মোতাহার হোসেন

  ১৯ নভেম্বর, ২০১৮

বিশ্লেষণ

‘হাসিনা : এ ডটারস টেল’

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন গৃহিণী। এসব পরিচয়ে শেখ হাসিনাকে নতুন করে চিনিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। পাশাপাশি তিনি একজন সাধারণ বাঙালি গৃহবধূ থেকে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজকের এই অবস্থানে। সব মিলিয়ে তিনি আমাদের প্রধানমন্ত্রী, তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি, তিনি উন্নয়নের কান্ডারি, তিনি মানবতা ও শান্তির দূত। তিনিই আমাদের আশা-ভরসার একমাত্র আশ্রয়স্থল। তিনি বিশ্বে বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় ও সম্মানের আসনে নিয়ে গেছেন। তাকে নিয়ে নির্মিত ডকু ফিল্ম ‘হাসিনা : এ ডটারস টেল’ আমাদের ইতিহাসের অন্যতম অনুষঙ্গ। আগামী প্রজন্ম এ থেকে অনেক কিছুই জানতে ও দেখতে পারবেন।

কিন্তু রাজনীতিবিদ আর রাষ্ট্রনায়কের অন্তরালে থাকা শেখ হাসিনার গল্প অনেকটাই অজানা; এক রাতেই বাবা-মা-ভাইদের হারিয়ে নির্বাসিত জীবনে বুকের গভীরে কষ্ট চেপে কীভাবে আবার ঘুরে দাঁড়ালেন তিনি; সেই সংগ্রামের কথা খুব কম মানুষই জানে। শেখ হাসিনার সেই অজানা-অদেখা গল্পগুলোই ‘হাসিনা : এ ডটারস টেল’-এর উপজীব্য। গত শুক্রবার প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে এই ডকু-ড্রামাটি। তার আগে বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রিমিয়ার প্রদর্শনী। এটি দেখে অনেকেই কেঁদেছেন, অনেকেই অতীত ইতিহাসের সন্ধানে নিমগ্ন হয়েছেন। আবার অনেকেই ভাবনার জগৎকে প্রসারিত করেছেন। প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণের কারণ এবং নির্মাণ করতে গিয়ে নানা অভিজ্ঞতা নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন প্রযোজক সিআরআইয়ের কর্মকর্তা সাব্বির ও নির্মাতা পিপলু খান। এই ডকু-ড্রামা প্রসঙ্গে সাব্বির বলেন, ‘আমরা শেখ হাসিনাকে বহুবার দেখেছি রাজনীতির মঞ্চে। তাকে হাসতে দেখেছি, কাঁদতে দেখেছি। কিন্তু কখনো একান্ত নিভৃতে বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে শেখ হাসিনাকে দেখিনি। ‘আমরা তার গল্পটা জানি না। পরিবারের সবাইকে হারিয়ে একা এতগুলো দিন সেই ভীষণ কষ্টের বোঝা একা বয়ে চলেছেন যিনি, তারও তো একটা গল্প আছে। এই ডকুমেন্টারিতে সেই অদেখা মানুষটার অন্য জীবনের গল্প জানবে সবাই।

নির্মাতা পিপলু খান বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা, যার জীবনে এত উত্থান-পতন রয়েছে, আমার কাছে মনে হয়েছে আমি কী করে এই ছবিটাকে আরো বিস্তৃত পরিসরে তুলে ধরতে পারি। আমাকে খুব স্বাভাবিকভাবেই আকর্ষণ করেছে তার জীবনের উত্থানের গল্প। শেখ হাসিনাকে নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণে খুব স্বাভাবিকভাবেই এসেছে বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তার সম্পর্ক, তার সংস্পর্শে বেড়ে ওঠা, বাবার রাজনৈতিক আদর্শের প্রতি তার অবিচল আস্থা ও বিশ্বাসের বিষয়টি।

পিপলু আরো বলেন, ‘তা ছাড়া শেখ রেহানার কথাও এখানে খুব স্বাভাবিকভাবে চলে আসে। কারণ তারা দুই বোন হরিহর আত্মা। পরস্পরের জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহচার্য পাওয়ার কথাও ওঠে আসে পিপলুর কথায়, ‘যখন প্রথম কাজ করি, তাকে জানিয়েছিলাম, আপনাকে আপা বলতে চাই। আমি আমার চারজন বোনের সঙ্গে বড় হয়েছি। আমার মনে হয়েছে তাকে নিয়ে একটা ডকুমেন্টারি করতে হলে তার সঙ্গেও আমার সম্পর্কের একটা জায়গায় যেতে হবে। আমি তাকে (শেখ হাসিনা) জানিয়েছিলাম, আপনার কিচ্ছু করতে হবে না। কেবল মনে করবেন, আমি আপনার একজন ভাই। প্রথম দুই বছর তিনি আমাকে ‘এই ছেলে’ বলে ডাকতেন। তারপর ধীরে ধীরে তিনি আমাকে পিপলু নামে ডাকতে শুরু করেন। এটিও একজন রাষ্ট্রনায়কের সহজ সরলতার পরিচায়ক।

