reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৯ মে, ২০২৪

হালদার পরিবেশ বিপর্যয় রোধে পদক্ষেপ নিতে হবে

বাংলাদেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ ঘোষিত চট্টগ্রামের হালদা নদী। দেশের অভ্যন্তরীণ মৎস্য চাহিদা পূরণে শত শত বছর ধরে হালদার এই প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্রটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। শুধু বাংলাদেশেই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় ঐতিহ্যবাহী মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্রের নাম হালদা।

হালদা নদীপ্রবাহের প্রাকৃতিক পরিবেশগত নিরাপত্তা বাংলাদেশের মৎস্যসম্পদ ও কৃষি অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হিসেবে গণ্য। লাখ লাখ টন মৎস্যসম্পদ এবং হাজার হাজার মৎস্যচাষির ভাগ্য এই হালাদার প্রাকৃতিক পরিবেশের অক্ষুণ্ণœতার ওপর নির্ভর করছে। অতএব হালদার যেকোনো বিপদের আশঙ্কা দেশের মৎস্যসম্পদ তথা জাতীয় অর্থনীতির জন্যই বিপর্যয় হিসেবে গণ্য করা হবে। এ কারণেই হালদা নদী দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসে। রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলার প্রায় ৯৮ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তীর্ণ নদী হালদা। প্রতি বছরের চৈত্র থেকে আষাঢ় মাসের মধ্যে পূর্ণিমা-অমাবস্যার তিথিতে বজ্রসহ বৃষ্টি হলে পাহাড়ি ঢল নামে হালদা নদীতে। আর তখনই তাপমাত্রা অনুকূলে থাকলে প্রাকৃতিক নিয়মে ডিম ছাড়ে কার্পজাতীয় মাছ। সাধারণত মধ্য এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে হালদায় ডিম ছাড়ে মা মাছ। এবারও হালদায় রুই, কাতল, মৃগেল ও কালবাউস মাছ নমুনা ডিম ছাড়তে শুরু করেছে। গত মঙ্গলবার সকাল থেকে নদীর কয়েকটি পয়েন্টে নমুনা ডিম ছাড়তে শুরু করে মা মাছ। হাটহাজারীর গড়দুয়ারা নয়াহাট, পাতাইজ্জ্যার টেক, সোনাইমুখ, মাছুয়াঘোনা, আজিমারঘাটসহ বিভিন্ন পয়েন্টে নমুনা ডিম পেয়েছেন সংগ্রহকারীরা। দীর্ঘদিন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এপ্রিল মাসে মাছ নদীতে ডিম ছাড়েনি। গত সোমবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া ঝড়ো হাওয়া ও বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের কারণে হালদা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত খাল, ছড়ায় পাহাড়ি ঢল বৃদ্ধি পেয়েছে, শুরু হয়েছে অমাবস্যা। এই জোয়ার ১০ মে পর্যন্ত চলবে। বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হওয়ায় পরিবেশ শিথিলতার কারণে নদীতে ঢল থাকায় মঙ্গলবার সকাল থেকে নদীতে মাছ নমুনা ডিম ছাড়তে শুরু করে।

কিন্তু লক্ষ্যণীয় যে, গত এক দশকের বেশি সময় ধরে অস্বাভাবিক দূষণ ও দখলে হালদার প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্রের অস্তিত্ব ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। সেই সঙ্গে হালদার দূষণ রোধসহ এর নিরাপত্তায় সরকারের নানা উদ্যোগের পাশাপাশি পরিবেশবাদী, বিশেষজ্ঞ ও নাগরিক সমাজকেও যথেষ্ট সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে দেখা যাচ্ছে। তবে একের পর এক নানা বিপর্যয় ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যেন হালদার পিছু ছাড়ছে না। একদিকে অপরিকল্পিতভাবে হালদার বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা শিল্প-কারখানার দূষণ ও দখলে বিপর্যস্ত, অন্যদিকে হালদায় যান্ত্রিক নৌযান ও ট্রলার চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও প্রায়শই ট্রলারের পাখার আঘাতে ডিমওয়ালা মা মাছের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি নৌবাহিনী, কোস্টগার্ডসহ জাতীয়ভাবে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। হালদায় ডিম সংগ্রহের সময়কাল সম্পর্কে সব ধরনের বিভ্রান্তি দূর করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞদের আরো সতর্কভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

হালদা রক্ষায় জরুরি উদ্যোগ না নিলে জাতীয়ভাবে আমরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবো। তাই এশিয়ার সর্ববৃহৎ প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননকেন্দ্র হালদা নদীকে পরিবেশ বিপর্যয় ও কিছু অসাধু চক্র থেকে রক্ষার্থে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close