নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৯ এপ্রিল, ২০২৪

প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছেন না কেউ

তীব্র তাপপ্রবাহে বিপর্যস্ত রাজধানীর জনজীবন। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে তেমন বের হচ্ছে না সাধারণ মানুষ। ফলে ঢাকার অলিগলি ও কোলাহলপূর্ণ স্থানগুলোয় স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে লোকসমাগম একেবারেই কম। এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে সড়ক ও এর পাশে গড়ে ওঠা ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোয়। অনেকটাই ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়েছে ফুটপাতের টঙ দোকান। ফলে দিনের বেলা দোকান বন্ধ রাখছেন তারা। গতকাল রবিবার রাজধানীর একাধিক এলাকা ঘুরে এসব চিত্র দেখা যায়।

মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা রিন্টু বলেন, এই রোদে বেশিক্ষণ বাইরে থাকা যায় না। একটা কাজ ছিল, তাই বের হয়েছি। কাজ শেষ করেই দ্রুত বাসায় ফিরব।

বেসরকারি চাকরিজীবী রায়হান বলেন, পেটের দায়েই এমন গরমের মধ্যেও বের হতে হয়। বাইরে বেশিক্ষণ থাকলে মনে হয় স্ট্রোক করব। বাইরে লোকজন কম বের হওয়ায় বিক্রিবাট্টা কমেছে এলাকাভিত্তিক দোকানগুলোয়।

মোহাম্মদপুর বসিলা রোডের চা বিক্রেতা বিল্লাল বলেন, এই গরমে কেউ চা খেতে আসেন না। কেউ কেউ এসে ঠাণ্ডা পানি বা কোক খান।

মুদি দোকানিরা বলছেন, ভরদুপুরে ক্রেতার সংখ্যা একেবারেই কম। মূলত সন্ধ্যার পর ক্রেতাসমাগম বৃদ্ধি পায়।

ঢাকা উদ্যানে অবস্থিত জিহান জেনারেল স্টোরের মালিক বলেন, বাইরে প্রচণ্ড রোদ, মানুষ খুব একটা বের হয় না। আগে এ সময়ে যে বিক্রি হতো, সেটি কমে গেছে। তবে, সন্ধ্যার পর বেচাবিক্রি বাড়ে।

গরমের প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে ঢাকার গণপরিবহনেও। সাধারণত সব সময় ঢাকার বাসগুলোয় যাত্রীর আধিক্য দেখা যায়। তবে দুপুরের দিকে বেশির ভাগ বাসই প্রায় ফাঁকা দেখা গেছে।

যাত্রীরা বলছেন, গরমে বাসের ভেতরে হাঁসফাঁস পরিস্থিতি তৈরি হয়। ছাদের টিন থেকে গরম নেমে আসে। অনেকে বিকল্প উপায়ে বা রোদ চড়া হওয়ার আগেই গন্তব্যে পৌঁছান। দুপুরের সময় একান্ত বাধ্য না হলে কেউ বাসে চড়ছেন না।

উত্তরাগামী বিকাশ পরিবহনের যাত্রী শেখ শামসুল বলেন, গরমে বাস জার্নি করা কষ্টকর। তবু যেতে হবে বলে চড়েছি, এখন জ্যামে না পড়লেই বাঁচি।

বাসটির হেলপার বলেন, মূলত গরমের কারণেই বাসে যাত্রীর পরিমাণ কমে গেছে। ভোগান্তি এড়াতে অনেকে বাসে না চড়ে সিএনজি বা মোটরসাইকেলে চড়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন

রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকাগুলোর অন্যতম মগবাজার। সাধারণ অবস্থায় মানুষের পদচারণায় এলাকাটিতে পা ফেলার জায়গা থাকে না। তবে তীব্র গরমে ভিন্ন চিত্র ফুটে উঠছে মগবাজারে। সূর্যের প্রখরতার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের উপস্থিতি কমে এলাকাটিতে। একই সঙ্গে মগবাজারের আউটার সার্কুলার রোডের দুই পাশে থাকা চা, পানসহ বিভিন্ন খাবার দোকানও বন্ধ থাকতে দেখা যায়।

