কাইয়ুম আহমেদ
বিনোদন কেন্দ্র প্রস্তুত এখন শুধু অপেক্ষা
ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানে হই-হুল্লোড়। এই খুশি আর হই-হুল্লোড়ের সেই দিন এলো বলে! টানা ছয় দিনের ছুটিতে কর্মজীবীদের একটা বড় অংশ যাবে গ্রামে। অন্যরা থাকবেন রাজধানীতেই। খুশির দিনে তারা কী করবেন, কোথায় বেড়াবেন তা নিয়ে পরিকল্পনাও করছেন কেউ কেউ। আর তাদের সেই পরিকল্পনা মতো নানা আয়োজনে প্রস্তুতি নিয়েছে ঢাকার বিনোদন কেন্দ্রগুলো। এখন প্রতীক্ষার পালা। যেন উৎসবের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতায় দিনের প্রায় অর্ধেকের বেশি সময় কেটে গেলেও ঈদের দিন বিকেল থেকেই বিনোদন কেন্দ্রগুলোয় সব বয়স আর শ্রেণি-পেশার মানুষের ঢল নামবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের। সেই ঢল সামলে বরাবরের মতো এবারও প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে শাহবাগের শিশুপার্ক, জাতীয় জাদুঘর, জাতীয় চিড়িয়াখানা, লালবাগ কেল্লা, আহসান মঞ্জিল এবং নভোথিয়েটার। এসবের বাইরে ছোট-বড় আরো বহু বিনোদন কেন্দ্রে ঈদ উদ্যাপনের বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনাপার্ক, চন্দ্রিমা উদ্যান, সংসদ ভবনসহ বিভিন্ন খোলামেলা জায়গায় মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াবে সাধারণ মানুষ।
লালবাগ কেল্লা : ঢাকার ঐতিহ্যবাহী একটি নিদর্শন হলো লালবাগ কেল্লা। কেল্লার চত্বরে তিনটি স্থাপনা রয়েছে, কেন্দ্রস্থলের দরবার ও হাম্মামখানা, পরীবিবির সমাধি এবং উত্তর-পশ্চিমাংশের শাহি মসজিদ। লাল সবুজে ঘেরা এই লালবাগ কেল্লা হতে পারে ঈদের দিন ঘোরার চমৎকার জায়গা।
আহসান মঞ্জিল : পুরান ঢাকার ইসলামপুরে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে গড়ে ওঠা এই স্থাপনা ছিল ঢাকার নবাবদের প্রাসাদ, এখন জাদুঘর। নির্মাণ করা হয় ১৮৫৯ সালে। প্রাসাদের ছাদের সুদৃশ্য গম্বুজটি একসময় ছিল ঢাকার সর্বোচ্চ গম্বুজ। মূল ভবনের বাইরে ত্রি-তোরণবিশিষ্ট প্রবেশদ্বারও দেখতে সুন্দর। সিঁড়িগুলো সবার দৃষ্টি কাড়ে। কর্মব্যস্ত জীবনে ইতহাস জানার পাশাপাশি ঈদে চিত্তবিনোদনও হবে।
জাতীয় জাদুঘর : দেশের সবচেয়ে বড় জাদুঘর ও সংগ্রহশালা। এটি ঐতিহাসিক, প্রতœতাত্ত্বিক, নৃ-তাত্ত্বিক, শিল্পকলা ও প্রাকৃতিক ইতিহাস সম্পর্কিত নিদর্শনাদি সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রদর্শন ও গবেষণার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় প্রতিষ্ঠান। ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯১৩ সালে ঢাকা জাদুঘর নামে এর যাত্রা শুরু হয়েছিল। বর্তমানে ঢাকার প্রাণকেন্দ্র শাহবাগে ৮ দশমিক ৬৩ একর জমির ওপর চারতলা ভবনে জাদুঘরটি অবস্থিত। বাড়ির সবাইকে নিয়ে অনায়াসে যাওয়া যায় এখানে। জাদুঘরে ৪৪টি প্রদর্শনী কক্ষ, তিনটি অডিটোরিয়াম, একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার ও দুটি অস্থায়ী প্রদর্শনী কক্ষ রয়েছে। জাতীয় জাদুঘরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে চারটি শাখা জাদুঘর। এগুলো হলো সিলেটের ওসমানী জাদুঘর, ঢাকার আহসান মঞ্জিল জাদুঘর, চট্টগ্রামের জিয়া স্মৃতি জাদুঘর এবং ময়মনসিংহের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা।
শিশুপার্ক : শিশুদের বিনোদনের জন্য শিশুপার্ক অন্যতম। ঈদের দিন পরিবার নিয়ে ঘুরে আসার চমৎকার জায়গা। স্বল্প সময় ও অল্প খরচে বিনোদনের জন্য কিছুটা সময় কাটিয়ে আসতে পারেন। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উত্তর পাশে গড়ে ওঠা শিশুপার্ক শিশু-কিশোরদের আনন্দের অন্যতম কেন্দ্র। টয় ট্রেন, ফাইটার জেট, মেরি গো রাউন্ড, ফেরিস হুইল স্কেটিং রিংক ছাড়াও এখানে আরো রয়েছে বেশ কিছু চমকপ্রদ রাইড।
চিড়িয়াখানা : মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানার ভেতরে দেখা মিলবে নানা পশুপাখির। রয়েছে বসার ভালো স্থান। লেক আর সবুজের দেখা পাবেন এখানটায়। ঈদের দিন চলে পারেন বাড়ির কনিষ্ঠ সদস্যদের নিয়ে।
বোটানিক্যাল গার্ডেন : চিড়িয়াখানার পাশেই বোটানিক্যাল গার্ডেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে সবুজ প্রকৃতির মধ্যে সময় কাটাতে পারেন। ঈদের দিন খোলা হাওয়ায় বেড়াতে আসতে পারেন এখানে।
নভোথিয়েটার : বিজয় সরণিতে অবস্থিত নভোথিয়েটারে দুটি ফিল্ম প্রদর্শিত হয়। মহাকাশবিষয়ক শো দুটোই। যারা বিজ্ঞান বিষয়ে আগ্রহী তাদের জন্য এটি অন্যতম। ঈদের দিন হাতে সময় নিয়ে চলে যেতে পারেন এখানে।
যমুনা ফিউচার পার্ক : যমুনা ফিউচার পার্কে ছোট-বড় সবাই যেতে পারেন। ছোটদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন রাইডের ব্যবস্থা।
ফ্যান্টাসি কিংডম : চমৎকার ল্যান্ড স্কেপিং ও উত্তেজনাকর সব রাইডস নিয়ে তৈরি এটি। দুরন্ত গতিতে ছুটে চলা রোমাঞ্চকর অনুভূতি ও শিহরণ জাগানো রাইড রোলার কোস্টার এই পার্কের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাইডগুলোর মধ্যে অন্যতম। রয়েছে জায়ান্ট ফেরিস হুইল, জুজু ট্রেন, হ্যাপি ক্যাঙ্গার, বাম্পারকার, ম্যাজিক কার্পেট, সান্তা মারিয়া, জায়ান্ট স্পø্যাশ, জিপ অ্যারাউন্ড, পনি অ্যাডভেঞ্চার, ইজি ডিজিসহ ছোট-বড় সবার জন্য মজাদার সব রাইডস।
নন্দন পার্ক : ঈদের ছুটিতে নন্দন পার্কে যাওয়ার মজাই আলাদা। এ সময় হাতে সময় বেশি থাকে। ফলে ঢাকা থেকে সামান্য দূরে হলেও সমস্যা হয় না। পার্ক কর্তৃপক্ষও সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। এখন প্রতীক্ষার পালা। ঈদের পরবর্তী দিনগুলোয় পার্কে লাইভ মিউজিক, ডিজে, ড্যান্স শো ইত্যাদির আয়োজন থাকবে।
"