তরিকুল ইসলাম

  ০৯ মে, ২০২৪

মুক্তমত

নতুন কারিকুলামে ইংরেজি শিক্ষা

ব্রিটিশ উপনিবেশ উপমহাদেশে ইংরেজি শিক্ষায় গুরুত্ব সৃষ্টি করেছে। সূচনা থেকে এর গুরুত্বের সূচক বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এ দেশের অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের শিক্ষাব্যয়ের একটা বড় অংশ ইংরেজি শিক্ষার পেছনে ব্যয় করেন। কিন্তু খরচের অনুপাতিক হারের সঙ্গে তুলনা করলে শিক্ষার্থীরা ইংরেজি ভাষা কতটুকু শিখছে? এই প্রশ্ন শিক্ষার্থী, অভিভাবক, নিয়োগকর্তা, শিক্ষক এবং সরকারের সব মহলের। নিয়োগকর্তাদের প্রায়ই আক্ষেপ করতে দেখা যায় এই বলে, আজকাল লেখাপড়ার কোনো মান নেই। উচ্চশিক্ষাসম্পন্ন একজন যুবক নিজের পরিচয়টুকু বা কাজ চালিয়ে নেওয়ার মতো ইংরেজিটুকু জানে না (আসলে তাকে জানানো হয়নি)।

অনেক সময় বলতে শোনা যায়, কোন প্রতিষ্ঠান/কোন শিক্ষকরা পড়িয়েছে? এমন আপত্তিকর প্রশ্ন করা হয়। আগের কারিকুলাম ছিল ইংরেজি শিক্ষার জন্য এক অন্ধকার যুগের ন্যায়। যেখানে শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে চাপের মধ্যে রেখে কিছু নির্দিষ্ট বিষয় মুখস্থ করানো হতো। যার সঙ্গে বাস্তবতার খুব সামান্যই মিল ছিল। শিক্ষার্থীরা শুধু অ+ বা পাস করার জন্যই কিছু নির্দিষ্ট টপিক মুখস্থ করত। আর তাদের ইংরেজি শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য ছিল যথাসম্ভব গ্রামারের নিয়মকানুন মুখস্থ করা এবং হাস্যকরভাবে এগুলো শনাক্ত করা এবং গঠন গত কিছু পার্থক্য করা। তারা কখনোই ভাষা শিক্ষার জন্য নিবেদিত ছিল না। এই শিক্ষার্থীরা ইংরেজি বলতে লজ্জাবোধ করত, পরিস্থিতি যতই ভয়ংকর হোক মুখ ফুটবে না কিন্তু কলম চলবে। শিক্ষা বোর্ডগুলো এমনভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করত যে, শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীরা এই প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে ভাবার আদৌ কোনো সুযোগ পেত না, এ ক্ষেত্রে তারা অনৈতিক পথ অবলম্বনে পিছপা হতো না, বইয়ের নাম ছিল কামিউনিকেশন ইংলিশ বাস্তবে কামিউনিকেশনের কোনো অস্থিত্ব ছিল না।

একজন শিক্ষক হিসেবে অবাক হই এই ভ্রান্ত পদ্ধতি কীভাবে এত বছর ধরে চলল এবং এর সপক্ষে একটা প্রজন্মকে দাঁড় করানো হলো। বিস্ময়ের শেষ থাকে না যখন দেখি বিভিন্ন পর্যায়ের কিছু শিক্ষক এই ব্যর্থ কারিকুলামের পক্ষে কথা বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় সৃষ্টি করে কিছুটা ভাইরাল হওয়ার আশায়।

