reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

সংকীর্ণতা পরিত্যাগ জরুরি

আজ মহান একুশে ফেব্রুয়ারি। বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৫২ সালের এই দিনে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর গুলি চালায় পুলিশ। তৎকালীন পাকিস্তানি স্বৈরশাসকের নির্মম বুলেটে আত্মবিসর্জন দেন বরকত, সালাম, রফিক, শফিক, জব্বারসহ নাম না জানা আরো অনেকে। ভাষার জন্য আন্দোলন ও জীবনদান পৃথিবীর ইতিহাসে এটাই প্রথম। সেহেতু বাঙালি জাতির জন্য এই দিনটি শুধু শোকেরই নয়, আত্মপ্রত্যয়ের দিনও। কারণ একুশে ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানি আধিপত্যবাদী চক্রান্তের বিরুদ্ধে বাঙালির প্রথম বিদ্রোহ। যে বিদ্রোহ বাঙালির হৃদয়ে জাতীয়তাবোধ ও স্বাধিকারের চেতনা জাগ্রত করে। বলতে গেলে সেই চেতনা থেকেই সূচিত হয় বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার ও গণতন্ত্রের আন্দোলন। ১৯৭১ সালে যে আন্দোলন সশস্ত্র যুদ্ধে রূপ নেয়। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে জন্ম নেয় জাতি রাষ্ট্র স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির ইতিহাসে একুশে ফেব্রুয়ারি ও ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব¡ ও তাৎপর্য অনেক। কালের প্রবাহে এটি ভাষা ও জাতীয়তার উন্মেষের স্মারক উৎসবেও পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে এই দিনটি স্বীকৃত হয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। এ স্বীকৃতি দিনটির মর্মবাণীর এক বৈশ্বিক প্রাসঙ্গিকতাও ঘোষণা করছে। আজ যখন সভ্যতা, প্রযুক্তি ও বিশ্বায়নের চাপে পৃথিবীর অসংখ্য ক্ষুদ্র ভাষা বিলুপ্তির মুখে; তখন সব জাতি-গোষ্ঠীর ভাষাকে টিকিয়ে রাখা এবং বিকশিত হওয়ার সুযোগ ও অধিকার নিশ্চিত করার বার্তাটিও এই একুশের মধ্যেই আমরা পেয়ে যাই। কিন্তু এ প্রশ্নটিও আমাদের মনে জাগিয়ে তোলে, মাতৃভাষার যথাযোগ্য অবস্থান, মর্যাদা ও বিকাশ নিশ্চিত করার কাজে আমরা আসলেই কতদূর এগোতে পেরেছি। রাষ্ট্রীয়, শিক্ষাগত ও সামাজিক জীবনের সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন আজও হয়নি। এখনো উচ্চশিক্ষায় বাংলার ব্যবহার সীমিত। আদালতের কর্মকান্ডে এখনো বাংলা ভাষা উপেক্ষিত। সর্বস্তরে বাংলা প্রচলনে আদালতের রায় তিন দশকেও বাস্তবায়িত হয়নি। অনেকেই এ আইন ঢালাওভাবে অমান্য করে যাচ্ছেন। এমনকি বিদেশি শব্দ বা বাংলা-বিদেশি শব্দের মিশেলে রাখা হচ্ছে দোকানপাট ও বিপণিবিতানের নাম। মহান ভাষা আন্দোলন ঘিরে আবেগ-উচ্ছ্বাসের ব্যাপক বহিঃপ্রকাশ ঘটলেও মানা হচ্ছে না বাংলা বানান নীতিমালা। ভাষা আন্দোলনের ৬৭ বছর এবং স্বাধীনতা অর্জনের ৪৮ বছর পরও সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। এক রক্তাক্ত অধ্যায়ের মাধ্যমে অর্জিত যে ভাষা, তার প্রতি এ উপেক্ষার বিষয়টি জাতি হিসেবে আমাদের সংকীর্ণ করে দেয়, এ সংকীর্ণতা কাটিয়ে ওঠা জরুরি।

একুশে ফেব্রুয়ারি এ সময়ে আমাদের বাংলা ভাষা ও বাঙালিত্বের জন্য গৌরববোধ জাগিয়ে তুলুক। বাংলাকে সমাজের সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠা দেওয়া এবং বিশ্বভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নতুন করে অনুপ্রাণিত করুক, সব জাতি-গোষ্ঠীর ভাষা রক্ষা ও বিকাশে উদ্যোগী করুক, সর্বোপরি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক স্বদেশ পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে বলীয়ান

করুকÑ এই আমাদের প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close