মুসাদ্দিকুল ইসলাম তানভীর, বাকৃবি

  ২৯ জানুয়ারি, ২০২৪

বাংলাদেশে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার ৬ দশক

বাংলার ইতিহাসের বিখ্যাত প্রায় সব ব্যক্তির মধ্যে একটি বিষয়ের মিল পাওয়া যায়। জীবনের কোনো না কোনো সময়ে তারা পত্রিকা সম্পাদনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। অর্থাৎ বহু বছর আগে থেকেই পত্রিকা তথাপি সাংবাদিকতার সঙ্গে বাঙালির বুদ্ধিজীবী শ্রেণির সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে।

সালটা ১৯৬৩। বাংলাদেশে তখন মাত্র তিনটি বিশ্বিবদ্যালয়। উচ্চশিক্ষা, মুক্ত জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তখনো সাংবাদিকতার অনুশীলন সেভাবে শুরু হয়নি। ঠিক সে সময় আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (বাকৃবিসাস)। দেশের প্রথম ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের সংগঠন হিসেবে শুরু হয় পথচলা। কালের পরিক্রমায় মাস, বছর, দশক, যুগ পেরিয়ে বাকৃবিসাস তার গৌরবময় হীরকজয়ন্তী পূর্ণ করে ফেলেছে। এরই সঙ্গে বাংলাদেশে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার ছয় দশকও পূর্ণ হয়ে গেল।

কৃষিপ্রধান এই দেশে প্রযুক্তিনির্ভর চাষাবাদ এবং কৃষি অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)। কৃষিশিক্ষা, কৃষিবিষয়ক উচ্চতর গবেষণা এবং কৃষি সম্প্রসারণ-ই ছিল বাকৃবি প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্দেশ্য। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঠিক দুই বছর পরই জন্ম হয় বাকৃবি সাংবাদিক সমিতির। প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি শাহ মো. রেজাউল করিম চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক তপেন্দ্র চৌধুরীর হাত ধরে শুরু হয় হাঁটি হাঁটি পথচলা।

দেশের কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সূচনালগ্ন থেকেই কাজ করে যাচ্ছে বাকৃবি সাংবাদিক সমিতি। এ সময় বাকৃবির নানামুখী গবেষণামূলক তথ্য প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকের কাছে পৌঁছিয়ে দিয়েছেন বাকৃবি সাংবাদিক সমিতির সদস্যরা। সাংবাদিকতাবিষয়ক প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা না থাকার পরও নিজেদের অধ্যবসায় আর একাগ্রতায় তারা নিজেদের নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। তবে এই যাত্রা এতটাও সহজ ছিল না কখনোই। একটা সময় ছিল যখন প্রতিটি সংবাদ হাতে-কলমে লিখতে হতো। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রপ্রকৌশল শাখার টেলিফোন এক্সচেঞ্জ কার্যালয়ের ফ্যাক্স মেশিন দিয়ে সংবাদগুলো ঢাকার কার্যালয়ে প্রেরণ করতে হতো। সে সময় ফিল্ম ক্যামেরার প্রচলন ছিল। যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন কোনো ঘটনার ছবি পাঠানোর প্রয়োজন হতো, তখন ময়মনসিংহ শহরের কোনো স্টুডিও থেকে ছবি ওয়াশ এবং প্রিন্ট করে সংবাদের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হতো এবং সংবাদসহ ছবিটিকে খামবন্দি করে পত্রিকা অফিসে পাঠাতেন সাংবাদিকরা। সমিতির পক্ষে একজন প্রতিনিধিকে ঢাকা যেতে হতো, প্রতিনিধি প্রতিটি সংবাদপত্রের অফিসের বার্তা বিভাগে গিয়ে সেসব খাম পৌঁছে দিয়ে আসতেন।

যুগের আধুনিকায়নে সাংবাদিকতা যেমন হয়েছে সহজ, তেমনি পেয়েছে গতি। ক্যামেরা, ইন্টারনেট, স্মার্টফোনের যুগে দেশের সবস্তরের মানুষের কাছে দ্রুত তথ্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য অনলাইন সাংবাদিকতা, মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতাও করছে বাকৃবি সাংবাদিক সমিতির সদস্যরা।

বাকৃবিসাসের ৬০ বছরপূর্তি উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ছাত্রবিষয়য়ক উপদেষ্টা, ছয় অনুষদের ডিন, শিক্ষক, শুভাকাঙ্ক্ষী, বাকৃবিসাসের প্রাক্তন সদস্যসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা।

হীরকজয়ন্তী উপলক্ষে বাকৃবিসাসের ছিল একাধিক আয়োজন। গত ২৬ ডিসেম্বর কেক কেটে হীরকজয়ন্তী উদযাপন করেন সংগঠনটির বর্তমান ও প্রাক্তন সদস্যরা। একই সময় মোড়ক উন্মোচন করা হয় হীরকজয়ন্তী উপলক্ষে প্রকাশিত বিশেষ স্মরণিকা ‘হীরক’র। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী, আজকের পত্রিকার সম্পাদক অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান, ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো হারুন-অর-রশিদ, গ্র্যাজুয়েট ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের (জিটিআই) পরিচালক অধ্যাপক ড. বেনতুল মাওয়া, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আসলাম আলী, জিটিআই অধ্যাপক ড. মাছুমা হাবিব, ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফাতেমা হক শিখা, অধ্যাপক ড. মো নূরুল হায়দার রাসেল, অধ্যাপক ড. আরিফ হাসান খান রবিন, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ম্যাথমেটিকস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মেছবাহ উদ্দীন, পোলট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সুবাস চন্দ্র দাস প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান বলেন, সাংবাদিকতা পেশা বেশ চ্যালেঞ্জিং। এর সঙ্গে জ্ঞানের গভীরতার প্রতি লক্ষ রাখতে হবে। কৃষি খাতের উন্নতির ফলেই বাংলাদেশের এত বিশাল জনগণের খাদ্যের জোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। দেশের ধারাবাহিক উন্নয়নে কৃষি খাত, বাকৃবি ও কৃষিবিষয়ক ইনস্টিটিউট দেশের জন্য যে অবদান রাখছে, তা আমরা জাতির সামনে সেভাবে তুলে ধরতে গণমাধ্যমের ভূমিকা বিস্তৃত।

উপাচার্য ড. এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, হীরকজয়ন্তীতে বাকৃবিসাসের সদস্যদের প্রাণঢালা শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অর্জন জাতির কাছে তুলে ধরায় বাকৃবিসাসের সদস্যদের কৃতজ্ঞতা জানান। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়কে সেবা প্রদান করায় বাকৃবিসাসের সদস্যদের আগামীর জন্য সাফল্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close