এবার নতুন কারিকুলামে ইংরেজি শিক্ষার পদ্ধতি ও উপযোগিতা নিয়ে কিছু আলোচনা করা যাক। ভাষা শিক্ষার মৌলিক চারটি দিক হলো- শোনা-বলা-পড়া ও লেখা। নতুন কারিকুলামে এই চারটি মৌলিক দিকের প্রতি সমান গুরুত্ব দিয়েছে পাশাপাশি ভাষার নান্দনিকতার ওপর আলাদা জোর দেওয়া হয়েছে। বাস্তব জীবনে কোন পরিস্থিতিতে একজন শিক্ষার্থী কোন ধরনের সমস্যায় পড়তে পারে এবং বিভিন্ন পর্যায়ে ভাষার প্রয়োগ সম্পর্কে তাদের ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে। শ্রেণিকক্ষ ও শ্রেণিকক্ষের বাইরে শিক্ষার্থীরা এখন ইংরেজি ভাষা ব্যবহারে উৎসাহিত হচ্ছে। দলগত প্রতিটি কাজের শেষে তাদের উপস্থাপনা করতে হয়। এতে তাদের যোগাযোগের দক্ষতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বলার ক্ষেত্রে ভয় ও জড়তা দূর হচ্ছে। ষষ্ঠ থেকে সপ্তম পর্যন্ত বইয়ে বিখ্যাত লেখকদের লেখাগুলো আকর্ষণীয় ও মজাদার ফলে শিক্ষার্থীরা আনন্দের মধ্য দিয়ে শিখছে। প্রতিটি অভিজ্ঞতার শেষে তাদের ধারাবাহিক মূল্যায়ন করা হচ্ছে ফলে স্বল্প সময়ের মধ্যে শিখন ঘাটতি চিহ্নিত ও পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের বাক্য তৈরির দক্ষতা বৃদ্ধি পাচ্ছে ফলে তাদের মধ্যে লাইন বাই লাইন বাক্য মুখস্থ করার প্রবণতা কমছে।

বাক্য তৈরি করাতে না পারা ইংরেজি ভাষা শেখার ক্ষেত্রে বড় অন্তরায়। শিক্ষার উদ্দেশ্য কখনো প্রথম বা দ্বিতীয় হওয়া বা ৮০ শতাংশের উপায় নম্বর পাওয়া নয়। শিক্ষার উদ্দেশ্য অবশ্যই নৈতিক গুণসম্পন্ন ব্যক্তি সৃষ্টি করা। সাহিত্য সব সময়ই একটা পজিটিভ বার্তা বহন করে, যা শিক্ষার্থীদের মনোজগৎকে আলোড়িত করে এবং তাদের নৈতিক গুণাবলি অর্জনে অন্যতম সহায়ক ভূমিকা পালন করে। নতুন কারিকুলামের ইংরেজি বইগুলোতে উল্লেখযোগ্য হারে সাহিত্য (নাটক, কবিতা, গল্প, রচনা ও উপন্যাস) সংযোজিত হয়েছে ফলে তারা ভাষা শিক্ষার পাশাপাশি অধিক মানবিক গুণসম্পন্ন হচ্ছে। নতুন কারিকুলাম নিঃসন্দেহে অন্ধকার গ্রামার শিক্ষার যুগকে বিদায় জানাবে, কেননা গ্রামার শিক্ষা মানেই ভাষা শিক্ষা নয় এবং জীবনভিত্তিক ইংরেজি শেখার পথ সুগম করে দেবে। তবে আশাবাদী হওয়ার পাশাপাশি কিছু ঝুঁকিও আছে। অন্ধকার সব সময় আলোর চার পাশেই থাকে। ধারাবাহিক মূল্যায়ন সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে কি না, এগুলো দেখার জন্য আরো অধিক দক্ষ জনবল দরকার এবং ঢালাও মূল্যায়নের সুযোগ সৃষ্টি হতে না দেওয়া, শিক্ষকদের পেশাদারিত্ব বৃদ্ধিতে আরো প্রশিক্ষণ ও তার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মনিটরিং হওয়া জরুরি। পাশাপাশি শিক্ষকদের সম্মান, আর্থিক সচ্ছলতা ও সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করা নতুন কারিকুলাম বিশেষ করে ইংরেজি শিক্ষার পরিবর্তনের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য অত্যন্ত আবশ্যক।

লেখক : সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি)

তাসলিমা মেমোরিয়াল একাডেমি, পাথরঘাটা, বরগুনা

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close