reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৬ অক্টোবর, ২০১৯

মাছ চাষে বৈপ্লবিক সাফল্যকে স্বাগতম

কেউ বলছেন ‘সাফল্য’। আবার কেউ বলছেন ‘বিপ্লব’। সাফল্যই বলুন আর বিপ্লবই বলুনÑ মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ যে রেকর্ড সাফল্য অর্জন করেছে, এ নিয়ে বিতর্কের আর কোনো অবকাশ নেই। খাদ্যনীতিবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (আইএফপিআরআই) বলছে, পুকুরে মাছ চাষে সারা বিশ্বে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ। তিন দশক আগে পুকুরে মাছের উৎপাদন হতো ১ লাখ ৭৮ হাজার টন। এখন তা ১২ গুণের বেশি। অভূতপূর্ব এই ঘটনাকে আইএফপিআরআই ‘নীল বিপ্লব’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশের মাছ চাষ নিয়ে চার বছরে সাতটি গবেষণা করেছে আইএফপিআরআই। গবেষণার ফলাফল এটি। গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশের উৎপাদিত মাছের ৫৬ শতাংশই এখন পুকুর থেকে আসছে। দেশে মাছের উৎপাদন গত ৩৪ বছরে ৬ গুণ বেড়েছে। আর পুকুরে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষের ফলে মাছের উৎপাদন বেড়েছে ১২ গুণের বেশি। দেশের প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ এখন মাছ চাষ এবং মাছ ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত। দেশের দারিদ্র্যমোচনের ক্ষেত্রে এই খাতের অবদান শীর্ষ তিনের মধ্যে। কর্মোক্ষম মানুষের ২৩ শতাংশ এখন কোনো না কোনোভাবে মৎস্য খাতের সঙ্গে যুক্ত। এ ছাড়া আরো একটি সুখবর হলো, বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু মাছ খাওয়ার পরিমাণ। ১৯৯০ সালে যা ছিল বছরে সাড়ে সাত কেজি, এখন তা উন্নীত হয়েছে ৩০ কেজিতে।

বাংলাদেশের মৎস্য খাতের এই বিপ্লব বিশ্বের উন্নয়ন অধ্যয়ন নিয়ে কাজ করা গবেষক এবং অর্থনীতিবিদদের ধারণা বদলে দিয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই। বড় উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং অবকাঠামো নির্মাণ ছাড়াও যে দারিদ্র্যবিমোচন ও গ্রামীণ উন্নয়ন হতে পারে, বাংলাদেশ মৎস্য খাত তার প্রমাণ। গ্রামে-গ্রামে ক্ষুদ্রচাষিদের সৃজনশীল উদ্যোগ, সরকারের নীতি-সহায়তা ও বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবন মিলিয়ে এই সফলতা। বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ বলছে, ধানের চেয়ে মাছ চাষে লাভ বেশি। এক একর জমিতে ধান হয় দুই থেকে তিন টন আর এক একর আয়তনের পুকুরে মাছ হয় ৪০ টন। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) প্রকাশিত বৈশ্বিক মৎস্য প্রতিবেদনে বলা হয়, মৎস্য উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম।

আমরা মনে করি, শুধু মৎস্য উৎপাদনেই নয়Ñ অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের উন্নয়ন চোখে পড়ার মতো। অনেক দেশের কাছে আজ তা ঈর্ষণীয়ও বটে। তবে বাংলাদেশের জনগণের জন্য এটি নিঃসন্দেহে গৌরবের। আর এ গৌরব অর্জনের অংশীদার তারাই। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, গৌরব অর্জনের অংশীদার এই বিশাল জনসমষ্টিই চিরকাল বঞ্চিত থেকেছে। তারা তাদের ন্যায্য প্রাপ্যও পায়নি। মধ্যস্বত্বভোগীরাই সবকিছু লোপাট করেছে নানা ধরনের ফন্দি-ফিকিরে। এদের হাত থেকে তৃণমূল চাষিদের রক্ষা করা গেলে বাংলাদেশকে আর কারো পানে চেয়ে থাকতে হতো না। গড়ে উঠত একটি স্বনির্ভর বাংলাদেশ। যার প্রত্যাশায় আমরা তীর্থের কাকের মতো তাকিয়ে আছি আকাশের দিকে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close