তুহিন খান নিহাল

  ১৮ নভেম্বর, ২০১৯

সুরের কাঁপনে মেতেছিল আর্মি স্টেডিয়াম

চারদিকে সুরের কাঁপন। হেমন্তের এ দিনে নানা রং, আলোকিত মঞ্চ আর এমন বর্ণিল সাজে সেজেছিল রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়াম। এ যেন এক গানের নৌকা ভাসালেন শ্রোতাদের দরিয়ায়। সেখানে লোকসংগীতের মধুর মায়ায় মেতে উঠেছে হাজার-হাজার দর্শক। মধ্যদুপুর গড়িয়ে পড়ন্ত বেলা প্রায় সন্ধ্যা! সূর্যের মিষ্টি তেজ লজ্জায় মুখ লুকাতেই যেন ব্যস্ত। বিপরীতে মাঠের উজ্জ¦ল আলোর অস্তিত্ব দর্শকদের জানান দিচ্ছে শেকড়ের টান। জীবনের দর্শন খুঁজতে আসা সীমানা ছাড়ানো লোকজ গানে সুরের মূর্ছনায় ভাসিয়ে দিয়েই প্রতি বছরের মতো এবারও এমন আয়োজন। ব্যস্ত প্রাণ যেন পেল এক রঙিন জীবনের ছোঁয়া। তারই প্রমাণ মিলে প্রতি বছর আয়োজিত দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় লোকসংগীত উৎসব ‘ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্টে দর্শকদের বিপুল উপস্থিতি দেখে। বলতে গেলে বাঙালির মাটির গানের প্রতি ঝোঁক রয়েছে। কারণ লোকগান বাঙালি জাতির সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যে হাজার বছর ধরে প্রবহমান। সংগীতের এ ধারায় মিশে আছে জীবনের গভীর দর্শন, অধ্যাত্মিকতা, প্রেম আর মাটির ঘ্রাণ, যা বিগত চার বছরের বছরের পরিক্রমায় আঁচ করা গেছে। মনে হচ্ছে গত চারবারের চেয়ে এবারের পঞ্চম আসর ছিল আরো বেশি বর্ণিল, আরো বেশি লোকারণ্য। চারদিকে কেবল মানুষ আর মানুষ। এ যেন মানুষেরই সমুদ্র। সুরের তালে আন্দোলিত হয়ে প্রাণ খুলে চিৎকারে ভেসে যাচ্ছে সুরের মোহনায়। কেউ কেউ নিজেকে শিল্পীর গানের তালে ঠোঁট মিলিয়ে হারিয়ে যাচ্ছেন সুরের জাদুতে। মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করছেন পুরো সময়টা। যেন ক্লান্তি ভুলে কোনো এক মধুর সময় পার করছেন দর্শক। হাজার-হাজার মানুষের হাততালির মাঝে মনে হয় এই তো সুখ, এখানেই শান্তি। এমনই অভিব্যক্তি সবার চোখে-মুখে। সব বয়সি মানুষ এসেছে শেকড় সন্ধানী লোকগান শুনতে। শ্রোতারা আসছে দলবেঁধে। স্টেডিয়ামের গ্যালারি, মূল মাঠে এবং ঘাসে বসেও মানুষ গান উপভোগ করছে। এত মানুষ প্রবেশে চারদিকে হুড়োহুড়ি হলেও পুরো স্টেডিয়াম ছিল কড়া নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা। হাজার হাজার দর্শকের চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেয়েছে নিরাপত্তাকর্মীরা। এবারের আয়োজনের প্রথমদিনে দর্শকদের উপস্থিতি কম ছিল না। তবে দিনের পরিক্রমায় শুক্রবার-শনিবার ছুটির দিনে আর্মি স্টেডিয়াম লোকে-লোকারণ্য হয়ে উঠে। উপস্থিতি বেড়ে দাঁড়ায় নজর কাড়ার মতো। যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। বাঙালির প্রাণের সংগীত লোকসংগীত তা আবারও প্রমাণ করে এ আয়োজনে। এবারের পঞ্চম আসরে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ছয়টি দেশ থেকে ২০০ জনের বেশি লোকশিল্পী ও কলাকুশলী জড়ো হয়েছেন একই মঞ্চে। এর মাঝে প্রথমদিন মঞ্চ মাতান বাংলাদেশের ‘প্রেমা ও ভাবনা নৃত্য দল’, জর্জিয়ান ফোক ব্যান্ড শেভেনেবুরেবি, বাংলার বাউল গানের অনন্য শিল্পী, গীতিকার ও সুরকার শাহ্ আলম সরকার ও ভারতের দালের মেহেন্দি। দ্বিতীয় দিন স্বদেশের হৃদয় জাগানিয়া মেঠো টান, আর পাকিস্তান ও মালির লোকজ সুরে মেলবন্ধন গড়ে ওঠল উৎসবের মঞ্চে। এ দিন দেখা মিলল বাংলাদেশের কাজল দেওয়ান, কামরুজ্জামান রাব্বি, শফিকুল ইসলাম এবং পাকিস্তানের হিনা নাসরুল্লাহ এবং মালির লোকসংগীতের জীবন্ত কিংবদন্তি হাবিব কইটে ও তার ব্যান্ড বামাদার সদস্যদের। ছিলেন বাংলাদেশের লোকসংগীত, বাউল ও সুফি গানের জনপ্রিয় শিল্পী ফকির শাহাবুদ্দিন। সর্বশেষ দিনে পরিবেশনায় ছিলেন দেশীয় বাউলশিল্পী কাজল দেওয়ান, রাশিয়ান কারেলিয়া অঞ্চলের জনপ্রিয় ব্যান্ড সাত্তুমা, লালন সংগীতশিল্পী চন্দনা মজুমদার ও পাকিস্তানি ব্যান্ড জুনুন। তাদের পরিবেশনার মধ্যদিয়েই শেষ হয় এবারের আসর।

বৃহস্পতিবার থেকে টানা তিন রাত শিকড়ের গানের সুরের মূর্ছনায় মেতে উঠেছিল রাজধানীর দর্শক-শ্রোতা। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শিকড়ের গানের শিল্পীদের গানে গানে ঘোর লেগেছিল রাজধানীর প্রায় ৩০ হাজার মানুষের।

আয়োজকরা জানান, তাদের স্বপ্ন, ভবিষ্যৎ দিনগুলোতে সবার প্রচেষ্টায় বাংলা লোকগান টিকে থাকবে আপন গরিমায়, আর সারা পৃৃথিবী মেতে উঠবে বাংলা লোকসংগীতে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close