ক্রীড়া প্রতিবেদক, দুবাই থেকে

  ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

দুবাই জাদুঘর

মরুর বুকে প্রাচীন সভ্যতা

আকাশচুম্বী অট্টালিকা বুর্জ খলিফা। মরুভূমির বুক চিরে ঠায় দাঁড়িয়ে এই গ্রহের সবচেয়ে উঁচু ভবনটি। আধুনিক দুবাইয়ে শুধুই সুরম্য, দীর্ঘাকায় দালানের মিছিল। ঠিক বিপরীত না হলেও শহরের পুরনো অংশে এমন বড় বড় অট্টালিকা কমই দেখা যায়। আবার এই পুরনো দুবাইয়ে খোঁজ মিলবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রাচীন সভ্যতা, সংস্কৃতি ও শত শত বছরের প্রতœতত্ত্বের।

পুরনো দুবাইয়ের প্রাণকেন্দ্র ধরা হয় বার দুবাই ও দেরা নামক জায়গাগুলোকে। একটা সময় এসব এলাকাই ছিল আরব আমিরাতের প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র। যার কদর এখনো কম-বেশি দেখা যায়। পোশাক, স্বর্ণ, প্রসাধনী তথা অন্যান্য সামগ্রী তুলানমূলক কম মূল্যে পাওয়া যায় এখানে। পর্যটকরা এখনো ঢুঁ মারেন এসব অঞ্চলে। এখানেই দেখা যায় ১৮০০ সালের বছর আগের আমিরাতের সভ্যতার নিদর্শন। এই জাদুঘরই দুবাইর সবচেয়ে প্রাচীন ভবন।

বার দুবাইয়ের বুর্জমান এলাকার জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে প্রাচীন আমিরাতের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। প্রবেশ মূল্য ৩ দিরহাম (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭০ টাকা)। জাদুঘরে ঢুকতেই দেখা গেল আরব দেশের রথী-মহারথীদের ছবি। ফ্রেমবন্দি থাকা এই মানুষগুলোই যুগের পর যুগ ছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের শাসককর্তা। বর্তমান রাজা আবু জায়েদেরও ছবির প্রদর্শনী আছে। ছবিতে ইংরেজি ও আরবি ভাষায় দেওয়া আছে অ্যারাবিয়ান রাজাদের বর্ণনা।

জাদুঘরের প্রবেশ মুখের বাইরেই রয়েছে ব্রোঞ্জের কামান ও গোলাবারুদ। ভেতরে কয়েক শত ফিটের যে একটা উঠোন আছে সেখানেও দেখা মিলল একই সরঞ্জামাদি। এই উঠোনই জাদুঘরের কেন্দ্রবিন্দু। এর চতুর্দিকেই নানান রকমের নিদর্শন। মাঝখানে ছোট ছোট বেশ কয়েকটি নৌকা। নৌকা কেনাবেচার হাট মনে হতে পারে যে কারোর। জাদুঘরের বাইরের সীমানায় এরচেয়েও লম্বা ডুবো (ঐতিহ্যবাহী নৌকা) আছে। খাল এবং মাকদুম নদী পারাপারে ব্যবহার করা হতো এসব নৌকা।

উঠোনের মাঝ খানে আছে শতবর্ষ পুরনো একটি খেজুর গাছ। এক কোণে ছন আর বাঁশ দিয়ে নির্মিত একটা ঘর। বাঁশ চাটাইয়ের বেড়ার ফাঁক গলিয়ে সূর্যের আলো ঢুকে পড়ছে কক্ষে। বিছানা, চৌকি, সোফা, হাড়ি-পাতিল, থালা-বাসন, রান্নার চুল্লি, হারিকেন সবকিছুই আছে ঘরে। কয়েক দশক আগের হতদরিদ্র আরব বাসিন্দারা এভাবেই জীবনযাপন করতেন। উঠোনের আরেক পাশে আছে নলকূপ। ছনের ঘরের পাশেই দেখা যাবে গোয়ালঘর।

কংক্রিটের দেয়ালে ঘেরা উঠোনের কোণ তিনটি। এক পাশে বড় একটি দুর্গ আছে। দুর্গের নিচেই পুরনো অস্ত্র, বল্লব, ছুরিসহ নানা রকমের যুদ্ধের সরঞ্জমাদি রাখা হয়েছে কাচের ভেতর। দুর্গের বিপরীত পাশ বেয়ে নেমেছে সুরঙ্গ। সিঁড়ির মতো গোলাকৃতির গুহা। যা বেয়ে নামলেই আঁধার ভেদ করা রং-বেরঙয়ের আলো। কান পাতলেই শোনা যায় কোরআন তিলাওয়াতের মধুর আওয়াজ।

ছোট্ট একটি কক্ষে প্রদর্শন করা হয়েছে আরব দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। পাশেই কানে ধাক্কা খাচ্ছে কামার-কুমারের দা-খনতার ঝনঝন শব্দ। একটু এগোলেই আরব দেশের খন্ড খন্ড বাণিজ্যিক চিত্র; দেখা যায় মুদি স্বর্ণালঙ্কারসহ নানান রকমের দোকান। হাট-বাজার, উট চড়ানো, সামাজিক বন্ধন- এসবকিছুতেই মমি করানো মানুষ।

ভেতরে আছে প্রবাল পাথর, অ্যাকুরিয়াম, কামান, বল্লব, ছুড়ি, যোদ্ধাদের শরীরের সুরক্ষিত পোশাক। পর্যটকদের অনেকেই ছবি তুলছেন এসবের, সেলফিও নিচ্ছেন অনেকে। ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত পর্যটকদের তৃষ্ণা নিবারণ করতে বহির্গেটের মুখে রাখা হয়েছে যান্ত্রিক দোকান। খুচরা পয়সা দিয়ে এখান থেকে কেনা যায় কোমল পানীয়।

জাদুঘরে সংরক্ষিত প্রতœতত্ত্বগুলো ৩ হাজার বছরেরও বেশি পুরনো। বহু বছরের পুরনো জাদুঘরটি আধুনিকভাবে রূপান্তর করা হয় ১৯৭১ সালে। ওই বছরই দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয় দুবাই জাদুঘরটি। উঠোনের অংশটুকু বাদ দিলে পুরো জাদুঘরই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। জাদুঘরের ভেতরেই আছে সুবেনির এবং বিভিন্ন আর্টিফিশিয়াল ছবি বিক্রয়ের দোকান।

এক নজরে দুবাই জাদুঘর :

লোকেশন : আল ফাহিদি ফোর্ড, বার দুবাই

সংরক্ষণ : প্রতœতত্ত্ব, ছবি, মমি করা আরবদের ইতিহাস ও সংস্কৃতি।

দর্শনার্থী : ১ মিলিয়ন ৯ (২০১৩ সাল পর্যন্ত)

আয়তন : ৪ হাজার বর্গ মিটারের।

প্রতœতত্ত্বগুলোর বয়স : ৩ হাজারের বেশি বছর।

দিনে গড় দর্শক : ১৮০০ পর্যটক।

বছরে গড় দর্শক : ৬ লাখ।

সবদেশি বেশি দর্শনাথী : আগস্ট থেকে এপ্রিল।

দুর্গের নাম : আল ফাহিদী।

আধুনিকায়নের রূপকার : শেখ হামদান বিন রশিদ আল মাকতুম (তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান)

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close