reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ৩০ এপ্রিল, ২০২৪

ওষুধশিল্পের ইতিবাচক অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে হবে

বাংলাদেশের ওষুধশিল্প একটি বিপুল সম্ভাবনাময় ও বিকাশমান শিল্প। স্থানীয় চাহিদার প্রায় ৯৮ শতাংশ ওষুধই দেশে তৈরি হচ্ছে। দেশীয় ফার্মাসিউটিক্যালস প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা এবং ওষুধশিল্পের প্রবৃদ্ধি স্থানীয় ওষুধের বাজারকে করেছে সমৃদ্ধ। বৈশ্বিক বাজারেও অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। স্বল্পোন্নত দেশগুলোয় এখন ওষুধের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক বাংলাদেশ। প্রতি বছরই বিশ্ববাজারে রপ্তানির এ আকার বড় হচ্ছে। একই মানের হওয়া সত্ত্বেও উন্নত বিশ্বের ফার্মাসিউটিক্যালসে প্রস্তুতকৃত ওষুধের চেয়ে কম দাম, যা রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রভাব রেখেছে। যদিও স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ের চিত্র ঠিক এমনটি ছিল না। এ দেশে ওষুধশিল্পের প্রসার ঘটে মূলত আশির দশকে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে ওষুধশিল্পের যাত্রা শুরু পঞ্চাশের দশকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিস্তৃত হতে থাকে ওষুধের বাজার। সরকার ১৯৭৪ সালে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে গঠন করে ঔষধ প্রশাসন পরিদপ্তর। তারও আগে ১৯৭৩ সালে প্রয়োজনীয় ওষুধ আমদানি করার জন্য ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের অধীনে গঠন করা হয়েছিল একটি সেল। এক কথায় স্বাধীনতা-উত্তর এ দেশে ওষুধের স্থানীয় বাজার প্রায় পুরোটাই বহুজাতিক ফার্মাসিউটিক্যালসের দখলে ছিল। এ সুযোগে অধিক বা অনৈতিক মুনাফা করার সুযোগ নিতে শুরু করে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী। তাদের রুখতে সরকার ১৯৮২ সালে প্রণয়ন করে ড্রাগ (কন্ট্রোল) অর্ডিন্যান্স বা ওষুধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ, যেখানে দেশি ওষুধশিল্পের বিকাশে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। ট্যাবলেট, ইনজেকটেবল, ক্যাপসুল, অ্যান্টিবায়োটিকের মূল্য নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হয়। একই সঙ্গে তালিকা করে দেড় হাজারেরও বেশি ওষুধ দেশে নিষিদ্ধ করা হয়। জাতীয় এ ওষুধনীতিতে বলা হয়েছিল, যেসব ওষুধ দেশি কোম্পানিগুলো তৈরি করতে পারে, সেগুলো আমদানি করা যাবে না। আর এসব পদক্ষেপই পর্যায়ক্রমে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয় বাংলাদেশের ওষুধশিল্প। ১৫০টি ওষুধকে অত্যাবশ্যকীয় হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। বাধ্যতামূলক করা হয় দেশীয় কোম্পানিগুলোর মোট উৎপাদনের ৬০ শতাংশ এসব ওষুধ উৎপাদনকে।

সরকারের এ নীতির ফলে বিদেশি ওষুধ কোম্পানিগুলোর একচেটিয়া বাণিজ্য থেকে দেশীয় ওষুধশিল্প মুক্তি পায় এবং ধীরে ধীরে বাজার সম্প্রসারণ শুরু করে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে ১৯৮৫ সাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ওষুধ রপ্তানি শুরু করে বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলো। বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে প্রায় ১৫০ দেশে ওষুধ সরবরাহ করা হয়। এ খাত থেকে গত অর্থবছরে ১৭ কোটি ৫৪ লাখ ২০ হাজার ডলার আয় হয়। চীন, ভারত ও পশ্চিমের কয়েকটি দেশ ছাড়া ওষুধ উৎপাদনে বাংলাদেশের সমকক্ষ কেউ নেই। ফলে বৈশ্বিক ওষুধের বাজারে আমাদের ব্যাপক প্রবৃদ্ধির সুযোগ আছে। স্থানীয় উৎপাদনের ক্ষেত্রেও সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোর তুলনায় এগিয়ে বাংলাদেশ। তুলনামূলক-সমৃদ্ধ এসব দেশ তাদের জাতীয় চাহিদার ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ মেটাতে আমদানির ওপর নির্ভর করে। ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তারা স্থানীয় বাজারে বিশ্বমানের ওষুধ সরবরাহ করছে।

ওষুধশিল্পের বিকাশ ও উন্নতিতে গবেষণার পরিধি আরো বাড়ানোর বিকল্প নেই। কেননা যেসব দেশের গবেষণা যত উন্নত, সেসব দেশে শিল্পের প্রসার তত অধিক। ওষুধশিল্পকে এগিয়ে নিতে উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করতে হবে সরকারকে। এ ছাড়া ওষুধশিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক কমানো জরুরি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close