জিয়াউদ্দিন রাজু

  ২০ ডিসেম্বর, ২০১৯

আজ আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন

সাধারণ সম্পাদক পদ ঘিরে কৌতূহল

উপমহাদেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২১তম ত্রিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলন শুরু হচ্ছে আজ। দুদিনব্যাপী চলবে এই সম্মেলন। সম্মেলনে দলের নীতি ও কৌশল নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে। সেখানে দলের বর্তমান সভানেত্রী শেখ হাসিনাই আবার সভাপতি হচ্ছেন, এটা নিশ্চিত। তবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ সাধারণ সম্পাদক পদে কে আসছেন—তা নিয়েই দল ও দলের বাইরে সবার ব্যাপক আগ্রহ এবং কৌতূহল তৈরি হয়েছে।

সরকার ও দলের দায়িত্ব নেতাদের মধ্যে পৃথকভাবে বণ্টন করার ব্যাপারে আলোচনা রয়েছে। সম্মেলনে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাও মত দিয়েছেন। তবে নবীন-প্রবীণ সমন্বয়ে যে ভবিষ্যতের নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে, সেটা দায়িত্বশীল সূত্র একাধিকবার জানিয়েছে। এদিকে সম্মেলনের এক দিন আগেও দলের মধ্যে ‘সাধারণ সম্পাদক’ পদ নিয়ে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা লক্ষ করা গেছে। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের পক্ষেও যেমন ব্যাপক সমর্থন রয়েছে, তেমনি প্রতিযোগী অন্য নেতাদেরও কর্মী-সমর্থক রয়েছেন। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি উপকমিটির বৈঠকের আগে ও পরে সেটা লক্ষ করা গেছে।

সাধারণ সম্পাদক পদের বিষয়ে বিভিন্ন সময় বঙ্গবন্ধুর উদাহরণ দিয়ে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মন্ত্রিত্ব ছেড়ে বঙ্গবন্ধু দলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। সে হিসেবে দলের সাধারণ সম্পাদক যেন মন্ত্রিপরিষদের বাইরের কেউ হন। এর আগে ২০তম জাতীয় সম্মেলনেও এসব কথা উঠেছিল, তবে তা বাস্তবায়ন হয়নি। তবে এবার দলীয় প্রধান এ ব্যাপারে অনড় অবস্থানে বলে জানা গেছে।

২০তম সম্মেলনের আগে সাধারণ সম্পাদক পদের ব্যাপারে একটা গ্রিন সিগন্যাল পাওয়া গেলেও এখন পর্র্যন্ত তেমনটি পাওয়া যায়নি। আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে আলাপকালে এমন তথ্য জানা গেছে।

দলীয় এক সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা মনে করেন, দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এমন কারো দায়িত্ব পালন করা উচিত—যিনি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থেকে ক্লিন ইমেজ নিয়ে দল ও আদর্শের জন্য কাজ করছেন। যিনি বঙ্গবন্ধুকে দেখেছেন, স্বাধীনতা সংগ্রাম-মুক্তিযুদ্ধ দেখেছেন, পঁচাত্তরের নৃশংস হত্যাকা- দেখেছেন। পরবর্তী প্রজন্ম থেকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করার সময় এখনো আসেনি বলে মনে করেন তিনি।

গত বৃহস্পতিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনের প্রস্তুতি দেখতে এসে সাংবাদিকদের ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সভাপতির পদ ছাড়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ অন্য কোনো পদে পরিবর্তন আসছে কি না—তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে আগামী ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। নেত্রী দলের নতুন টিম কীভাবে সাজাবেন, তা তিনি নিজেই ঠিক করবেন। ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, আমাদের নেত্রী আসলে কী চান? কাকে চান? কাউন্সিল থেকে যে নেতৃত্ব আসবে এই নেতৃত্ব তিনি কোন মডেলে রিকাস্ট করবেন এবং কীভাবে সাজাবেন নিজেই সেটি ঠিক করবেন।’

সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে দলের একটি অংশ বলছেন, ওবায়দুল কাদেরই বহাল থাকছেন তার পদে। আবার নেতাদের কেউ কেউ জোরের সঙ্গে বলছেন, পরিবর্তন আসছে। এ পদে আসার জন্য নানামুখী তদবিরও চলছে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে দলের সভানেত্রীর ওপর। একমাত্র তিনিই জানেন কে ধরবেন ভবিষ্যতের সাধারণ সম্পাদক পদের হাল।

ওবায়দুল কাদের কি আবার হচ্ছেন : আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদটি বরাবরই গুরুত্ববহ। দল তো বটেই, সারা দেশের রাজনীতির গতি-প্রকৃতি নির্ধারণেও এই পদের ভূমিকা আছে। সভানেত্রীর সঙ্গে তার আলোচনা-পরামর্শে নেওয়া হয় সিদ্ধান্ত। দলের নেতাদের অনেকেই বলছেন, ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-ক্ষমতার অপব্যবহারের কোনো অভিযোগও নেই। তাই এবারও দলীয় প্রধানের পছন্দের তালিকায় আছেন তিনি। তবে পদে বহাল থাকলে তাকে মন্ত্রিত্বের দায়িত্বের বাইরে রাখা হতে পারে—এমন কথাও চলছে দলের মধ্যে।

কাদের না হলে তবে কে : রাজনীতিতে ওবায়দুল কাদেরের সক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন নেই নেতাকর্মীদের মধ্যে। তবে সাংগঠনিক কর্মকা-ে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলাপর্যায়ে সম্মেলন সম্পূর্ণ করতে আরো সাংগঠনিক তৎপরতার প্রয়োজন ছিল বলে অনেকেই মনে করেন। এর আগে সৈয়দ আশরাফ ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে কমিটি করে দিয়েছেন ৫৮টি, কিন্তু ওবায়দুল কাদেরের গত তিন বছরে একটি জেলায় সম্মেলন হয়েছে। তবে সর্বশেষ গত মাসে এবং চলতি মাসে তিনি ৩০টি জেলায় সম্মেলন করেছেন। এ ব্যাপারে যদিও দলীয় প্রধানের কড়া নির্দেশ ছিল।

ওবায়দুল কাদের ছাড়াও আলোচনায় রয়েছেন—আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

তাদের মধ্যে আবদুর রাজ্জাকের সক্রিয় অবস্থান ছিল ৬৬ সালের ৬ দফা ও ৬৯ সালের সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফার আন্দোলনে। ৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নিয়ে তিনি কারাবরণ করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী (৭২-৭৩) সেশনে তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসংসদের জিএস নির্বাচিত হন। ১/১১-তে শেখ হাসিনা মুক্তি আন্দোলনে বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে কর্মীদের আস্থায় আসেন।

জাহাঙ্গীর কবির নানকও আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের নেতা হিসেবে পরিচিত। ছাত্রজীবনেই রাজনীতিতে হাতেখড়ি। জিয়ার শাসন আমলে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দেন তিনি। এ সময় রাজপথের সৈনিক হিসেবেই পরিচিতি পান নানক। যুবলীগের চেয়ারম্যান থাকাকালে ১/১১-তে শেখ হাসিনা গ্রেফতার হলে তার মুক্তির দাবিতে জরুরি অবস্থা চলাকালেই বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেন। ওই আন্দোলনের কারণে কর্মীদের আস্থায় আসেন নানক। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বিডিআর বিদ্রোহ চলাকালে শান্তির বার্তা নিয়ে বিপজ্জনক স্থানে গিয়ে পরিবেশ শান্ত করেছিলেন জাহাঙ্গীর কবির নানক। এদিকে তরুণ নেতৃৃত্বের মধ্যে খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর নামও আছে আলোচনায়।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
জাতীয় সম্মেলন,আওয়ামী লীগ,সাধারণ সম্পাদক,কৌতূহল
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close