reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১০ মে, ২০২৪

গরু মোটাতাজাকরণ বন্ধ করতে হবে

মুসলমানদের দ্বিতীয় প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা অর্থাৎ কোরবানির ঈদ আর মাস দেড়েক পরেই। এই ঈদকে ঘিরে দেশজুড়ে পশু বেচাকেনার হিড়িক পড়ে যায়। ঈদের এক থেকে দুই সপ্তাহ আগে থেকেই চলে গরু, মহিষ, ছাগলসহ বিভিন্ন ধরনের পশু বেচাকেনা। বিশেষ করে দেশে কোরবানি করার জন্য গরুকেই প্রাধান্য দেওয়া হয় বেশি।

পছন্দের তালিকায় গরু শীর্ষে থাকে বলেই এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। অধিক মুনাফা লাভের আশায় স্বল্প সময়ে বেশি মোটাতাজা করতে তারা গরুকে খাওয়ায় নানা ধরনের মোটাতাজাকরণ ট্যাবলেট এবং মাংসপেশিতে প্রয়োগ করেন নিষিদ্ধ ইনজেকশন। যা গরু এবং মানুষ উভয়ের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ঈদের এক থেকে দেড় মাস আগেই গরু মোটাতাজা করার জন্য খামারিরা কিছু অসাধু পল্লী চিকিৎসকের পরামর্শে স্টেরয়েড গ্রুপের বিভিন্ন নিষিদ্ধ ওষুধ ব্যবহার করে থাকেন। কৃত্রিমভাবে গরুর মাংসপেশিতে ভারতীয় ডেক্সামেথাসন ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয় এবং খাওয়ানো হয় স্টেরয়েড গ্রুপের বিভিন্ন ট্যাবলেট। এ ট্যাবলেট খাওয়ালে গরুর প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যায়, ফলে শরীরে পানি জমতে শুরু করে। ফলে গরু মোটাতাজা দেখায়। এ গরু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জবাই না করলে মারাও যেতে পারে, অথবা শরীরের মাংস কমে যেতে পারে। এমন গরুর মাংস মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। কারণ এসব ওষুধ তীব্র তাপেও নষ্ট হয় না। ফলে মানবদেহে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে। এসব গরুর মাংস খেলে মানুষের কিডনি, লিভারসহ বিভিন্ন অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমনকি ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে।

শুধু স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধই নয়, গবাদিপশু মোটাতাজাকরণে নানা অসাধু উপায় অবলম্বন করে থাকেন ব্যবসায়ীরা। অথচ পশুর সুষম খাদ্যই হলো খড় এবং ঘাস। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রতিদিনের সংবাদ থেকে জানা যায়, গাজীপুরের শ্রীপুরের বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বিভিন্ন কারখানার উচ্ছিষ্ট ও পরিত্যক্ত তুলা। তুলা খেলে দ্রুত সময়ের মধ্যে গরু মোটাতাজা হয়। এতে খামারিরা সাময়িক লাভবান হলেও, পশুর স্বাস্থ্যহানি ও মৃত্যুঝুঁকিও বাড়ছে। ওইসব পশুর মাংস খেয়ে হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে মানুষের স্বাস্থ্যও। স্থানীয়দের মধ্যে এখনো সচেতনতা তৈরি না হওয়া ও গোখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় দিন দিন বাড়ছে এর ব্যবহার। অনেকেই তুলা খাবার হিসেবে ব্যবহার করলে গবাদিপশুর স্বাস্থ্য ভালো হয় এমন ভ্রান্ত ধারণা থেকেও এ ধরনের খাবার ব্যবহার করছেন। শিল্পায়নের ফলে কৃষিজমি কমে যাওয়ায় গবাদিপশুর খাদ্যের সংকট দেখা দিলে তুলাকে বেছে নেওয়া হয় গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে। এতে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠা গরুগুলো কখনো কখনো অসুস্থ হয়ে মারা যায়। গোখাদ্য হিসেবে কারখানার উচ্ছিষ্ট, পরিত্যক্ত তুলা বন্ধ না হলে পশুর স্বাস্থ্য ও মানব স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে পড়বে। এটি বন্ধে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো দরকার বলে মনে করেন সচেতন মহল। গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে এসব পরিত্যক্ত ক্ষতিকারক তুলা কম দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি ও মজুদ রাখারও অভিযোগ উঠেছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে।

অবৈধ উপায়ে গরু মোটাতাজারকরণ বন্ধ করতে সরকারের পক্ষ থেকে নজরদারি বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে আমাদের নিজেদেরও সচেতন হতে হবে। সবার সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে একদিকে যেমন কোরবানির বিশুদ্ধতা ও পবিত্রতা রক্ষা করা যাবে, অন্যদিকে জনসাধারণের স্বাস্থ্য রক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করা সম্ভব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close