মগবাজার কনভেনশন সেন্টারের পাশের গলিতে দীর্ঘদিন যাবত কলা, লেবুসহ বিভিন্ন দেশি ফল বিক্রি করে আসছেন ষাটোর্ধ্ব আহমদ আলী (ছদ্মনাম)। আর দশ দিনের মতো দোকান খোলা রাখলেও এদিন বেলা ১২টার দিকে তাকে মাটিতেই শুয়ে ঘুমাতে দেখা যায়। সব পণ্য খোলা অবস্থায় রেখেই ঘুমাচ্ছেন এই ফল বিক্রেতা। পাশের মুদি দোকানে কর্মচারীর কাছে জানতে চাইলে ওই ব্যক্তি বলেন, আধা ঘণ্টার মতো হবে আলী মিয়া ঘুমিয়েছেন। সকাল থেকে দোকান খুললেও তেমন ক্রেতা নেই। এর সঙ্গে প্রচণ্ড তাপে ক্লান্ত হয়ে হয়তো তিনি ঘুমিয়ে গেছেন।

গলিতে লোকজনের চলাফেরার বিষয়ে তিনি বলেন, সকালে অফিস আওয়ারের পর থেকে এমনিতেই লোকজন কম থাকে। তবে আশপাশে কাজ করা মানুষের চলাফেরা থাকে। তবে তীব্র গরমের কারণে এখন তা অনেকটাই কমে গেছে। মানুষ সন্ধ্যার আগে তেমন বাসা থেকে বের হয় না।

একই চিত্র আশপাশের চায়ের দোকানসহ অন্যান্য দোকানও। চায়ের দোকান সকাল ৭টা থেকে ৮টায় খোলা হলেও সড়কের পাশের দোকান অনেক বেলা পর্যন্ত বন্ধ থাকতে দেখা যায়। আবার সন্ধ্যার আগে আগে এসব দোকান খুলতে দেখা যায়।

এ বিষয়ে বিক্রেতারা বলেন, সড়কের পাশে হওয়ায় দিনের বেলায় তীব্র রোদ লাগে। আর ক্রেতার সংখ্যাও স্বাভাবিকের তুলনায় কম। তাই রোদের মধ্যে কষ্ট করে দোকান খুলি না। ক্রেতাই যদি না থাকে দোকান খুলে বসে থেকে কি লাভ।

এদিকে, দুপুরের খাবার সাজিয়ে বসে থাকা রেস্তোরাঁগুলোয় ক্রেতা সংকট চরমে পৌঁছেছে। শীতকে টেক্কা দেওয়ার নানা উপায় থাকলেও চলমান তাপপ্রবাহের কাছে পরাজিত দেশবাসী। প্রায় ২ কোটি মানুষের বসবাসের শহর ঢাকা যেন সেই তাপে একটু বেশিই উত্তপ্ত।

মুঘল ইম্পায়ার মোহাম্মদপুর শাখার ক্যাশিয়ার আশিকুর রহমানের কাছে বর্তমান ক্রেতা সমাগমের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, দিনে কাস্টমার কম। বাইরে অনেক গরম। কাস্টমার কমই আসছে। সন্ধ্যায় বা রাতে যে ক্রেতারা আসছেন, তাতে দিনের ঘাটতি পূরণ হচ্ছে না। আমাদের লস হচ্ছে।

একই চিত্র মোহাম্মদপুরের নূরজাহান রোড, তাজমহল রোড ও আদাবরের রিংরোড এলাকার রেস্তোরাঁগুলোয়ও।

রিংরোডের থাই কিং চা নামের একটি জুসবারের কর্মী মো. জুম্মন বলেন, দিনে প্রচণ্ড গরম। এই সময় ঠাণ্ডা জুস বেশি বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু গরমের কারণে মানুষ বাইরেই আসে না। লোক না থাকলে বিক্রি করব কার কাছে?

সন্ধ্যার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানিয়ে তিনি বলেন, সন্ধ্যার পর কিছু কাস্টমার হয়। কিন্তু তাও বেশি না। এমন না যে, কাস্টমার এসে ফিরে যাচ্ছে। কাস্টমারই পাচ্ছি না। গরমে মানুষই আসে না। যারা নিয়মিত কাস্টমার, তারাই আসছেন।

মোহাম্মদপুরের মতো একই অবস্থা ধানমন্ডি, মিরপুর এলাকায়। সকাল থেকে রেস্তোরাঁ খোলা থাকলেও তাতে ভিড় নেই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close