reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৭ মে, ২০২৪

ববির পলাশফুলের সৌন্দর্য যেন নক্ষত্রের ঝলকানি

ঋতুরাজ বসন্তে প্রকৃতি নতুন রূপে সাজে। পাখির ডাক আর নদীর কলকল ধ্বনির মতো সৌন্দর্যের বাতাস বয়ে চলে প্রকৃতির মাঝে। ফুলের কুঁড়ি আর কচি পাতা মনে হয় ঝাউবাতির মতো মিটমিট করে জ্বলে থাকে পুরো দেশ। আর আগুনের মতো জ্বলে থাকা নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল করে পলাশফুল। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) পুরো ক্যাম্পাস এভাবে সাজিয়ে রঙিন করে রেখেছে পলাশ ফুল। রাত হলেই মনে হয় নক্ষত্র গোটা ক্যাম্পাসকে সাজিয়ে রেখেছে। বিকেল হলেই নারীরা সেই নক্ষত্রের সঙ্গে মিশে যায়। ক্যামেরাবন্দি করতেও তারা ভুল করেন না। বলা হয়ে থাকে শাড়িতে নারী। অথচ এখন বলতে ইচ্ছা করে শাড়ি আর পলাশে নারী। পলাশের নানা সৌন্দর্য ও অনুভূতি নিয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিমত তুলে ধরেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক জয়নাল আবেদীন

ববির ক্যাম্পাসে পলাশের মুগ্ধতা

কবির ভাষায় বলতে হয়, কোকিলগুলো ডাক দিয়েছে আপন মনে, কচি পাতায় ভরেছে গাছ এই ভুবনে। পলাশ ফুল দিগন্তকে করেছে লাল, দেখি আমি আর দেখে বসন্তকাল। প্রকৃতির ভাঁজে ভাঁজে যেন মন উদাস আর চঞ্চল সমীকরণের প্রগাঢ় ও উচ্ছ্বাসজাগা আবাহন। প্রকৃতির যেদিকেই চোখ যায় সেদিকেই যেন ঝকঝকে বর্ণোজ্জ্বলতার ছোঁয়া। গাছে গাছে শোনা যায় কোকিলের কুহরণ। পলাশ ফুলে প্রকৃতি আজ নিজেকে নতুন রূপে সাজিয়েছে। এই প্রকৃতির প্রেমে পড়েই তো কবিরা কত শত কবিতা লিখেছেন। শরতের কাশফুল যেতে না যেতেই ববির ক্যাম্পাস জুড়ে ফুটে উঠেছে পলাশ ফুল। এই ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম ইঁঃবধ গড়হড়ংঢ়বৎসধ। দূর থেকে দেখলে মনে হবে আগুনের ঝলক। মনে হবে অরণ্যের অগ্নিশিখা। প্রকৃতির এই দৃশ্যকে উপভোগ করার জন্য প্রকৃতিপ্রেমীরা ভিড় জমাচ্ছে এই ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে। কেউ কেউ নিজের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য মালা গেঁথে পড়ে নিচ্ছে মাথায় ও হাতে প্রকৃতিতে যে সত্যি বসন্তের আগমন বিরাজমান, তা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে দেখা যায়। পলাশের শত শত লাল পাঁপড়িতে, স্নিগ্ধতার ছোঁয়া লাগে সোনালি প্রভাতে ফাগুনের জোয়ার যেন আজ নগরীতে, কলতানে মুখরিত এ ক্যাম্পাস আঙিনায় এনেছে এক নব রূপের ঐকতান।

সানজিদা আক্তার পূর্ণতা

শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।

আগুনরাঙা পলাশ ববিকে দিয়েছে প্রাণভরা যৌবন

‘পত্রহীন গাছে ফুটছে সে আপনি

দেখিলে নয়ন জুড়ায়, জুড়ায় প্রাণখানি।

ববিকে সে দিয়েছে বসন্তের নবসাজ

কবি মন লিখিতে আকুল আজ।

বসন্তের সেই, আগুনরাঙ্গা পলাশ ও পঞ্চম স্বর

ভুলিয়ে দেয় মনের যত দুঃখ, জ্বর।’

