বেলকুচি (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি

  ১৭ মে, ২০২৪

 সিরাজগঞ্জের বেলকুচি

এমপির পিএস পেটালেন পৌর মেয়রকে

সিরাজগঞ্জের বেলকুচি পৌরসভার মেয়র সাজ্জাদুল হক রেজাকে পিটিয়ে আহত করেছেন স্থানীয় এমপি আবদুল মমিন মণ্ডলের পিএস সেলিম সরকার ও তার দলবল।

গতকাল বৃহস্পতিবার (১৬ মে) বিকেলে পৌরসভার চালা এলাকায় আলহাজ সিদ্দিক উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এ ঘটনা ঘটে। হামলার সময় মেয়রের ২ বছর বয়সি ছেলে ফারিয়েল হকও আহত হয়।

স্থানীয়রা জানান, হামলার ঘটনার ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে গেলে সেলিম সরকারের লোকজনের হাতে লাঞ্ছিত হন স্থানীয় সাংবাদিক আবু মুসা ও পৌরসভার কর্মচারী নাবিন মণ্ডল। হামলাকারীদের সঙ্গে মেয়র রেজার ধস্তাধস্তির সময় তার শিশুসন্তান ফারিয়েল মোটরবাইক থেকে পড়ে যায়। এ সময় শিশুটির শরীরেও কিলঘুষি লাগে। ছবি তোলায় কেড়ে নেওয়া হয় মুসা ও নাবিনের ফোন। নাবিন ও ফারিয়েলকে বেলকুচি উপজেলা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

ঘটনাস্থলে থাকা আলহাজ সিদ্দিক উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেহেদী মাসুদ বলেন, ‘সম্প্রতি বিদ্যালয়ের সভাপতি ও কমিটির বিরুদ্ধে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড বরাবর স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্যাডে একটি অভিযোগ করা হয়। অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের একটি দল বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়ে যায়। তারা আসার ৫ মিনিটের মধ্যে এমপির পিএস সেলিম ও তার লোকজনও বিদ্যালয়ে আসেন। এতে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষ লোকে ভরে যায়। পরে অন্য একটি কক্ষে তদন্ত কার্যক্রম চলে। উভয়পক্ষের সঙ্গে তদন্ত কমিটি কথা বলে। তদন্ত শেষে বোর্ডের কর্মকর্তারা চলে যাচ্ছিলেন। এ সময় এমপির পিএস সেলিম ও তার দলবলও বের হয়ে যান। বের হয়ে যাওয়ার সময় পিএস সেলিমের লোকজন পৌরসভার কর্মচারী নাবিনকে মারধর করেন।’

প্রধান শিক্ষক আরো বলেন, ‘একপর্যায়ে নাবিন অচেতন হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এ সময় আবু মুসা নামে স্থানীয় সাংবাদিক ছবি তুলতে গেলে তাকেও মারধর করা হয় এবং তার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয় মোবাইল ফোন। এ সময় মেয়র স্কুলে এলে তাকেও মারধর করা হয়।’ স্থানীয় সাংবাদিক আবু মুসা বলেন, ‘হামলার সময় ছবি তুলতে গেলে সেলিম সরকার ও তার লোকজন আমার মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে আমাকে মারধর করেন। পরে তারা চলে যাওয়ার সময় আমাকে বলে যানÑ এমপির বাড়িতে এসে মোবাইল নিয়ে যাইস।’

বেলকুচি পৌর মেয়র সাজ্জাদুল হক রেজা বলেন, বিদ্যালয়ের একটি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত শেষে ছেলেকে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে বের হচ্ছিলাম। এ সময় এমপি আবদুল মমিন মণ্ডলের পিএস সেলিম ও তার লোকজন পিস্তল ঠেকিয়ে মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে। এরপর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ইউসুফ আলী, তার ভাই মান্নান, হাফিজুল কমিশনার ও শিপন কমিশনার আমার ওপর হামলা চালান। আমার সঙ্গে থাকা আমার ছেলেকেও মোটরসাইকেল থেকে ফেলে দেন। এ সময় আমার ছেলেকে তুলতে গেলে আমাকে মারধর করা হয়। আমার সঙ্গে থাকা নাবিন ও নারী কাউন্সিলর শাপলার ছেলেকেও পেটানো হয়।

তিনি আরো বলেন, ‘এটা পরিকল্পিত, এমপি মমিন মণ্ডলের নির্দেশেই আমার ওপর হামলা চালানো হয়েছে। হামলার সময় বেলকুচির থানার ওসিকে বারবার ফোন করে বলার পরও তিনি সাড়া দেননি। বাধ্য হয়ে পুলিশ সুপারকে জানালে তিনি ডিবি পুলিশ পাঠান।’ পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে বেলকুচি থানার ওসি মোহাম্মদ আনিছুর রহমানও কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জেলা সদর থেকে অতিরিক্ত ফোর্স এসেছে।’ পুলিশ সুপার মো. আরিফুর রহমান মণ্ডল বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দ্রুত পুলিশ পাঠানো হয়েছে।’

এ বিষয়ে এমপি আবদুল মমিন মণ্ডলের পিএস সেলিম সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি কল রিসিভ করেননি। অপর অভিযুক্ত উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ইউসুফ আলী বলেন, বিদ্যালয়ের কিছু বিষয় নিয়ে তর্ক-বিতর্কের একপর্যায়ে মেয়রের সঙ্গে আমার হাতাহাতি হয়েছে। তবে এ সময় ঘটনাস্থলে এমপির পিএস সেলিম ছিলেন না। এ বিষয়ে জানতে এমপি আবদুল মমিন মণ্ডলের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ না করায় তার কোনো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সিরাজগঞ্জের বেলকুচি পৌরসভার মেয়র সাজ্জাদুল হক রেজাকে পিটিয়ে আহত
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close