সিদরাতুল মুনতাহা, জবি

  ২৮ এপ্রিল, ২০২৪

সংশয়ে নারীর সংকল্প যেন টলে না যায়

‘সংশয়ে সংকল্প সদা টলে/পাছে লোকে কিছু বলে’- পঙক্তিটি নারীজাগরণের কবি কামিনী রায়ের। বাক-স্বাধীনতা থাকলেও কথা বলার সাহসিকতার অভাবে ভুগে বেশির ভাগ নারীই, মন যা চায় সেটা করতে এখনো দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকে তারা, তথাকথিত সম্মানের ভয়ে সমাজ নামক দেয়ালের মধ্যে চেপে থাকি আমরা। এভাবেই আমাদের অঙ্কুরিত সাহসী চিন্তা থাকলেও সেগুলো সমাজ-রাষ্ট্রের নিয়মের জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে মরে যায় প্রতিনিয়ত।

‘লোকে কী বলবে’ এই তথাকথিত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আমাদের নারীসমাজ কতটা বের হতে পেরেছে এই প্রশ্নটি থেকেই যায়। দৃঢ়সংকল্প বা সাহসী চিন্তা করতেও এই মধ্যযুগীয় মানসিকতা আজকের নারীদের বাধাপ্রাপ্ত করেই চলেছে। কিংবা সাহসী চিন্তা করতে পারলেও সেটার বাস্তবিক রূপ দিতে এখনো সংশয়ে ভুগছে বেশির ভাগ নারী।

আজ সমগ্র বিশ্ব যখন নারীর অধিকার নিয়ে আন্দোলন, নারীর সর্বস্তরে অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ, নারী-পুরুষের সমতা নিয়ে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ, আইন পাস ও বাস্তবায়নের জন্য লড়ে যাচ্ছে, সেখানে নারীর অগ্রগতিতে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হিসেবে নারীই দাঁড়িয়ে রয়েছে। নারী হয়েই অন্য নারীকে উপেক্ষা, হিংসা কিংবা ছোট করা থেকে বিরত নেই অনেক নারী। কয়েকটি বিষয় উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ না করলেই নয়, স্কুলের সহপাঠীদের মধ্যে দেখা যায়, একজন মেয়ে সহপাঠী অন্য মেয়ে সহপাঠীর প্রতি লেখাপড়ায় ততটা সাহায্যপূর্ণ মনোভাব পোষণ করে না যতটা একজন ছেলে সহপাঠীর আচরণে প্রকাশ পায়। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের অভিভাবক মায়েদের মধ্যেও যেন মৌন প্রতিযোগিতা লেগেই থাকে। অভিভাবক মায়েদের এই প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব সন্তানদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এ ছাড়া কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়তে থাকলেও সেখানে নারীর সঙ্গে নারীরই প্রতিযোগিতা দেখা যায় বেশি। নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠার চেষ্টার থেকে বেশি নারীর দ্বারা নারীকেই পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টাটাই বেশি পরিলক্ষিত হয় বর্তমান বিশ্বে।

বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে লক্ষ করা যায়, গত কয়েক বছরে নারীর ক্ষমতায়ন এবং সর্বস্তরে নারীর অংশগ্রহণে মাইলফলক অর্জন করেছে বাংলাদেশ। নারীশিক্ষার প্রসার ও নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী বর্তমান সরকার সমাজ ও রাষ্ট্রে নারীর অবস্থানে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু প্রত্যন্ত অঞ্চল ও হতদরিদ্র পরিবারের নারীদের মধ্যে সংশয়-সংবলিত মানসিকতা এখনো পরিবর্তন হয়নি। কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করার সাহসী মনোভাব তাদের মধ্যে উন্নীত হয়নি এখনো।

নারীরাই পারে নারীদের সর্বস্তরে অংশগ্রহণে উজ্জীবিত ও উৎসাহিত করতে। তাই সর্বদা এটাই প্রত্যাশা, নারীই যেন নারীর অগ্রগতিতে অন্তরায় না হয়ে ওঠে বরং মানসিকভাবে পিছিয়ে থাকা সংশয়-সংবলিত নারীদের সর্বস্তরে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নারীরাই যেন এগিয়ে আসে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close