reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৯ এপ্রিল, ২০২৪

কিশোরদের সাইবার সচেতন করতে হবে

ইন্টারনেট এখন আমাদের নিত্যসঙ্গী। মোবাইলে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পুরো বিশ্বকে হাতের মুঠোয় আনা সহজতর হয়ে গেছে। যতটা ডিজিটাল হচ্ছে তথ্য ও প্রযুক্তি খাত, ততটাই অ্যাডভান্স হচ্ছে আমাদের উঠতি প্রজন্ম। মোবাইল আর ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা এ প্রজন্মকে অনেক এগিয়ে নিয়ে গেছে এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তবে ইন্টারনেটের এ সহজলভ্যতা ও হাতে হাতে স্মার্টফোনের অবাধ বিচরণ এ প্রজন্মকে ভুল পথেও নিয়ে যাচ্ছে।

বিজ্ঞান যে শুধু আশীর্বাদ নয় অভিশাপ, তা বর্তমান যুগে বেশি দৃশ্যমান। আর এ বিজ্ঞানের একটি অভিশাপ হলো পর্নোগ্রাফি, যা সমাজের ভয়াবহ এক ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান প্রজন্মের বেশির ভাগ মানুষ, কিশোররা পর্নো আসক্ত, যা সম্ভব হয়েছে ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা ও হাতের নাগালে স্মার্টফোনের সুবাদে। পর্নো আসক্ত কিশোর ও যুবকরা বেড়ে উঠছে বিকৃত মানসিকতা নিয়ে। যার প্রভাব পড়ছে সমাজে। একই সঙ্গে প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের অপব্যবহারের কারণে কিশোরদের মধ্যে বাড়ছে যৌন নির্যাতনমূলক অপরাধ। শিশু-কিশোররা মাঠে শারীরিক চর্চার বিপরীতে ডিভাইসের বিভিন্ন সেক্সুয়াল গেমসে আশক্ত হয়ে পড়ছে। ফলে তাদের মধ্যে এ ধরনের অপরাধপ্রবণতা সৃষ্টি হচ্ছে। সম্প্রতি শিশু ধর্ষণের বেশ কয়েকটি মামলায় দেখা যায়, অভিযুক্তদের বয়স ১৮ বছরের নিচে। যে কিশোরদের মাঠে খেলাধুলা করার কথা, যাদের হাতে থাকবে বই-পুস্তক, যারা স্কুল-কলেজে হই-হুল্লোড়ে মেতে থাকবে, তারা কেন ধর্ষণের মতো অপরাধে জড়াচ্ছে? আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) এ বছরের গত তিন মাসের (জানুয়ারি থেকে মার্চ) তথ্য বলছে, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ১৮ বছরের নিচে অন্তত ৫০টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে ছয়জন। আর ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে দুজনকে। ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যা করেছে একজন। এ ছাড়া ১০টি শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান বাস্তবতায় কিশোরদের নানা ধরনের অপরাধে জড়ানোর প্রধান কারণ হলো পর্নোগ্রাফির সহজলভ্যতা। তবে কোনো অপরাধের পেছনে শুধু একটি কারণ দায়ী থাকে, এমনও নয়। একের অধিক কারণও থাকতে পারে এবং সেগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। কিশোররা ডিভাইসের অপব্যবহার করে অনলাইনে বিভিন্ন অশ্লীল গেমসে আশক্ত হয়ে পড়ছে। যার কারণে তারা অল্প বয়সেই যৌন বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠছে। শহরের শিশু-কিশোরদের প্রকৃতির সঙ্গে পরিচয় নেই বললেই চলে। একদিকে ডিভাইসনির্ভর কৈশোর; অন্যদিকে দৈনন্দিন সামাজিক জীবন না থাকার কারণে তাদের বেড়ে ওঠাটা ভিন্ন। এ সুযোগে তারা যেন অপরাধপ্রবণ হয়ে না ওঠে, সেজন্য করণীয় নির্ধারণ করতে হবে। অনলাইনে বিভিন্ন গেমসের নামে যে অশ্লীলতা ছড়াচ্ছে সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কিশোরদের খেলার মাঠগুলোকে বন্ধ করে বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি হচ্ছে। এর ফলে কিশোররা ডিভাইসমুখী হয়ে এমন অপরাধের দিকে ঝুঁঁকছে। এই মুহূর্তে এটা প্রতিরোধ করা জরুরি।

সরকার মাদকের বিরুদ্ধে যেভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, ঠিক তেমনি পর্নোগ্রাফির বিরুদ্ধেও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। মাদকের মতোই ভয়াবহ এ পর্নোগ্রাফি। এ বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে সবাইকে। একই সঙ্গে সাইবার সচেতন করতে হবে কিশোরদেরও। নৈতিক শিক্ষার সমন্বয়ে প্রত্যেক সন্তানের জীবন গড়া উচিত। কেউই যেন ভুল পথে পা না বাড়ায় সেটি দেখার দায়িত্ব সমাজের সবার।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close