জাহিদুল হক মনির, শেরপুর

  ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

শেরপুরে দুর্বৃত্তের আগুনে পুড়ছে পাহাড়ি বন

ভারত সীমান্ত ঘেঁষা শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের গারো পাহাড়ে শাল-গজারির বনের অন্তত ১৫টি স্থানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে পাহাড়ের গাছ ও বনবীথি আগুনে পুড়ে গেছে। এতে শুধু গাছপালা ও প্রাণী ধ্বংস হচ্ছে না, নষ্ট হচ্ছে মাটির গুণ ও প্রকৃতি। বনের জমি দখল আর লাকড়ি সংগ্রহ করতে দুর্বৃত্তরা সরকারি পাহাড়ে আগুন দিয়ে থাকে বলে স্থানীয় ব্যক্তিরা জানিয়েছেন। এই খারাপ লোকরা জানে না মানুষের চারপাশে প্রাকৃতিক পরিবেশের উপকরণ রয়েছে। এসব হচ্ছে গাছ, মাটি, পানি, বাতাস, নদ-নদী, পথঘাট-মাঠ ও আবহাওয়া ও জলবায়ু। এসবই মানুষের উপকারী ও পরিবেশবান্ধব। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী এসব প্রাকৃতিক উপাদানের অপব্যবহার এবং অবাঞ্ছিত পরিবর্তনের মাধ্যমে মানুষ পরিবেশকে দূষিত করছে। মানবসৃষ্ট এ পরিবেশ দূষণের মধ্যে রয়েছে- পানিদূষণ, বায়ুদূষণ, বৃক্ষনিধন, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস।

স্থানীয়রা জানান, বছরের পর বছর ধরে চলছে এ বন পোড়ানো। প্রতি বছর এ মৌসুমে বনে আগুন দেওয়ার কারণে পুড়ে যায় ছোট গজারি গাছ (শালকপিচ), ঝুপঝাড়, লতাপাতা, পোকামাকড়, কেঁচো ও কীটপতঙ্গসহ নাম জানা-অজানা বিভিন্ন প্রাণী। জন্ম নেয় না গাছ। বিনষ্ট হয় বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল। বন পোড়ানোর কারণে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। আশঙ্কা করা হচ্ছে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া হলে ক্ষতি বেড়েই চলবে। বন বিভাগ সূত্র জানায়, ময়মনসিংহ বন বিভাগের রাংটিয়া রেঞ্জের আওতায় ৩টি বিট কার্যালয় রয়েছে। এ তিনটি বিট কার্যালয়ের আওতায় বনভূমি রয়েছে প্রায় ৮ হাজার ৮৮০ একর। এর মধ্যে বেশির ভাগ জমিতে শাল-গজারিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা সমৃদ্ধ বন রয়েছে। প্রতি বছরের ফাল্গুন-চৈত্র মাসে শাল-গজারিসহ বিভিন্ন গাছপালার পাতা ঝরে পড়ে। বনাঞ্চলের মধ্য দিয়ে চলাচলের জন্যে সড়কপথ থাকায় খুব সহজেই দুর্বৃত্তরা রাতে আবার কখনো দিনেও বনে আগুন দেন। ঝরাপাতাগুলো শুকনো থাকার কারণে মুহূর্তেই বনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুন দেওয়ার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়ায় বছরের পর বছর চলছে বন পোড়ানোর এমন ঘটনা।

গত বৃহস্পতিবার ঝিনাইগাতী-কামালপুর সড়কের ময়মনসিংহ বন বিভাগের রাংটিয়া রেঞ্জের গজনী বিট এলাকার গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়ের চারটি স্থানে বড়আকারে আগুন জ্বলছে। আবার দুটি স্থানে অল্প অল্প আগুন জ্বলছে। স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেন, কে বা কারা ঘণ্টাখানেক আগে সেখানে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। গত দুই সপ্তাহে শাল-গজারি বনের কমপক্ষে ১৫টি স্থানে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

গান্ধী গ্রামের বাসিন্দা মো. লিটন মিয়া বলেন, বনের ভেতর অসংখ্য রাস্তা রয়েছে। কে কখন কোন রাস্তা দিয়ে এসে আগুন দিচ্ছে, তা বোঝার উপায় থেকে না। তবে কিছুদিন ধরে মাঝে মধ্যেই বনের ভেতর আগুনের দেখা মিলছে।

রাংটিয়া এলাকার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘আপন শিক্ষা পরিবার’ এর পরিচালক মো. রহমত আলী বলেন, প্রতি বছর এ মৌসুমে বনে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। মাঝে মধ্যে বিট কার্যালয়ের আশপাশের বনেও আগুন জ্বলতে দেখি। এরপরও এসব বন্ধের বিষয়ে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করতে দেখা যায় না বন বিভাগকে।

বার্ড কনজারভেশন সোসাইটি ঝিনাইগাতী শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, যুগ যুগ ধরে মানুষ নিজের ব্যক্তিস্বার্থে ও জীবনের উন্নয়নের জন্য পরিবেশের ওপর নির্মম অত্যাচার চালিয়েছে। মানুষের অপতৎপরতা, বিশেষ করে বিজ্ঞানের উন্নতির পর থেকে দ্রুতগতিতে বিস্তার লাভ অজস্র ছোট-বড় প্রাণী, গাছগাছালি ও প্রাকৃতিক সম্পদের বিনাশ সাধন করেছে। এসবের অবশ্যম্ভাবী ক্ষতির প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে। এর প্রমাণ বর্তমানে পৃথিবীর তাপমাত্রা অধিক পরিমাণে বাড়ছে, জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে। পৃথিবীর সব অঞ্চলেই খরা, বন্যা ও পশুপাখির বিলুপ্তি ঘটছে। খুবই জরুরি ভিত্তিতে সাধারণ মানুষকে পরিবেশ ও বন সম্পর্কে সচেতন করতে উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার। মানুষকে যেহেতু পরিবেশে বাস করতেই হবে, সেহেতু তাদের উচিত নিজেদের অস্তিত্ব ও স্থায়িত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য পরিবেশের মৌলিক উপাদানগুলো যথাযথ সংরক্ষণ করা।

রাংটিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আবদুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমান সময়ে শাল-গজারিসহ বিভিন্ন গাছপালার পাতা ঝরে পড়ে দুই-তিন ইঞ্চি উঁচু স্তরে জমা আছে। এতে আগুন ধরিয়ে দিলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। বনের ভেতর আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে আমার অল্প সংখ্যক স্টাফ নিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি। পাশাপাশি দুর্বৃত্তদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close