ভয়াবহ বলে মন্তব্য করেছেন। এদিকে জাতিসংঘের ৭২তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কের পথে ঢাকা ছেড়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সেখানে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সমস্যা এবং সংকটের মূল কারণগুলো তুলে ধরে তা নিরসনে বাংলাদেশের প্রস্তাব বিশ্বনেতাদের সামনে তুলে ধরবেন। একই সঙ্গে আমরাও মনে করি, প্রধানমন্ত্রীর তুলে ধরা বক্তব্যের সঙ্গে জাতিসংঘও ঐকমত্য পোষণ করে রাখাইন রাজ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী সেখানকার দায়িত্ব গ্রহণ করবে এবং রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার বিষয়টিকে নিরাপদ করবে।
"