আগুনরাঙ্গা পলাশ ববিকে (বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়) যেন দিয়েছে প্রাণভরা যৌবন। প্রকৃতি ববিকে যেন নিজ হস্তে সাজিয়েছে অমরাবতীর মতো। বসন্ত যে এসেছে ধরায় তা জানান দেয় পলাশের সেই লেলিহান অগ্নিশিখা। কোকিলের ডাক আমরা এখন ভালোভাবে শুনতে না পারলেও আমরা ববিতে দেখতে পাই ভ্রমরপ্রিয় পলাশের সেই মুগ্ধতার আকুলতা। ববির এই পলাশ ফুল এতই মোহনীয় যে, কারো কারো প্রিয়তমা অভিমান করে বলতেই পারে, ববির সেই আগুনরাঙ্গা পলাশ ফুল,

এনে দে, এনে দে, নইলে...রাঁধবো না, বাঁধবো না চুল।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী তথা সবাই মুগ্ধ এই পলাশে সজ্জায়িত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়কে দেখে। সুন্দরের পূজারীরা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটে আসেন সৌন্দর্য আহরণ করতে। পরিবার-পরিজন, সন্তান-সন্ততি নিয়ে ও যুগলরা আসেন তাদের প্রিয়তম/প্রিয়তমাকে নিয়ে। ক্যাম্পাসে মুক্তমঞ্চ মাঠ তথা আরো অন্যান্য জায়গায় পলাশের দিকে তাকালে বোঝা যায়, পলাশই হয়তো বসন্তের সবচেয়ে সুন্দরতম ফুল, হয়তো পলাশই একমাত্র ফুল যে কিনা মানুষের মনে শুদ্ধতম প্রেম জাগ্রত করে। হয়তো পলাশই একমাত্র ফুল যে বসন্তকে বসন্তের সাজে সাজায়। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই পলাশ দেখে জীবন্মৃত মানুষটাও হয়তো বলবে আহা! এত সুন্দর! হয়তো অনাহারে থাকা মৌমাছিও বলবে এত সুন্দর ফুল! থাক পরে মধু আহরণ করব।

প্রনজিত চন্দ্র পাল

শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।

ফুটে আছে লালচে কমলা রঙের পলাশ ফুল

প্রকৃতি যেমন চায় তার রূপের মুগ্ধতা ছড়াতে, তেমনি সবাই চায় প্রকৃতির প্রেমে ডুবে থাকতে। প্রকৃতির প্রেমে পড়েনি এমন মানুষ হয়তো খুঁজে পাওয়া মুশকিল। প্রকৃতির প্রেমে পড়েই তো কবিরা লিখেছেন কত শত কবিতা গান। ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ হলেও বর্তমানে এখানে ঋতু পরিবর্তনের রূপ খুব একটা চোখে পড়ে না। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও মানব সৃষ্টি নানা কারণ এর জন্য দায়ী। কিন্তু কোথাও যেন এই ছয়টি ঋতু তার ছয়টি ভিন্ন ভিন্ন রূপ প্রকাশ করছে। আর সেটা হলো বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। শরতের কাশফুল যেতে না যেতেই ক্যাম্পাসজুড়ে ফুটে উঠেছে বসন্তের পলাশফুল। পাতা শূন্য গাছে থোকায় থোকায় ফুটে আছে লালচে কমলা রঙের পলাশ ফুল। এই ফুলের অন্য নাম হলো কিংশুক। একটু দূর থেকে দেখলে মনে হবে গাছের শাখা প্রশাখায় যেন আগুনের ঝলক। যেই আগুনে ঝলসে যেতে পারে যে কারো চোখ। আর এই চোখ ঝলসানো দৃশ্যকে উপভোগ করার জন্য আশপাশের মানুষ ভিড় জমাচ্ছে এই প্রাঙ্গণে। কেউ কেউ আবার এক ধাপ সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য এই আগুন রাঙা পলাশ ফুল দিয়ে মালা গেঁথে পরে নিচ্ছে মাথায় ও হাতে। প্রকৃতিতে যে সত্যিই বসন্তের আগমন বিরাজ করছে তার দৃশ্যমান চিত্র ফুটে উঠেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় বলেছেন, ‘ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক/ আজ বসন্ত’।

