reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৫ জানুয়ারি, ২০২৪

পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হোক

বড় কোনো উৎসব, বিশেষ করে রমজান মাসে দেশে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো যেন অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। মুসলমানদের সিয়াম সাধনার মাস শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী দ্রব্যমূল্য বাড়াতে যথারীতি প্রতিযোগিতা শুরু করে দেয়। প্রতি বছরই এটা দেখা যায়। উৎসব ও বিশেষ উপলক্ষে বা ধর্মীয় প্রধান কোনো উৎসবের সময়ে ইউরোপ ও আমেরিকা মহাদেশ তো বটেই, বিভিন্ন ইসলামি রাষ্ট্রসহ পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই পণ্যের মূল্য কমে যায়; নিত্যপণ্যসহ নতুন-পুরোনো পোশাক-আশাক ও উৎসবসামগ্রী বিক্রি করা হয় বিশেষ ছাড়ে। অথচ আমাদের দেশে দেখা যায় এর উল্টোটা।

কেন পবিত্র রমজান মাস, ঈদুল আজহা বা ঈদুল ফিতরের মতো বড় উৎসবের আগে বাংলাদেশে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়? তা নিয়ে রয়েছে পরস্পরবিরোধী প্রধানত দুই রকমের অভিমত। ব্যবসায়ীরা বলে থাকেন, খরচ বৃদ্ধি ও চাহিদা জোগান তত্ত্বের স্বাভাবিক নিয়মেই এ সময় মূল্য বেড়ে যায়। অন্যদিকে নীতিনির্ধারক ও সাধারণ জনগণের বক্তব্য হলো, ভোগ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের লোভের স্ফীতিই এই মূল্যবৃদ্ধির বড় কারণ। এই বিতর্কের উপসংহার যেটাই হোক না কেন, রমজান সামনে রেখে বাজারের অগ্নিমূল্যের উত্তাপ মানুষকে যে দিশাহারা করে তোলে, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে ব্যবসায়ীদের লোভের স্ফীতিও ঘটে তখন। তাই রমজানে ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়। আগে যেখানে ২ টাকা মুনাফা করা হতো, সেখানে এখন ২০ টাকা মুনাফা করতে চান ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া সামর্থ্যবান মানুষদের মধ্যে একসঙ্গে বেশি পণ্য কিনে রাখার প্রবণতাও লক্ষ করা যায়। মূল্যবৃদ্ধির পেছনে এটিও একটি কারণ।

নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ না নিতে পারলে নিম্ন বা মধ্যম আয়ের মানুষদের ভোগান্তির শেষ থাকবে না। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে যে আলুর কেজি ছিল ২৫ টাকার মধ্যে, এক বছর পর বাজারে এখন একই আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। দাম দ্বিগুণেরও বেশি। শুধু আলু নয়, বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম এখন চড়া। এ বছরের শুরুতেই আওয়ামী লীগ সরকারের টানা চতুর্থবারের মেয়াদ শুরু হয়েছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে। নিশ্চয়ই দ্রব্যমূল্য সাধারণের নাগালের মধ্যে রাখতে পরিকল্পনা রয়েছে এই সরকারের। রমজান মাসকে সামনে রেখে এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশও দিয়েছেন। এ বছরের রমজান শুরু হতে বাকি আর মাস দু-এক। পণ্যমূল্য বাড়াতে এবারও যে অসাধু ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাত দাঁড় করাবেন না সেটা বলা যায় না। সেজন্য আগেভাগেই ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করেছেন। তিনি গত শনিবার নতুন মন্ত্রীদের নিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এ সময় টুঙ্গিপাড়ার নিজ বাসভবনে অনানুষ্ঠানিক মন্ত্রিসভার বৈঠকে নতুন মন্ত্রীদের ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষ যাতে স্বস্তিতে থাকতে পারে, সেজন্য নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। পবিত্র রমজান ঘনিয়ে আসছে, তাই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন। এই মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ানো উচিত নয়।

আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টরা তৎপর এবং আন্তরিক থাকবে। কারণ রমজান শুরুর আগেই কার্যকর ব্যবস্থা নিলে অসাধু ব্যবসায়ীরা দ্রব্যমূল্য বাড়ানোর সুযোগ পাবে না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close