মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

  ২১ এপ্রিল, ২০২৪

চট্টগ্রামে শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী বলীখেলা

আগামী বৃহস্পতিবার হতে যাচ্ছে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলীখেলা। নগরীর লালদীঘি ময়দানে শুরু হবে জব্বারের বলি খেলার ১১৫তম আয়োজন। দীর্ঘ সময় থেকে প্রতি বছর আয়োজিত হয়ে আসা এই জব্বারের বলীখেলার সঙ্গে চট্টগ্রামবাসীর আবেগ জড়িত। মেলাকে কেন্দ্র করে প্রতিবারের মতো এবারও পাশাপাশি চলবে ২৪, ২৫ ও ২৬ এপ্রিল থেকে তিন দিনব্যাপী জমজমাট বৈশাখী মেলা।

করোনার কারণে গত দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত বছরের ২৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয় আবদুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলার ১১৪তম আসর। ১৯০৯ সালে এই মেলার আয়োজন শুরুর পর কখনো বন্ধ হয়নি। তবে দুই বছর করোনা মহামারির কারণে মেলার ১১১ ও ১১২তম আসর বাতিল করা হয়েছিল। করোনার কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে ঐতিহাসিক জব্বারের বলী খেলা ও মেলা বন্ধ ছিল। আয়োজক সূত্রে জানা যায়, বলীখেলার জন্য লালদীঘি মাঠে এরই মধ্যে ২০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২০ ফুট প্রস্থের বালুর মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। সেখানে পাঁচটি ধাপে প্রতিযোগিতা হবে। প্রথম বাছাইয়ের পরের রাউন্ড পর্বে ৫০ জনকে নিয়ে খেলা হবে। সেখান থেকে ২৫ জন যাবেন মূল চ্যাম্পিয়ন পর্বে। এখানে কোনো পয়েন্ট ব্যবস্থা নেই। কুস্তি করতে করতে মাটিতে যে প্রতিপক্ষের পিঠ লাগাতে পারবে সেই বিজয়ী হবে। প্রতি বছর ১০০-১৫০ জন বলি দেশের বিভিন্ন জায়গায় থেকে এসে এ মেলায় অংশ নেন। একদিন আগেই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে ইচ্ছুক বলীরা চট্টগ্রামে অবস্থান করবেন।

ইতিহাসে জানা যায়, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যুবসমাজকে সংগঠিত করতে ও শরীর গঠনে উৎসাহিত করতে ১৯০৯ সালে নগরীর বক্সিরহাট এলাকার বাসিন্দা আবদুল জব্বার সওদাগর লালদীঘি মাঠে আয়োজন করেন কুস্তি প্রতিযোগিতা। যা এখন জব্বারের বলীখেলা নামে পরিচিত। এই বলী খেলায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুমিল্লা, তিন পার্বত্যজেলাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে নানা বয়সি বলীরা অংশ নেন। ১৯৮৬ সাল থেকে বাপ-দাদার মাধ্যমে বংশ পরম্পরায় এই মেলার আয়োজন করে আসছেন আয়োজকরা। নগর পুলিশ প্রশাসনও ঐতিহ্যবাহী এই মেলায় সার্বিক সহায়তা করেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কুস্তিগীর অর্থাৎ বলীরা জব্বার বলী খেলার আয়োজকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

বলীখেলার লালদীঘির মাঠকে কেন্দ্র করে প্রায় দুই বর্গকিলোমিটার এলাকায় মেলা বসে। মেলা উপলক্ষে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, খুলনা, চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকে ব্যবসায়ীরা আসেন তাদের পণ্য নিয়ে। মাটির তৈজসপত্র, ঝাড়ু, হাতপাখা, শীতলপাটি, দা-খুন্তি, প্লাস্টিকের সামগ্রী-ফুল, মন্ডা-মিঠাই, গৃহসজ্জার সামগ্রী, গাছের চারা, তামা-কাঁসা-পিতলের সামগ্রী, কাঠের আসবাবপত্র, বেতের আসবাব, বাদ্যযন্ত্র, দোলনা, মাছ ধরার জাল, মোড়া, পিঁড়ি, জলচৌকিসহ কী নেই এই মেলায়। নগরের অধিবাসীরা সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন এই মেলার জন্য। কারণ এখানেই মিলে গৃহস্থালীর সব জিনিসপত্র। বলীখেলায় বিক্রির জন্য ঘরে ঘরে পসরা তৈরি করে। এতে কম করে হলেও কোটি টাকার ব্যবসা হয়।

এদিকে গত শুক্রবার বিকেলে লালদীঘির সিটি করপোরেশন মিলনায়তনে আবদুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলার ট্রফি এবং জার্সি উন্মোচন করেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরী। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন মেলা কমিটির সভাপতি জহর লাল হাজারী, কমিটির সাধারণ সম্পাদক শওকত আনোয়ার বাদল, বলীখেলার এবারের পৃষ্ঠপোষক এনএইচটি হোল্ডিংসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানসীর, সহসভাপতি চৌধুরী ফরিদসহ এ সময় উপস্থিত ছিলেন ক্রীড়া সংগঠক হাফিজুল ইসলাম, কাউন্সিলর রুমকী সেনগুপ্ত, সাবেক কাউন্সিলর মুহাম্মদ জামাল হোসেন, জাবেদ নজরুল ইসলাম, বলী খেলার সাবেক রেফারি এম এ মালেক প্রমুখ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close