কিন্তু বসন্ত যে সত্যিই এসেছে তা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলেই বোঝা যাচ্ছে।

আফসানা মিমি (তিশা)

শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।

মিষ্টি হাওয়ায়, মোহমিত পলাশের ছোঁয়ায়

শীতের রিক্ততায় যখন পাতারা ঝরে যায়, তখনই বসন্তের কোলজুড়ে আসে সহস্র রক্তিম পলাশ। শরতের কাশফুলকে বিদায় জানিয়ে ববি ক্যাম্পাসে মুগ্ধতা ছড়াতে আগমন ঘটেছে পলাশের। মনে হয় ববি ক্যাম্পাসে যেন আগুন লেগেছে। নবীন পাতার সমারোহ তখন ক্যাম্পাসজুড়ে দেখে এই পলাশের বর্ণমিছিল। থোকায় থোকায় গাঢ় লালচে কমলা রং যেন রঙিন করে তোলে ববি ক্যাম্পাসের দিগি¦দিক। এ যেন আগুনরাঙা পলাশ না ফুটলে প্রকৃতি তথা বসন্তের পূর্ণতাই আসে না। ফাগুনের হাওয়ায় রক্তিম পলাশ যেমন যৌবনের উষ্ণতা ছড়ায় তেমনি এই রক্তিম পলাশ বিরহ-বিদ্রোহের প্রতীক। তবে এই ফুলকে অরণ্যের বহ্নিশিখাও উল্লেখ করেছেন অনেকেই। শিক্ষার্থীরা সেই ফুল কুঁড়িয়ে বিভিন্ন ধরনের মালা বানিয়ে নিজেদের সুসজ্জিত করে এবং পলাশের মুগ্ধতা উপভোগ করে। সেই সঙ্গে কোকিলের কুহু ডাক এবং টিয়া পাখির কলকাকলি যেন ক্যাম্পাস নামক স্বর্গরাজ্যে সব শিক্ষার্থীদের প্রাণের স্পন্দন জাগায়। এ ছাড়া বাংলাদেশের জনপ্রিয় একটি দেশাত্মবোধক গানে এর উল্লেখ পাওয়া যায়- ‘আমায় গেঁথে দাও না মাগো একটি পলাশ ফুলের মালা...’

সাদিয়া আফরোজ বৃষ্টি

শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।

পলাশরাঙার এক স্বর্গরাজ্য

বসন্ত আসে প্রকৃতির রানি হয়ে। বাহারি সাজে তার আগমন। বসন্তের আগমনে প্রকৃতি সাজে নতুন সাজে। বাতাসের মৃদুমন্দ তালে উঁচু গাছের শাখায় পলাশ দেখে যে কোনো প্রকৃতপ্রেমী স্বপ্নে মগ্ন হতে বাধ্য। ববির সারি সারি পলাশফুলের গাছ যেন পলাশরাঙা কোনো স্বর্গরাজ্য। ববির এ সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য ভিড় জমাচ্ছে বহুমানুষ। শীতের রুক্ষতায় পাতাঝাড়া পলাশ গাছের পত্রহীন ডাল পরিধান করেছে ফুলেল পোশাকে। ক্যম্পাসের টিয়া পাখি আর পলাশ ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে বহুগুণ। রাঙা পলাশ টিয়া খুনসুটি তাজা প্রাণে বয়ে আনে আনন্দ। ঝরে পড়া পলাশে কেউ কেউ মালা গেঁথে পরিয়ে দিচ্ছে প্রিয় মানুষকে, যা দেখলে বোঝা যায় আসলেই প্রকৃতিতে বসন্তের আগমন ঘটেছে। ফুল পাখির কলরবে ক্যম্পাস প্রাঙ্গণ মুখরিত থাকে। বসন্তে ক্যম্পাস থাকে সাজ সাজ রব। পলাশ রাঙা প্রতিটি মুহূর্ত ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী তো বটে যেকোনো মানুষের মন কেড়ে নেয়।

আসিফুর রহমান

শিক্ষার্থী, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close