মো. আরমান হোসেন ইমন

  ২৯ এপ্রিল, ২০২৪

মুক্তমত

স্মার্ট হতে হলে বই পড়ুন

জ্ঞান অন্বেষণের প্রধান হাতিয়ার হলো ‘বই পড়া’। যাদের বইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক বেশি, তাদের ব্যক্তিগত জীবনও তত সুন্দর। মহাকবি গ্যাটে বইপাঠের মাধ্যমে অগাধ ও নির্মূল আনন্দ খুঁজে পেতেন। মানুষকে পার্থিব জগতে বন্ধুরূপি ধোঁকায় পড়তে দেখা যায়, কিন্তু চিরস্থায়ী বন্ধু গ্রহণ করতে চায় না। যে বন্ধুত্ব প্রতারণা করবে না, বরং নিঃস্বার্থভাবে পাঠককে ধারণ করবে। আমাদের অন্তঃচক্ষুর আড়ালে নৈতিকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বইকে স্থায়ী বন্ধু হিসেবে বেছে নেওয়া সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

‘বই পড়া’ প্রবন্ধে প্রমথ চৌধুরী স্বেচ্ছায় বই পড়ার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে। আমাদের পরিবেশ, পরিস্থিতি বই পড়ার সেই সুযোগটি দেয় না। আমরা সবাই অর্থ উপার্জনের চিন্তায় মশগুল। পেশাগত উপকারের দিক চিন্তা করে বই পড়ায় প্রকৃত আনন্দ নেই। বরং পাঠককে কৌতূহলী হয়ে বইয়ের প্রতি মনোনিবেশ করতে হবে। জীবনের গতিপথ বদলানোর জন্য এবং উন্নতির চরম শিখরে ওঠার তাগিদে বইয়ের বিকল্প আর কিছু হতে পারে না। এজন্য প্রয়োজনে আমাদের সন্তানদের পর্যাপ্ত বই কিনে দিয়ে তাদের বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উন্নত মেধাবী করে গড়ে তুলতে হবে। সৈয়দ মুজতবা আলীর ভাষায়, ‘বই কিনে কেউ কোনো দিন দেউলিয়া হয় না’। আর বইয়ের গুরুত্ব বোঝাতে পারস্য কবি ওমর খৈয়াম বলেছেন : ‘রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে যাবে, কিন্তু একখানা বই অনন্ত যৌবনা, যদি তেমন বই হয়’। এজন্যই পছন্দসই বইগুলোকে স্তর বিন্যাসে সাজিয়ে গড়ে তোলা যায় ব্যক্তিকেন্দ্রিক পাঠাগারে।

বর্তমানে প্রকৃত পাঠকের সংখ্যাটা নিচের কোটায় বিরাজমান। যেখানে উল্লেখ্য, কতগুলো কারণ বিদ্যমান আছে। প্রথমত, যারা বই পড়ার কথা ছিল তারা অনলাইন জগৎ নিয়ে ব্যতিব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। ব্রিটিশ এক লেখক সতর্ক করে বলেন- ‘টুইটার, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আধিপত্যের কারণে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিশুরা অশিক্ষিত হবে’। কারণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পড়ার পরিবেশ থেকে বিনোদনের পরিবেশ খুব আমোদণ্ডপ্রমোদভাবে চলে। সেখানে মনের অজান্তেই আমাদের মূল্যবান সময়গুলো ব্যয় হয়ে যায়। ফলে, বর্তমান তরুণ প্রজন্ম আশঙ্কা হারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঝুঁকে পড়ছে। এটি যেভাবে তরুণসমাজের জন্য ক্ষতিকর, তেমনি ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের জন্যও অত্যাধিক অনিষ্টকর। দ্বিতীয়ত, আমাদের প্রাইভেট-কোচিং চক্রে পড়ালেখার গোলকধাঁধায় উৎসুক বইপ্রেমীরা অতল গহ্বরে পর্যায়ক্রমে হারিয়ে যাচ্ছে। যেখানে অ্যাকাডেমিক সিলেবাসভুক্ত মারপ্যাঁচের কারণে অ্যাকাডেমিকের বাইরের বই পড়ার সুযোগগুলো নষ্ট হচ্ছে। তৃতীয়ত, পর্যাপ্ত লাইব্রেরি বা গ্রন্থাগারের অভাব। চতুর্থত, দু-তিন দশক আগেও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বইয়ের নিয়মিত পাঠক আর লেখকদের নিয়ে হতো সাহিত্য আড্ডা। বাংলাদেশে এই ছোট ছোট সাহিত্য আড্ডার পাঠকরাই একসময় হয়ে উঠতেন মূলধারার কবি-সাহিত্যিক। এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই সাহিত্য আড্ডার অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর লাইব্রেরি আজ পাঠকশূন্যে হাহাকার করছে। পাঠক থেকেই একজন মানুষ ক্রমেই লেখক হয়ে ওঠে। বই পড়ার পাঠকই যদি না থাকে তাহলে লেখক আসবে কোথা থেকে? আর সবাই যে লেখক হবে তেমনটি নয়। তবে বই পড়া মানুষের মূল্যবোধ তৈরিতে প্রধান ভূমিকা রাখে।

