নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৪ মার্চ, ২০১৯

চিকিৎসা নিতে এসে ছিনতাইকারী আটক!

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে জাহিদুল ইসলাম সোহাগ নামে এক ছিনতাইকারী ধরা পড়েছেন। নিজেকে ছিনতাইয়ের শিকার দাবি করলেও পুলিশ বলছে, জাহিদুল একজন ছিনতাইকারী। ছিনতাই করতে গিয়ে অসাবধানতাবশত নিজের পিস্তলের গুলিতেই তিনি আহত হয়েছেন।

গুলিস্তান হানিফ ফ্লাইওভারের পূর্ব পাশ দিয়ে গতকাল শনিবার দুপুর ১টার দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন নাভানা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের নির্বাহী কর্মকর্তা সুজাউদ্দিন তালুকদার। এ সময় তার বাম পায়ে গুলি লাগে। একই সময় ওই এলাকায় জাহিদুল ইসলাম সোহাগ নামের আরেক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হন। তার বাড়ি ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে। তারা দুজনই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের দাবি, তারা ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন। তবে পুলিশ বলছে, সুজাউদ্দিনের কাছ থেকে মূল্যবান কাগজপত্র ও ব্যাংকের চেক ছিনতাই করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন সোহাগ। এর আগে তিনি সুজাউদ্দিনকে গুলি করেন।

সুজাউদ্দিনকে হাসপাতালে এনেছেন মনির হোসেন নামের এক পথচারী। তার ভাষ্য, সুজাউদ্দিন তালুকদার ছিনতাইয়ের শিকার হন।

এদিকে সুজাউদ্দিনকে হাসপাতালের আনার মিনিট দশেক পর জিনস প্যান্ট ও স্যান্ডো গেঞ্জি পরা সোহাগকে হাসপাতালে আনা হয়। তিনি ফুটপাতে হাটার সময় গুলিবিদ্ধ হন বলে দাবি করেছেন।

তাদের চিকিৎসা চলাকালে বেলা পৌনে ২টার দিকে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পল্টন থানার ওসি মাহমুদুল হকের নেতৃত্বে পুলিশের দল আসে। তাদের সঙ্গে ছিলেন প্রত্যক্ষদর্শী। তারা গুলিবিদ্ধ দুজনের সঙ্গে কথা বলেন। কথা বলার একপর্যায়ে জাহিদুল ইসলাম সোহাগের হাতে হাতকড়া পরিয়ে দেন ওসি।

ওসি মাহমুদুল হক বলেন, সুজাউদ্দিন তালুকদারের ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত জাহিদুল ইসলাম সোহাগ। সুজাউদ্দিনের ব্যাগ ছিনতাই হয়েছে। সুজাউদ্দিন অফিসের কাজে মহানগর নাট্যমঞ্চের পূর্বপাশের ফুটপাত দিয়ে হেঁটে নবাবপুরের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় বিপরীত দিকে থেকে দুজন মোটরসাইকেল আরোহী তাকে অনুসরণ করতে থাকেন। একপর্যায়ে মোটরসাইকেল থেকে নেমে সোহাগ সুজাউদ্দিনের হাতে থাকা হ্যান্ডব্যাগ ধরে টান দেন। তবে সুজাউদ্দিন তাতে বাধা দেন। দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। সোহাগ এ সময় সুজাউদ্দিনকে এলোপাতাড়ি ঘুষি মারেন। ব্যাগটা নিতে না পেরে তার ডানপাশ থেকে পিস্তল বের করে সুজাউদ্দিনের বাম পায়ে গুলি করেন। এ সময় তার হাতে ব্যাগ চলে আসে। ধস্তাধস্তির সময়ে তার নিজের বাম পায়ের হাঁটুর কাছে গুলি লাগে। ওই সময় আরেক ছিনতাইকারী মোটরসাইকেল ইউটার্ন নিয়ে তাদের দুজনের মাঝখানে দাঁড়ান। তখন ছিনতাই করা ব্যাগটি অপর ছিনতাইকারীকে দিয়ে দেন সোহাগ। সেই ব্যাগ নিয়ে ওই ছিনতাইকারী পালিয়ে যান। এ সময় এক প্রত্যক্ষদর্শী ঘটনাটি দেখে পুলিশকে জানায়। পুলিশ এসে পরে সোহাগকে শনাক্ত করে। তাকে আটক দেখিয়ে হাসপাতালে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা করা হচ্ছে।

ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সুজাউদ্দিন জানান, ধস্তাধস্তি হয়েছে, তবে ওই যুবককে আমি চিনতে পারছি না। তার ব্যাগে মূল্যবান কাগজপত্র ও চেক ছিল। কিন্তু নগদ টাকা ছিল না।

সুজাউদ্দিনের অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আলামীন বলেন, অফিসের কাজের জন্যই তিনি মতিঝিলে যান প্রথমে। সেখান থেকে নবাবপুরের দিকে যাচ্ছিলেন। তার বাম পায়ে গুলি লেগেছে। প্রত্যক্ষদর্শী মনির হোসেন বলেন, আজ দুপুর ১টার দিকে হানিফ ফ্লাইওভারের পাশের ফুটপাতে চার-পাঁচজন লোক একসঙ্গে সুজাউদ্দিনকে মারধর শুরু করেন। এদের মধ্যে দুজন মোটরসাইকেলে চড়ে আসেন। প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট ধরে ওই পথচারীকে কিল-ঘুষি মারেন। মোটরসাইকেল আরোহী দুজনের হেলমেট পরা ছিল। এদের মধ্যে একজন সুজাউদ্দিনকে গুলি করেন। গুলিবিদ্ধ লোকটির হাত ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে তারা পালিয়ে যান। এ সময় সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশা ঘটনাস্থলে এসে হামলাকারী অন্যদের নিয়ে দ্রুত চলে যায়।

ওসি মাহমুদ বলেন, সোহাগকে আসামি করে মামলার প্রক্রিয়া চলছে। ঘটনাস্থল থেকে চারটি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close