reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৯ এপ্রিল, ২০২৪

‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিভাগটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে’

সম্প্রতি টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের যাত্রা শুরু হয়েছে। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ সম্পর্কে নানা দিক নিয়ে বিভাগটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল মাহমুদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রতিদিনের সংবাদের মাভাবিপ্রবি প্রতিনিধি শুভ দে

মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কী?

মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বা যন্ত্রকৌশলকে বলা হয় মাদার অব ইঞ্জিনিয়ারিং। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম ও বিস্তৃত ইঞ্জিনিয়ারিং ক্ষেত্র। বলবিজ্ঞান, গতিবিজ্ঞান, তাপবিজ্ঞান এবং শক্তি সম্বন্ধে একটি সুস্পষ্ট জ্ঞান এই প্রকৌশল অধ্যয়নের জন্য প্রয়োজনীয়। যন্ত্রকৌশলে যান্ত্রিক ব্যবস্থাসমূহ রক্ষণাবেক্ষণ, নকশা, উৎপাদন এবং বিশ্লেষণ করা হয়। যন্ত্র প্রকৌশলের গ্র্যাজুয়েটরা মোটরগাড়ি, বিমান, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, শিল্প-কারখানার যন্ত্রপাতি নির্মাণ এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানের যন্ত্রাদি নির্মাণে এই জ্ঞান ব্যবহার করে থাকে।

এই বিভাগের গ্র্যাজুয়েটরা চাকরি করবে কোথায়? 

বিভিন্ন সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ রয়েছে। যেমন : রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন ও এর অধীন প্রতিষ্ঠানসমূহ, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বণ্টনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ, ওয়াসা, রাজউক, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিএডিসি, বারি, বিসিআইসি, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, ব্যাংক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, মেট্রোরেল প্রকল্প,  পদ্মা সেতু প্রকল্প, কর্ণফুলী টানেল প্রকল্প, বিভিন্ন অটোমোবাইল কারখানা, টেক্সটাইল ও লেদার ইন্ডাস্ট্রি, ফুড, ফার্মাসিউটিক্যাল, বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রি, লাইট ও গ্লাস তৈরির কারখানা, সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রি, সার-কারখানা, অটোমোবাইল, জাহাজ নির্মাণশিল্প, রেলওয়ে, বিমানসহ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানুফেকচারিং ইন্ডাস্ট্রিতে চাকরির সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া গ্র্যাজুয়েটরা বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনে সাধারণ ও প্রফেশনাল ক্যাডারভুক্ত। প্রফেশনাল ক্যাডারগুলোর মধ্যে খাদ্য, গণপূর্ত, রেলওয়ে প্রকৌশল, সড়ক ও জনপদ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

বাইরের দেশে সুযোগ-সুবিধা ও উচ্চতর গবেষণার সুযোগ কেমন? 

গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করার পর মেকানিক্যাল অ্যান্ড অটোমোটিভ ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগও অত্যন্ত বিস্তৃত। দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, মালয়েশিয়া, চীন সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ, সাউথ ও নর্থ আমেরিকায় মাস্টার্স, পিএইচডি ও পোস্ট ডক্টরাল গবেষক হিসেবে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। দেশের ভেতরে বুয়েট, কুয়েট রুয়েট, চুয়েট, আইইউটি, ডুয়েটসহ বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথ গবেষণার সুযোগ রয়েছে। সেই সঙ্গে বর্তমান সময়ের বহুল আলোচিত চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার অংশ হিসেবে সরকার, অ্যাকাডেমিক (বিশ্ববিদ্যালয়) এবং ইন্ডাস্ট্রির একটি সম্মিলিত যোগাযোগ নেটওয়ার্কের কনসেপ্ট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারি বিভাগের গ্র্যাজুয়েটরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। কীভাবে যন্ত্র ও যান্ত্রিক কলাকৌশলসমূহকে মানুষের জন্য অধিক নিরাপদ, ব্যবহার উপযোগী, সুলভ মূল্য ও কার্যক্ষম করা যায় তার জন্য যন্ত্র প্রকৌশলীরা প্রতিনিয়ত যন্ত্রকৌশলের সীমানা বর্ধিত করে যাচ্ছেন।

মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের কাজ কী?

মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা ছোট পার্টস থেকে শুরু করে অনেক বড় মেশিন, যন্ত্রপাতি বা যানবাহন ডিজাইন ও সেই পণ্য উৎপাদনের পুরো পদ্ধতিকে অধিক কর্মক্ষম করার জন্য কাজ করে থাকেন। তারা একটা পণ্য তৈরির সব পর্যায়ে যেমন : গবেষণা, নকশা, উৎপাদন, ইনস্টলেশন এবং চূড়ান্ত চালু করতে পারেন। আর্থিকভাবে সাশ্রয়ী, নিরাপদ ও টেকশই সরঞ্জাম ডিজাইন তৈরি করা। অন্য শ্রেণির ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে আলোচনা করে কোনো প্রজেক্টের জন্য প্রয়োজনীয় দিকগুলো বাছাই করা। প্রকৌশল ও অন্যান্য খাতের পেশাদারদের সঙ্গে কাজ করা। যন্ত্রপাতির মেইনটেন্যান্সের দায়িত্ব পালন করা। তাত্ত্বিক ডিজাইনের কার্যকারিতা জানার জন্য সিমুলেশন করা ও সেই অনুয়াযী ডিজাইনে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা। পণ্য সম্পর্কিত সমস্যা সমাধানের জন্য উৎপাদন বিভাগের লোকজন, সরবরাহকারী এবং গ্রাহকদের সঙ্গে আলোচনা করা।

দেশে কোথায় কোথায় পড়া যাবে?

দেশে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানো হয় না। বুয়েট, কুয়েট, রুয়েট, চুয়েট, ডুয়েট, সাস্ট, হাবিপ্রবি, মাভাবিপ্রবি, আইইউটি (আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়), আস্ট, সিটি ইউনিভার্সিটি, আইইউবাট, মিস্ট, বাস্ট প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। 

যন্ত্রকৌশলে কেমন যোগ্যতা চাই?

যন্ত্রকৌশল বিষয়ে চার বছর মেয়াদি বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভর্তি হতে হলে একজন শিক্ষার্থীর অবশ্যই বিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা থাকতে হবে। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে যারা এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেছে তারা এই বিভাগে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে ভর্তির যোগ্যতা ও অন্যান্য নিয়ম ভিন্ন। তাই যার যে বিশ্ববিদ্যালয় পছন্দ সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বিস্তারিত তথ্যাবলি জেনে নিতে হবে। তবে যারা এই বিভাগে ভর্তি হবে তাদের সব সময় পরিশ্রমী ও পড়াশোনায় মনোযোগী হতে হবে।

মাভাবিপ্রবিতে নতুন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগটি কীভাবে এগিয়ে যাচ্ছে?

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এই যুগে আমাদের যুগোপযোগী  সিদ্ধান্তগুলো গ্রহণ করতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বিভাগটিতে শিক্ষার্থী ভর্তি-পরবর্তী সঠিক দিকনির্দেশনাদানের মাধ্যমে বিভাগটি এগিয়ে যাবে। এ ছাড়া প্রকল্পটি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার শিক্ষার্থীদের গবেষণামূলক কর্মকান্ডকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close