আমাদের প্রত্যাশাই হলো আবার ফিরে আসুক উৎসব বইপ্রেমীরা। যারা লাইব্রেরি, ল্যাম্প লাইট, স্টেশন ঘিরে জমে তুলবে বইয়ের আড্ডা। আবার তারাই বইমেলার মাস ফেব্রুয়ারি বাদেও অন্য মাসগুলোতে বই কেনার হিড়িক জমিয়ে তুলবে। যে কারণে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে বা বই পড়ার সুবিধা যত সুবিধা... তা হলো ১. স্মার্ট হতে হলে বই পড়ুন। ২. জ্ঞানকে সমৃদ্ধিশালী করতে বইয়ের সঙ্গেগ সম্পর্ক গড়ুন। ৩. স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে। ৪. একাগ্রতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে। ৫. ভূরিভূরি শব্দভাণ্ডার আয়ত্তে আনতে। ৬. মানসিক চাপ কমার লক্ষ্যে বই পড়ুন। ৭. কল্পনার জগতে গল্প, উপন্যাস এবং ছবি আঁকতে- নিজ শক্তি ও কৌতূহল বৃদ্ধি করার জন্য বই পড়ুন। ৮. একাকিত্বের সঙ্গী বুনার জন্য বই আঁকড়ে ধরুন। ৯. আত্মপ্রেরণার জন্য বইকে সঙ্গে রাখুন। ১০. লেখার গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য বই পড়ুন। ১১. কোলাহল পূর্ণ সমাজে প্রশান্তির লক্ষ্যে বইয়ের সঙ্গে সময় কাটান। এই প্রশান্তি আপনার উচ্চ রক্তচাপ, উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করবে। ১২. সঠিক পন্থায় বিনোদনের মাধ্যম খুঁজে পাওয়ার জন্য সাহিত্য, গল্প, উপন্যাসচর্চা করুন। ১৩. বই পড়াতে মানবিক এবং সহানুভূতিশীল সৃষ্টি হয়। এটি নিজের ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, যা মানুষের দুঃখ বুঝতে সহায়তা করে এবং আত্মজীবনের এক নতুন দুনিয়া উন্মুক্ত করে দেয়।

অতএব ‘আজ পড়ব না, আগামীকাল থেকে শুরু করব’ বলে যারা সময় ব্যয় করতে পারদর্শী। তাদের সময় অপচয় জীবনকে গ্রাস করার আগেই উপলব্ধি করা দরকার। এমনকি এখন থেকেই বিদ্যাচর্চার মাধ্যম ‘বই পড়া’ শুরু করা উচিত। বই না পড়ার ফলে অপসংস্কৃতি, অমার্জিত লোকজনের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। আর কমে যাচ্ছে রুচিশীল, সংবেদনশীল, হৃদয়বান মানুষ। তরুণরা ঝুঁকে পড়ছে ডিভাইস আসক্তিসহ বিভিন্ন কর্মের প্রতি, যা উন্নত রাষ্ট্র ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিরাট হুমকি। আসুন বইপড়ুয়া সমাজ গঠন করি।

লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close