দিনাজপুর প্রতিনিধি

  ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

গ্রীষ্মকালীন টমেটোতে কৃষকের মুখে হাসি

দিনাজপুরে গ্রীষ্মকালীন টমেটো বাজারে উঠতে শুরু করেছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। বাজারে চাহিদা থাকায় কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন। এতে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। কৃষকরা অসময়ে ফলানো টমেটো এলাকার চাহিদা মিটিয়ে জেলার বাইরে সরবরাহ করছেন।

গাবুড়া হাটের আরতদার শহীদুজ্জামান শহীদ জানান, কয়েক দিন হলো গ্রীষ্মকালের নতুন জাতের টমেটো বাজারে উঠতে শুরু করেছে। গত মঙ্গলবার থেকে বাইরের পাইকাররা খোঁজখবর নিয়ে আসতে শুরু করেছে। গত দুদিনে এই হাট থেকে প্রায় ২০ ট্রাকে ১৯০ মেট্রিক টন টমেটো ঢাকা ও টাঙ্গাইলে পাঠানো হয়েছে। প্রতি কেজি টমেটো কৃষকরা (১৫ টাকা কেজিতে) ৬০০ টাকা মন দরে পাইকারদের কাছে বিক্রি করছেন। তাপপ্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে অন্যান্য জেলার পাইকাররা ঠিকমতো টমেটোর কেনার জন্য আসছেন না। তারা গ্রীষ্মকালের নতুন টমেটো কিনতে আসা শুরু করলে টমেটোর দাম ও বিক্রি বাড়তে থাকবে।

দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপপরিচালক মো. নুরুজ্জামান মিয়া জানান, এ বছর জেলায় গ্রীষ্মকালীন টমেটোর আবাদ হয়েছে ৯৬০ হেক্টর জমিতে। যা গত বছর ছিল প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে। তার আগের বছরে ছিল ৯৩৪ হেক্টর জমিতে। তারা প্রতি মণ টমেটো বর্তমানে সাড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা মন পর্যন্ত দাম পাচ্ছেন। এবার এই গ্রীষ্মকালীন টমেটোর আবাদ ভালো হওয়ায় ফলন অনেক বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া কৃষকদের দীর্ঘদিনের দাবিতে টমেটো সংরক্ষণের জন্য জেলার বীরগঞ্জ ও চিরিরবন্দর উপজেলায় দুটি মিনি হিমাগার স্থাপনের কাজ চলছে।

জেলা কৃষি অফিস জানায়, গত ১০-১৫ বছর ধরে দিনাজপুর সদর উপজেলাসহ চিরিরবন্দর, খানসামা, বীরগঞ্জ, বিরল ও ফুলবাড়ি উপজেলায় গ্রীষ্মকালীন টমেটোর আবাদ হয়েছে। টমেটোর বীজ বোনা শুরু হয়ে থাকে জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে। দুই মাসের মধ্যেই টমেটো গাছে ফল আসে, আর ১ মাস পরেই টমেটো পাকতে শুরু করে। তবে জুন পর্যন্ত এই টমেটো জমিতে থাকে বলে জানিয়েছে কৃষি অফিস।

টমেটো শীতকালীন সবজি হলেও দিনাজপুরে গ্রীষ্মকালেও আবাদ হয়ে থাকে। গ্রীষ্মকালীন এই টমেটো চাষে রোগ-বালাই ও পোকার আক্রমণ হয় খুব বেশি। তা ছাড়া টমেটো গাছ খুবই স্পর্শকাতর হয়ে থাকে। সামান্য আবহাওয়ার তারতম্য ঘটলে ফসলের বিপর্যয় ঘটতে পারে। এজন্য টমেটো চাষিদের সব সময় সজাগ থাকতে হয়। কৃষকরা এই টমেটো সুষ্ঠুভাবে আবাদ করে একর প্রতি আয় করতে পারে প্রায় ২ থেকে ৩ লাখ টাকা। আর দেশের অনেক কোম্পানি টমেটো ক্রয় করতে এখানে আসে জেলী কিংবা অন্যান্য খাদ্য উপকরণ তৈরি করার জন্য।

সরেজমিনে দেখা গেছে, দিনাজপুর সদর উপজেলার শেখপুরা ইউনিয়নের গোপালপুর গাবুড়া বাজারে টমেটোর বিশাল হাট বসেছে। পুরোদমে চলছে এই টমেটোর হাট। প্রতিদিন এই হাট থেকে শতাধিক ট্রাক টমেটো নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। প্রায় দেড় থেকে ২ মাস পর্যন্ত এই টমেটোর হাট চলমান থাকে। আগামী জুন পর্যন্ত চলবে হাট।

দিনাজপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল রায়হান জানান, হাটটি প্রতি বছর সরকারিভাবে দরপত্রের মাধ্যমে ইজারা দেওয়া হয়। চলতি বছর ৮৫ লাখ টাকায় এই টমেটোর হাট ইজারা দেওয়া হয়েছে।

সদর উপজেলার শেখপুরা ইউনিয়নের সরকারপাড়া এলাকার মোশারফ হোসেনের ছেলে শরিফুল ইসলাম, দক্ষিণ শিবপুর গ্রামের বুড়িথান এলাকার রতন, কলিম উদ্দিন , সেহী দাস ও সুন্দরবন ইউনিয়নের মিয়াজীপাড়ার মহিদুল ইসলামে ছেলে মহিবুর রহমান বলেন, এবারও পৃথকভাবে রাণী, বিপুল প্লাস ও প্রভেন সিড নামে তিন জাতের টমেটো আবাদ করেছি। সার ও বীজের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি কামলাদের মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার টমেটো উৎপাদনে খরচ বেড়েছে। সেই হিসেবে ফলন বৃদ্ধি পেলেও এখন দাম একটু কম পাচ্ছি। পাইকারদের আগমন ও জেলার বাইরে টমেটোর চাহিদা বাড়লে দাম বাড়বে বলে তারা আশা করছেন তারা।

টমেটো হাটের আড়তদার রফিক মোল্লা, সদের মিয়া, মনোয়ার মতিবর ও শরিফ বলেন, প্রতিদিন এই টমেটো হাট থেকে প্রায় শতাধিক ট্রাকে টমেটো বোঝাই করে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। আজকের বাজার দর মণপ্রতি সর্বোচ্চ সাড়ে ৬০০ টাকা বিক্রি করছি। মান অনুযায়ী দাম ৫০০ টাকা পর্যন্ত মণ বিক্রি করেছি। গত বছর এ সময় ১ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম উঠেছিল। এই টমেটো হাট আগামী জুন পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছেন আড়তদাররা।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী-পরিচালক মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, দিনাজপুরের সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যসম্মত এই গ্রীষ্মকালীন টমেটো অসময়ে দেশের চাহিদা মিটিয়ে আসছে গত দুই যুগ ধরে। প্রতিবারই এর আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা উন্নত হয়েছে। ফলন বেশি হলেও দাম কম পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি জানান, সবেমাত্র মাঠ থেকে বিক্রি শুরু হয়েছে। দিন যতই যাবে, দামও বৃদ্ধি পাবে, এতে কৃষকরা লাভবান হবেন।

মিনি হিমাগার বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে এই কৃষি কর্মকর্তা জানান, দিনাজপুরের চিরিরবন্দর ও বীরগঞ্জ উপজেলায় এই টমেটো সংরক্ষণের জন্য মিনি হিমাগার বাস্তবায়নের সন্নিকটে। এটি বাস্তবায়িত হলে জেলায় গ্রীষ্মকালীন টমেটোর আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা বেড়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close