ড. মো. এমরান হোসেন

  ১৬ জানুয়ারি, ২০১৮

মতামত

জঙ্গিবাদ মুসলিমবিশ্বের ক্যানসার

মুসলমান জাতি একসময় প্রত্যক্ষভাবে অর্ধ পৃথিবী এবং পরোক্ষভাবে পুরো পৃথিবী শাসন করেছিল। তখন মুসলমান জাতি ছিল বিশ্বনন্দিত। কিন্তু সন্ত্রাসবাদের কারণেই সেই বিশ্বনন্দিত জাতি বর্তমানে বিশ্বনিন্দিত জাতিতে পরিণত হয়েছে। শাসক জাতি আজ পরোক্ষভাবে অমুসলিমদের দ্বারা শাসিত, নির্যাতিত, নিষ্পেষিত ও নিপীড়িত জাতিতে পরিণত হয়েছে।

জীবে দয়ার প্রবক্তা বৌদ্ধ জাতির জন্য অন্য যেকোনো জীব হত্যা মহাপাপ কিন্তু রাখাইন প্রদেশের রোহিঙ্গা মুসলমানদের হত্যা করা তাদের জন্য বৈধ হয়ে গেছে। সন্ত্রাসকে পুঁজি করেই তারা মুসলমান নারী, পুরুষ ও শিশুকে হত্যা করে। মা ও বোনদের ধর্ষণের মহা-উৎসব করে। সংখ্যালঘুু মুসলমানদের নিধনের কাজে মেতে ওঠে।

সমগ্র মুসলিমবিশ্ব আজ অমুসলিমদের ষড়যন্ত্রের শিকার। বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো মুসলমানদের নিয়ে আজ খেলা শুরু করেছে। তারা সাপ হয়ে কামড় দিচ্ছে, অন্যপক্ষে ওঝা হয়ে ঝাড়ফুঁক দিচ্ছে। মুসলমান রাষ্ট্রগুলো খেলার মাঠ, আর মুসলামানরা ফুটবল। একদিকে লাথি খেয়ে গড়াতে গড়াতে অন্যদিকে যায়। আবার সেদিক থেকে লাথি খেয়ে আরেক দিকে আসে। দুই ভাবে অমুসলিমরা লাভবান হচ্ছে। এক. তাদের দৃষ্টিতে তাদের চিরশত্রু মুসলমানরা নিধন হচ্ছে। দুই. অস্ত্র বিক্রি করে তারা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে। তা ছাড়া তাদের জন্য নিষ্প্রয়োজনীয় ও পুরোনো অস্ত্রগুলো বিক্রি করে তাদের অস্ত্রাগারে নতুন অত্যাধুনিক অস্ত্র রাখার জায়গা তৈরি করছে।

খবরের কাগজে চোখ পড়লেই বা টিভির পর্দা উন্মোচন করলেই দেখা যায় ওমুক রাষ্ট্রে আত্মঘাতী বোমা হামলায় এতজন লোক মারা গেছে। যারা মারছে এবং যারা মরছে তারা সবাই মুসলমান। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্যপুষ্ট হয়ে যখন তালেবানরা রাশিয়াকে বিতাড়িত করেছিল, তখন তৎকালীন সময়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সদর্পে বলেছিলেন আমরাই রাশিয়াকে তাড়ালাম। তারাই আবার লাদেন নামক নায়ক তৈরি করে নাটক সাজালো এবং হাজার হাজার মুসলমান নিধন করল। অনেকের ধারণা, তাদের মদদপুষ্ট হয়েই মধ্যপ্রাচ্যে আইএস নামক জঙ্গি সংগঠন তৈরি হয়েছে। তারা সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চায়। তাদের সঙ্গে আছে সৌদি আরবসহ কতিপয় রাষ্ট্র। অন্যপক্ষে বাশার আল আসাদের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েছে অপর পরাশক্তি রাশিয়া। তাদের সঙ্গে আছে ইরানসহ আরো কতিপয় রাষ্ট্র। এই খেলায় গত কয়েক বছরে প্রায় তিন লাখ মুসলমান মৃত্যুবরণ করেন। কতজন আহত হয়ে আহাজারি করছে বা কতজন চির পঙ্গুত্ববরণ করেছে তার হিসাব নেই।

