মো. খসরু চৌধুরী

  ৩০ এপ্রিল, ২০২৪

মুক্তমত

প্রশস্ত হবে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের পথ

কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির বাংলাদেশ সফর দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের সুসম্পর্ককে নতুন মাত্রায় উন্নত করেছে। মধ্যপ্রাচ্যের তেল-গ্যাস-সমৃদ্ধ দেশ কাতারে পৌনে তিন লাখ বাংলাদেশি কর্মরত। পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার করতে আমিরের সফরকালে বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে সই হয়েছে পাঁচটি চুক্তি ও পাঁচটি সমঝোতা স্মারক। বাণিজ্য ও বিনিয়োগের নতুন পথ খোলার আশ্বাস এসেছে কাতারের পক্ষ থেকে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাতারের আমিরের সঙ্গে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। বৈঠকে বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। সৌজন্য সাক্ষাৎকালে কাতারের আমিরকে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

বাংলাদেশ সরকার বিদেশি বিনিয়োগের জন্য ১০০টি অর্থনৈতিক বিশেষ অঞ্চল স্থাপন করেছে। কাতারের বিনিয়োগকারীরা পেট্রো-কেমিক্যাল, জ্বালানি, মেশিনারিজ, তথ্যপ্রযুক্তি, ইলেকট্রনিকস, সিরামিক, কৃষি-ব্যবসা, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের মতো কিছু ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে পারেন। রাষ্ট্রপতি কাতারের আমিরকে তাদের দেশে আরো বাংলাদেশি তরুণ, দক্ষ ও আধা-দক্ষ জনশক্তি, আইটি বিশেষজ্ঞ, পেশাদার প্রযুক্তিবিদ নিয়োগের আহ্বান জানান। কাতারের আমির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের প্রশংসা করেন। আশ্বাস দেন আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা অব্যাহত থাকবে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় বাংলাদেশ যখন জ্বালানিসংকটসহ অন্যান্য সমস্যায় ভুগছে, তখন কাতারের আমিরের সফর এবং দুই দেশের মধ্যে চুক্তি ও সমঝোতাকে গুরুত্বের চোখে দেখা হচ্ছে। আমরা আশা করব এ সম্পর্ক আরো উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে।

পারস্পরিক আস্থার পরিপূরক হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও দুই দেশের অভিন্ন ভূমিকা রাখার সুযোগ সৃষ্টি হবে। কাতারের আমিরের সফরে ঢাকা-দোহা সম্পর্ক যে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে তা আরো এগিয়ে নিতে হবে। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির দুদিনব্যাপী বাংলাদেশ সফরটি নানা দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। এমনিতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে বিশ্বে বেড়েছে জ্বালানি তেলসহ নিত্যপণ্যের দাম। বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা হয়ে পড়েছে বিপর্যস্ত। পরে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে, যা আরো সম্প্রসারিত ও দীর্ঘমেয়াদি হয়েছে। যুদ্ধাবস্থা আরো ছড়িয়ে পড়লে এর নেতিবাচক প্রভাব হবে আরো অনিশ্চিত ও সুদূরপ্রসারী। যার অনিবার্য শিকার হতে হবে বাংলাদেশকেও। কেননা, মধ্যপ্রাচ্য বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার।

প্রবাসী আয়ের সিংহভাগই এসে থাকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে। সে অবস্থায় মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত ও সংঘাতবহুল হলে এর অনিবার্য প্রভাব পড়বে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর শ্রমবাজারে। যুদ্ধের প্রভাবে যা সংকুচিত হয়ে পড়তে পারে। কাতারের আমিরের ঢাকা সফরটি এ ক্ষেত্রে আশার আলো হয়ে দেখা দিতে পারে।

বর্তমানে কাতারে বৈধ-অবৈধ চার লক্ষাধিক বাংলাদেশি শ্রমজীবী রয়েছে। যাদের কষ্টার্জিত আয়ে পরিপুষ্ট হচ্ছে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। সে দেশে বাংলাদেশি শ্রমজীবীদের রয়েছে পরিশ্রমী ও সুশৃঙ্খল হিসেবে সুনাম। দেশটিতে আরো বাংলাদেশি শ্রমজীবী পাঠানোর সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। যে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে তার একটি জনশক্তিবিষয়ক।

অন্য চারটি হলো- বন্দর পরিচালনা-সংক্রান্ত, শিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা, যুব ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে সহযোগিতা এবং কূটনৈতিক প্রশিক্ষণ। উল্লেখ্য, কাতার বাংলাদেশের মাতারবাড়ীর গভীর সমুদ্রবন্দর পরিচালনার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়া হলেও বলতে হবে বিষয়টি ইতিবাচক।

বাংলাদেশ ও কাতারের সম্পর্ক পারস্পরিক শ্রদ্ধা, অভিন্ন মূল্যবোধ, অভিন্ন ধর্মীয় ভিত্তি ও সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। ১৯৭৪ সালে ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনের পর ১৯৭৪ সালে ৪ মার্চ কাতার বাংলাদেশকে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কাতার মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ, যে দেশটি ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে যুদ্ধবিরতির অন্যতম মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশের রূপকল্প ২০৪১ এবং কাতারের রূপকল্প ২০৩০ বাস্তবায়নে একে অন্যের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে কাজ করবে বলে দুই দেশের জনগণের প্রত্যাশা।

কাতারের আমিরের ঢাকা সফরকালে যে ৫টি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে, সেগুলো হলো, আয়ের ক্ষেত্রে দ্বৈত কর পরিহার ও কর ফাঁকি-সংক্রান্ত, আইনি বিষয়ে সহযোগিতা, সাগর পথে পণ্য পরিবহন, উভয় দেশে পারস্পরিক বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সুরক্ষা এবং যৌথ ব্যবসা পরিষদ গঠন। উল্লেখ করা আবশ্যক যে, কাতার প্রভূত তেল-গ্যাসসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের একটি ধনী ও উন্নত দেশ। দেশটি বাংলাদেশের নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করতে পারে। যার ফলে, বিদেশি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের পথ প্রশস্ত হবে।

লেখক : সংসদ সদস্য ঢাকা-১৮, সদস্য, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close