প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণ করতে গিয়ে নানা অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে পিপলু বলেন, ‘১৪ দিন ৩২ নম্বরে শুটিং হয়েছে। খেয়াল করলাম, সেখানে দেখার মতো কত কিছু আছে! অথচ যেই পরিবারটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার অবিচ্ছেদ্য অংশ, সেই সম্পর্কে আমরা কতটুকু জানি? ‘ঠাকুর বাড়িতে কী রান্না হতো, সেটা আমরা জানি, অথচ জাতির জনকের স্ত্রীর নাম রেণু, এটা আমার ছেলে জানে না কেন? সুলতানা কামাল কত সুন্দর করে শাড়ি পরতেন, এটা আমাদের মেয়েরা ফলো করে না কেন? খুব সাধারণ বিষয় মনে হতে পারে, তবু আমাদের একটা রিসার্চ টিম ছিল। ডকুমেন্টারিতে তারা অনেকগুলো বিষয়কে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে তুলে এনেছেন।’

গত ২৮ সেপ্টেম্বর ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭২তম জন্মদিন। এদিন হুট করেই ‘হাসিনা, এ ডটারস টেল’ শিরোনামের এই ডকুমেন্টারির ট্রেলার ইন্টারনেটে প্রকাশ করা হয়। যেটি দেখার পর বেশ চমকিত হন দর্শক-সমালোচকরা। চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট থেকে শুরু করে সংসদ সদস্য, মন্ত্রী ও রাজনীতিকরা তাদের ফেসবুক, টুইটার ও ইনস্টাগ্রামে তা শেয়ার করেন। সবাই পুরো তথ্যচিত্রটি দেখার অপেক্ষায় ছিলেন।

আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) ও অ্যাপেলবক্স ফিল্মসের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হয় এই ডকু-ড্রামাটি। এ প্রসঙ্গে পিপলু জানান, সব মিলিয়ে আমাদের পাঁচ বছরের পরিশ্রমে এ প্রামাণ্য ছবিটি বানাতে পেরেছি। যদিও শুরুতে এমন কিছু করার কথা ভাবিনি। আমরা চেয়েছি প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মগুলো ধারণ করে রাখব। দুই বছর পরে এসে মনে হলো, এটা নিয়ে অসাধারণ কিছু করা যায়। কারণ, প্রধানমন্ত্রীর পুরো জীবন এত বেশি ড্রামাটিক, সেটা সবাই জানেন। এখানে আমি তার জীবনের সেই ছোট গল্পগুলো এক সুতোয় বাঁধার চেষ্টা করেছি।’ ‘হাসিনা, এ ডটারস টেল’ ডকুফিল্মটির দৈর্ঘ্য ৭০ মিনিট। যেখানে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও তার পরিবারের সদস্যদের দেখা যাবে। ওঠে আসবে শেখ হাসিনার সাধারণ জীবনের অসাধারণ সব মুহূর্ত। যেখানে তিনি কখনো মেয়ে, কখনো মা, কখনো বোন আবার কখনো আমজনতার নেত্রী হিসেবে দেখা দেবেন। নির্মাতাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্লোরিফাই করতে নয়। কোনো রাজনৈতিক বিষয়কে বিবেচনায় নিয়েও নয়, বরং একটি দেশের ইতিহাসের একটি সময়কে ৭০ মিনিটে তুলে আনতে চেষ্টা করা হয়েছে।’

সিআরআইয়ের ব্যানারে প্রামাণ্যচিত্রটির প্রযোজক ছিলেন রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও নসরুল হামিদ বিপু। প্রামাণ্যচিত্রটির সংগীতায়োজনে ছিলেন দেবজ্যোতি মিস্ত্র, সিনেমাটোগ্রাফিতে সাদিক আহমেদ, সম্পাদনা করেছেন নবনীতা সেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে এই আয়োজন জাতির ইতিহাসের একটি উল্লেখযোগ্য উপাদান হিসেবে ভবিষ্যৎ প্রজম্মের কাছে সমাদৃত হবেÑএ প্রত্যাশা করছি।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close