ক্লাস অব সিভিলাইজেশন তথা সভ্যতার সংঘাতে মুসলমানরা কুপোকাত। সন্ত্রাস দমনের নামে অমুসলিমরা আসলে মুসলিম সভ্যতাকে নিশ্চিহ্ন করতে চাচ্ছে। অমুসলিমরা প্রত্যক্ষভাবে ক্রুসেডের ঘোষণা দিয়ে কলঙ্কের বোঝা বহন করতে চাচ্ছে না। মূলত মনস্তাত্বিকভাবে তারা ক্রুসেড চালিয়ে যাচ্ছে। এ সংকটকালে একজন মহানায়কের প্রয়োজন ছিল যার ছায়াতলে মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে উত্তরণের পথ খুঁজবে।

মুসলিম বিশ্ব আজ শতধা বিভক্ত। রাষ্ট্রপ্রধানরা বা ক্ষমতাসীন দলগুলো নিজেদের গদি রক্ষার জন্য শশব্যস্ত। মুসলিম জাতি নিয়ে ভাবার তাদের সময় নেই। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য একদল যখন এক অমুসলিম রাষ্ট্রের কাছে যায়, তখন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আর এক দল অন্য এক অমুসলিম রাষ্ট্রের কাছে ধরনা দেয়। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর স্বকীয়তা বলতে কিছুই নেই। সৌদি আরব আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে খুশি করার জন্য বিপুল পরিমাণ সম্পদ উপহার দেয়। অথচ তারা মুসলিম বিশ্বকে নিয়ে তেমন কোনো চিন্তা করে না। মুসলিম জাতিকে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বলিয়ান করার জন্য উক্ত অর্থ খরচ করলে আমরা খুশি হতাম।

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের পথ পরিহার করে সব মুসলমানের ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার। সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ সঠিক পথ নয়। এতে মুসলমানদের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি পাবে না, এ পথে চলতে থাকলে জাতি হিসেবে মুসলমানরা টিকে থাকতে পারবে না। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের পথ পরিহার করে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পথে এগোতে হবে। আমাদের রাজনীতিবিদদের উচিত ভেদাভেদ ভুলে এক টেবিলে বসে সব সমস্যার সমাধান করা এবং অমুসলিমদের প্রেসক্রিপশন ছুড়ে ফেলা। তাদের উচিত আত্মকেন্দ্রিকতা পরিহার করে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশকে এগিয়ে নেওয়া।

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মুসলমানদের জন্য বিষফোঁড়ায় পরিণত হয়েছে। এ বিষফোঁড়ার ব্যথায় সমগ্র মুসলিম বিশ্ব আজ টনটন করছে। এ যেন ক্যানসারে রূপ নিয়েছে, যে রোগ থেকে আরোগ্যের কোনো পথ মুসলমানদের সামনে নেই মনে হচ্ছে।

ও হে মুসলমান! ও হে ভ্রান্ত পথের পথিক! ফিরে এস শান্তির পথে, ফিরে এস মানবতার পথে, ফিরে এস মানুষকে ভালোবাসার পথে। ছুড়ে ফেল বোমা, ছুড়ে ফেল সব আগ্নেয়াস্ত্র। ধারণ কর জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অস্ত্র। আত্মসমর্পণ কর ইসলামের শান্তির বাণীর কাছে। ইসলামের অমীয় বাণী নামক অস্ত্র ধারণ করে মুসলমানের আত্মশুদ্ধির কাজে ঝাঁপিয়ে পড়। ডুবে যাও জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তি চর্চার সাগরে। বোমা বানানোর মেধাকে কাজে লাগাও মানবতার কাজে আসবে এমন কিছু আবিষ্কারে। যাতে মুসলমানকে কোনো কিছুর জন্য অমুসলিমদের কাছে দ্বারস্থ ও ধারস্থ হতে না হয়।

লেখক : শিক্ষক ও গবেষক

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist