reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৮ এপ্রিল, ২০২৪

লবণাক্ততা রোধে নিতে হবে জরুরি পদক্ষেপ

খুলনা অঞ্চলে বছরের পর বছর ধরে খুবই কম বৃষ্টিপাত, উজানের নদী থেকে পানিপ্রবাহ একেবারে কমে যাওয়া এবং বঙ্গোপসাগর থেকে বেশি পরিমাণে পানি ওপরে উঠে আসায় নদ-নদীগুলোতে মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়েছে লবণাক্ততা। নদী-খালের লবণাক্ততা এতটাই বেড়েছে যে এ পানি কোনো কাজে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। বহু আগেই তা সেচের উপযোগিতা হারিয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, উজানে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় নদ-নদীতে পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ায় প্রতি বছরই লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে। উজান থেকে একটি নদী দিয়েই খুলনার নদ-নদীতে পানি প্রবাহিত হয়, যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। অন্যদিকে সাগর থেকে একাধিক নদ-নদীর মাধ্যমে বেশি পরিমাণে লবণাক্ত পানি ওপরে উঠে আসছে। উজানের সামান্য মিঠাপানি সাগরের লবণাক্ত পানিকে মিঠাপানিতে পরিণত করতে পারছে না। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে শুষ্ক মৌসুমে উত্তরাঞ্চলেও লবণাক্ততা বাড়ছে। এতে শুষ্ক মৌসুমে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের উপকূলীয় এলাকায় ফসল উৎপাদন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। লবণাক্ততার কারণে হাতে-পায়ে সাদাটে ঘা, গর্ভকালীন নারীর ভ্রূণ নষ্ট হওয়া, জরায়ু রোগে আক্রান্তসহ নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠে পানির উচ্চতার পাশাপাশি প্রতি বছরে খুলনায় ভূমি অবনমন হচ্ছে ৫.১ মিলিমিটার ও সুন্দরবনে ৪.১ মিলিমিটার। জীবনযাপনে সংকটে বাস্তুভূমি ত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছে অনেকে।

খুলনা লবণাক্ততা ব্যবস্থাপনা ও গবেষণা কেন্দ্রের এক তথ্যে জানা গেছে, গত ৫০ বছরে দেশে লবণাক্ত জমি বেড়েছে প্রায় ২৬.৭ শতাংশ। ২০২২ সালে সর্বশেষ দেশের উপকূলীয় ১৮টি জেলায় চালানো জরিপ অনুযায়ী, ২৮ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে লবণাক্ত জমির পরিমাণ প্রায় ১১ লাখ হেক্টর। এর আগে ২০০০ সালের জরিপে উপকূলের লবণাক্ত জমি ছিল ১০ লাখ ২০ হাজার ৭০০ ও ২০০৯ সালের জরিপে ছিল ১০ লাখ ৫৬ হাজার ২৬০ হেক্টর। চলতি মৌসুমে অতিরিক্ত খরা ও লবণাক্ততার কারণে খুলনার দাকোপ, কয়রা ও পাইকগাছায় সবজি চাষ ব্যাহত হচ্ছে। পর্যাপ্ত পানি না পেয়ে গাছ শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। মৃত্তিকাসম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট প্রতি মাসে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার ৯টি উপজেলার ১৭টি পয়েন্ট থেকে মাটি ও ১৩টি নদীর পানিতে লবণাক্ততা পরীক্ষা করে। মাটি ও পানির লবণাক্ততা পরিমাপ প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ফেব্রুয়ারি থেকে নদীর পানিতে লবণাক্ততা বাড়তে থাকে, মে মাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। অন্যদিকে মাটিতে লবণাক্ততা সবচেয়ে বেশি থাকে এপ্রিলে।

মাত্রাতিরিক্ত হারে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়াটা খুবই চিন্তার বিষয়। বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০-এ বলা হয়, লবণাক্ততা রোধে শুষ্ক মৌসুমে নদীর নিষ্কাশন ক্ষমতা ও মিঠাপানিপ্রবাহ ঠিক রাখতে পদক্ষেপ নিতে হবে। আঞ্চলিক নদী পুনরুজ্জীবিত ও খাল খনন করতে হবে, যাতে লবণাক্ততার মাত্রা ১০ পিপিটিতে পৌঁছানো পর্যন্ত কার্যকারিতা বজায় থাকে। ভূগর্ভস্থ জলাধার থেকে পানি উত্তোলন ব্যবস্থার সম্ভাব্য যাচাই করতে হবে। তবে এলাকাভিত্তিক সমস্যার সমাধান হলেও এ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ উপকূলীয় অঞ্চলের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে না। এ অবস্থায় দীর্ঘমেয়াদি ভূমি ব্যবস্থাপনার কৌশল গ্রহণের মাধ্যমে দেশে খাদ্য সুরক্ষার জন্য ভূমি লবণাক্তকরণ সমস্যার মোকাবিলা করা অতীব জরুরি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close