জাকির হোসেন, সুনামগঞ্জ

  ৩০ এপ্রিল, ২০২৪

‘আগাম খবর পাইলে ফসল ও প্রাণ রক্ষা হইত’

হাওরাঞ্চলে আবহাওয়া পূর্বাভাস কেন্দ্র স্থাপনের দাবি

‘এখন প্রতিদিন হাওরে ফসল তোলার কাজে থাকি। প্রতিদিনই ঝড়-তুফান হইতাছে। ঝড়-তুফানের সঙ্গে বজ্রপাতও হয়। আমরা যদি আবহাওয়ার আগাম খবর পাইতাম, তাহলে ফসল ও প্রাণ দুটিই রক্ষা করতে পারতাম’, কথাগুলো বলছিলেন বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খিরদরপুর গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন। শুধু তিনি নন, সুনামগঞ্জে আবহাওয়া অফিস স্থাপনের জন্য হাওরবাসী দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন। একইসঙ্গে বজ্রপাত নিরোধক ঘর ও বজ্রপাত নিরোধক দণ্ড স্থাপনের দাবি স্থানীয়দের।

আরেক কৃষক সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের ভাটি শাফেলা গ্রামের রইছ আলী বলেন, ‘বছরের এ সময়টাতে যদি মোবাইলে একটি বার্তা পাওয়া যেত আবহাওয়ার, তাহলে আমাদের কৃষকরা ভাইদের জন্য অনেক উপকার হইত।’ বছরের এ সময়টাতে বোরো ফসল কাটার সময়। এখন প্রতিদিনই বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে কৃষকদের মনে কাজ করছে শঙ্কা। হাওর অধ্যুষিত জেলায় আবহাওয়া অফিস না থাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকেও সঠিক সময়ে আবহাওয়া বার্তা পাওয়া যাচ্ছে না। এতে হাওরে কৃষকরা ঝুঁকিপূর্ণভাবেই কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

২০১৭ সালে নিকটবর্তী ভারতের চেরাপুঞ্জিতে অস্বাভাবিক বৃষ্টির ফলে পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যায় সুনামগঞ্জের শতভাগ কাচা ধান। এ আগাম বন্যার এ বার্তাটা আগে থেকেই কৃষকরা না পাওয়ায় দুর্ভোগে নেমে এসেছিল সেই বছর। ২০২২ সালে সুনামগঞ্জে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় পুরো জেলার শতভাগ এলাকা পানিতে নিমজ্জিত হয়। এ বন্যার আগাম বার্তা না পাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পরতে হয়েছিল সুনামগঞ্জবাসীকে। ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত কত মিলিমিটার হচ্ছে সেই খবর সুনামগঞ্জের মানুষ জানতে পারে দুদিন পর। এ সময়ের ভেতর আগাম বন্যার সৃষ্টি হয় বিগত বছরগুলোয়।

এছাড়া বছরের এ সময়ে লাখ লাখ কৃষান-কৃষানি ও তাদের সন্তানরা ফসলের মাঠে কাজ করেন। এ সময়টাতেই বজ্রবৃষ্টি বেশি হয়ে থাকে। হাওরে কাজ করার সময় হঠাৎ বজ্রবৃষ্টি শুরু হয়ে গেলে অনেকেরই প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে বিগত বছরগুলোয়। বজ্রপাতে চলতি বছরের গতকাল সোমবার পর্যন্ত ৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এছাড়া বিগত বছরগুলো সুনামগঞ্জে বজ্রপাতে ২০২২ সালে ২৪ জন, ২০২৩ সালে ২৩ জন ও ২০২১ সালে ১১ জনের প্রাণহানি ঘটে।

জেলার হাওরাঞ্চলে ধান কাটা শেষ হওয়ার পরে মাছ ধরার জন্য হাজারো জেলে হাওরে থাকে। কখন আবহাওয়া খারাপ হবে সেই খবর জানেন না তারা। ফলে বজ্রপাতে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে থাকে। কৃষকদের দাবি হাওরে বজ্রপাত নিরোধক ঘর করে দেওয়ার। জেলার শাল্লা, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৪টি বজ্রপাত নিরোধক ঘর নির্মাণ করা হয়েছিল ২০২২ সালে। এমন আরো বেশি করে বজ্রপাত নিরোধক ঘর ও বজ্রপাত নিরোধক দণ্ডস্থাপন করার দাবি স্থানীয়দের। দেশের অন্যতম বজ্রপাতপ্রবণ এলাকা সুনামগঞ্জে হতাহত কমিয়ে আনতে গেল বছর বসানো হয়েছে ২৪টি বজ্রনিরোধক লাইটনিং অ্যারেস্টার। তবে প্রয়োজনের তুলনায় যন্ত্রের সংখ্যা যথেষ্ট নয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

সচেতন নাগারিক কমিটির (সনাক) সুনামগঞ্জের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট খলিল রহমান বলেন, জেলায় আবহাওয়া অফিস নাই, হউক আবহাওয়ার খবরাখবর দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট করে একজন লোক থাকলে কৃষকরা আবহাওয়ার তথ্যটা পেতেন। এতে কৃষকরা তাদের ফসল দ্রুত সময়ে কাটতে পারতেন এবং বজ্রপাত থেকেও রক্ষা পেতেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকেশৌলী মামুন হাওলাদার জানান, যেহেতু সুনামগঞ্জে সবসময় আগাম বন্যার একটি শঙ্কা থাকে, সেহেতু এ বিবেচনা করে একটি আবহাওয়া অফিসের শাখা দেওয়া যায়। তবে আমরা আমাদের বন্যা পূর্ভাবাস কেন্দ্র ও আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য নিয়ে কৃষকদের সবসময় তথ্য দিয়ে আসছি।

গত কয়েক বছর ধরেই ঝড়-বৃষ্টির সময় বজ্রপাতে প্রাণহানি বাড়ছে সুনামগঞ্জে। বিশেষ করে মার্চ মাস থেকে জুলাই-আগস্ট পর্যন্ত চলে এ অবস্থা। এ মৌসুমে বোরো আবাদের জন্য হাওর এলাকায় অসংখ্য চাষিকে ক্ষেতে কাজ করতে হয় বলে বাড়ছে এ দুর্যোগে হতাহতের সংখ্যাও। প্রাণহানি কমাতে সম্প্রতি জেলার ছয় উপজেলায় ২৪টি বজ্রপাত নিরোধক দণ্ড স্থাপন করা হয়েছে। দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এ কাজে খরচ হয়েছে ১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। ৩০০ ফুট এলাকার মধ্যে বজ্রপাত হলে তা টেনে মাটিতে নামিয়ে আনতে সক্ষম লাইটনিং অ্যারেস্টার নামে এ যন্ত্র।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close