প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
বিবিসির প্রতিবেদন
বাংলাদেশে ধর্ষণের বিচার কম
দেশে যে হারে নারী ও শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে, বিচার হচ্ছে তার তুলনায় অনেক কম। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, ধর্ষণের বেশিরভাগ ঘটনাই জনসম্মুখে আসে না, ধামাচাপা পড়ে যায়। এ ছাড়া ধর্ষণের বিচার পেতেও নারীকে পদে পদে হয়রানি আর অবমাননার শিকার হতে হয়। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।
ধর্ষিত হয়ে চার বছর মামলা চালিয়ে বিচার পেয়েছেন এমন একটি মেয়ে বিবিসিকে বলেন, মাদরাসার একজন শিক্ষকের দ্বারা ধর্ষিত হয়ে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছিলেন। নাম-পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এ ভিকটিম বলেন, ‘ধর্ষক আমার হুজুর ছিল, সে মাদরাসায় পড়াত। ঘটনা হওয়ার পর আমরা পুলিশের কাছে যাই নাই। অনেক পরে জানাজানি হয়। আমার ফ্যামিলিও জানত না। আমাকে ভয় দেখিয়েছিল ওই হুজুর। আর আমি তখন কিছুই বুঝতাম না। জানার পরে আমার আব্বু কোর্টে মামলা করেন। মেডিক্যাল রিপোর্টে দেখা যায় আমি প্রেগন্যান্ট হয়ে গেছি। ঘটনাটি জানাজানির পরে নিরাপত্তার জন্য আমি মহিলা আইনজীবী সমিতির শেল্টারে ছিলাম।’ ধর্ষণের শিকার নারীকেই সমাজে দোষী করার প্রবণতা রয়েছে। এ ভিকটিমের সেই অভিজ্ঞতা হয়েছে। তিনি আরো বলেন ‘আমার এলাকার মানুষও সবসময় আমার বিরুদ্ধে ছিল। তারা আমাদের এলাকা থেকে বের করে দিতে চেয়েছিল।’ ধর্ষণের শিকার নারীকে বার বার ঘটনার বিবরণ দেওয়া এবং নানান প্রশ্নের মুখে বিব্রত হতে হয়। এ ভিকটিম বলছিলেন, ‘আমি কোর্টে দুইবার গিয়েছি। আমি মিথ্যা বলছি, এমন প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে। একটা সত্য ঘটনা মিথ্যা বলে প্রমাণের চেষ্টা বিব্রতকর। কোর্টের মাঝখানে এত মানুষের সামনে কথা বলতে আমার খুউব আন ইজি লাগছে। এতগুলা মানুষের সামনে এত পারসোনাল বিষয়ে এতকথা বলা! তারপর এক একজন এক এক কথা বলে একেকটা মন্তব্য করে। যেমন এটা মিথ্যা হতে পারে বা আমি খারাপ।’ চার বছর মামলা চলার পর তার ধর্ষকের যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে। এই ভিকটিম চার বছরে বিচার পেলেও অনেক মামলা বছরের পর বছর ঝুলে আছে।
ধর্ষণের শিকার মেয়েদের সারাদেশে ৮টি ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের মাধ্যমে কাউন্সেলিং, পুলিশি ও আইনি সহায়তা দেওয়া হয়। ২০০১ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে প্রতিষ্ঠিত এসব কেন্দ্র থেকে চার হাজার ৩৪১টি যৌন নির্যাতনের মামলা হয়েছে যার মধ্যে ৫৭৮টি বিচার হয়েছে এবং সাজা হয়েছে মাত্র ৬৪টি ঘটনার। ঢাকা মেডিক্যালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের কো-অর্ডিনেটর ডাক্তার বিলকিস বেগম বলেন, শারীরিক পরীক্ষা যথাসময়ে না হলে ধর্ষণ প্রমাণ ও বিচার পাওয়া কঠিন।
তিনি বলেন, ‘আইনি লড়াইয়ের জন্য এই যে সার্টিফিকেটটা খুবই দরকার। এই সার্টিফিকেট না হলে কোনো বিচারই হবে না। ওরা আসতেই দেরি করে ফেলে অনেক সময়। ফাইন্ডিংস আমরা ঠিকমতো পাই না। ঘটনা ওরা স্থানীয়ভাবে ম্যানেজ করার চেষ্টা করে, সময়টা কিল করে ফেলে। লিডাররা বসে সাতদিন পনেরদিন পার করে ফেলে আমরা ফাইন্ডিংস পাই না।’বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি ধর্ষণের মামলায় আইনি সহায়তা দেয়। সংস্থার নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, ‘বিচারহীনতার কারণেই কিন্তু ধর্ষণের বিষয়গুলা আরো বেশি হচ্ছে। বার বার প্রমাণ করতে গিয়ে ভিকটিম দ্বিতীয় বার ধর্ষণের শিকার হয়। থানায় মামলা নিতে বা আসামি পক্ষের আইনজীবী যেভাবে প্রশ্ন করে তখন কিন্তু সে আরেকবার ধর্ষণের শিকার হয়। আইনে আছে ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করতে হবে, বিশেষ ক্ষেত্রে কারণ দেখিয়ে কিছুটা সময় নিতে পারে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে মামলা শেষ হতে ১০-২০ বছরও লেগে যাচ্ছে।’ ধর্ষণের বিচারহীনতা ছাড়াও পুলিশের গাফিলতির অভিযোগ করেছেন নারী অধিকার কর্মীরা।
"