সাকিল আহসান, ঢাবি

  ২৯ জানুয়ারি, ২০২৪

পিপিএস বিভাগে অন্যরকম স্নাতক উদযাপন

সচেতনতা সব সংকট উত্তরণের মহৌষধ। আর এই কঠিন কাজে সম্পৃক্ততা বাড়াতে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুদ্রণ ও প্রকাশনা অধ্যয়ন বিভাগের পরিবেশ-অনুরাগী একদল সচেতন শিক্ষার্থী। জ্ঞান বা স্নানের জলে অবগাহন কিংবা প্রচলিত পশ্চিমাদের চাপিয়ে দেওয়া, মূল্যবোধ বিবর্জিত কথিত র‌্যাগ-ডে নামক অপ-সংস্কৃতিকে এড়িয়ে যুগান্তকারী নজির সৃষ্টি করেছেন তারা। বিভাগের নবীন দ্বিতীয় ব্যাচের সদ্য স্নাতক সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীদের উদ্যেগে বিভাগে উপহার দেওয়া হয়েছে পরিবেশের অকৃত্রিম বন্ধু গাছ। তাদের স্নাতক-পর্ব উদযাপনের অংশ হিসেবে বিভাগে এসব গাছ উপহার দেওয়া হয়েছে। বিভাগের সম্মানিত চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমানের উপস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা গাছগুলো বিভাগে হস্তান্তর করেন। এই মাহেন্দ্রক্ষণে আরো উপস্থিত ছিলেন শিল্পী বেগম, শেখ জিনাত শারমিন, সঞ্জীব কান্তি দাস ও মোহাম্মদ নাজিম। শিক্ষার্থীদের এই মহতি উদোগকে ইতিবাচক এবং দৃষ্টান্তমূলক বলে অভিহিত করেছেন অত্র বিভাগের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান। চলমান পরিবেশ ও সভ্যতার সংকট উত্তরণে এই অগ্রযাত্রা মাইলফলক ও অনুপ্রেরণামূলক হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। অন্যরকম এই উদ্যোমের অংশ হতে পারে খুশি নবীন গ্র্যাজুয়েটরা। তারা জানিয়েছেন, প্রতিনিয়ত বনভূমি ধ্বংস ও বৃক্ষ নিধনের ফলে বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়ছে, ঋতু তার বৈচিত্র্যতা হারাচ্ছে, বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা অর্থাৎ বিশ্ব এক ক্রান্তিকাল পার করছে, তাই শিক্ষার্থীদের বৃক্ষরোপণ-বনায়নে উদ্বুদ্ধ করতে তাদের এই কর্মসূচি। প্রতিটি শিক্ষার্থী যদি প্রতি বছর দুটি করেও বৃক্ষরোপণ করে, তাহলে চলমান জলবায়ু সংকটের করাল গ্রাস থেকে মুক্তি পাবে দেশ। এই উদ্যোগ কিছুটা হলেও সবাইকে নতুন করে বৃক্ষরোপণে উৎসাহিত করবে, গড়ে তুলবে পরিবেশ-সহায়ক একদল জাতি। মুদ্রণ ও প্রকাশনা অধ্যয়ন বিভাগের পরবর্তী ব্যাচ স্নাতক সম্পন্ন করে এই ধারা অব্যাহত রাখবে বলেও তাদের বিশ্বাস। তাদের এই অন্যরকম উদযাপনে বেশ প্রফুল্ল সবাই। বিভাগের চেয়ারম্যান, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী সবাই শিক্ষার্থীদের এই নব-সূচনায় আন্দোলিত।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে প্রশংসায় ভাসা নব-দিগন্তের শুভ সূচনা করা, এই নব্য গ্র্যাজুয়েটরা অজান্তেই সচেতনতার বীজ ছড়িয়ে দিচ্ছেন যুগান্তরে। তাদেরই অঙ্কিত পদাঙ্ক অনুসরণ করে হাঁটবে দেশের শিক্ষিত তরুণ প্রজন্ম। এর দরুন অপসংস্কৃতির হাতে করায়ত্ত বাংলা সংস্কৃতি একদিকে যেমন মুক্তি পাবে, অন্যদিকে বিশ্ব পাবে নিরেট, সবুজ এক জলবায়ু সচেতন নাগরিক সমাজ। এই উপহারগুলো শুধু গুটিকয়েক গাছ নয়, বরং এটি একটি নতুন সংস্কৃতির সৃষ্টি করবে, যেখানে শিক্ষার্থীদের দ্বারা জলবায়ু সংরক্ষণে একটি নতুন অধ্যায় রচিত হবে, তরুণ প্রজন্মের হৃদয়ে জলবায়ু সংরক্ষণের জন্য একটি নতুন চেতনা জাগিয়ে দিবে এবং শিক্ষার্থীরা তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যেতে সক্ষম হবে। পরিবেশ সংকট, ক্ষমতার হানাহানি, সাম্রাজ্যবাদিতায় বিধ্বস্ত বিশ্বে যখন একের পর এক যুদ্ধ লেগেই যাচ্ছে, লোভী-খেকোরা হজম করে চলছে একের পর এক গাছপালা, নদী-নালা, বনভূমি; তখন এ মুহূর্তে এ রকম পদক্ষেপ মানুষদের আশা জাগায়, উৎফুল্ল করে এই ভেবে যে, পৃথিবীর অস্তিত্ব বিকিয়ে দেওয়া রোধে রবিঠাকুরের সবুজেরা এখনো আছেন। সবুজদের এই পদক্ষেপ আবদ্ধ মজা পুকুরে এক টুকরো ঢিল মারার নামান্তর, যার শেষ কম্পন কম্পায়িত করবে ঘুমন্ত কয়েক জনাকীর্ণদের!

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close