নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৭ এপ্রিল, ২০২৪

বিক্রি বেড়েছে সেমাই দুধ চিনির, দামও বেশি

পবিত্র ঈদুল ফিতরের বাকি আর মাত্র কয়েকদিন। এরই মধ্যে বাজারে বিক্রি বেড়েছে মিষ্টিজাত পণ্যের। রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে খোলা সেমাই বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৯০ থেকে ২৮০ টাকায়। আর বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ২০০ গ্রামের প্যাকেটজাত সেমাই বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। সেমাইয়ের সঙ্গে বিক্রি বেড়েছে গুঁড়া দুধ, চিনি, কিশমিশ, মুরুব্বা ও বাদাম। বিক্রেতারা বলছেন, ঈদ উপলক্ষে আগের চেয়ে কিছুটা দাম বেড়েছে এসব পণ্যের। তবে এতটা বাড়েনি। যা বেড়েছে তা মূলত খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে বাড়ানো হয়েছে।

তবে ঈদের আগে পণ্যের দাম সহনীয় অবস্থায় নেই বলে অভিযোগ ভোক্তাদের। দামের সঙ্গে মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। এক ক্রেতা বলেন, প্যাকেটজাত পণ্যের সবকিছু যে ভালো হয়, এমন কিন্তু নয়।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক মাস রোজা রাখার পর ঈদে সব শ্রেণির মানুষ আনন্দে মেতে ওঠে। নতুন পোশাকের সঙ্গে সামর্থ্য মতো ঘরে ভালো খাবারেরও আয়োজন করা হয়। এতে বাজারে এক ধরনের বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়। আর এই চাহিদাকে পুঁজি করে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অতি মুনাফা করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। ক্রেতার পকেট কাটতে বাড়ায় পণ্যের দাম। প্রতি বছরের মতো এবারও বাজারে সেই একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এক প্রকার নির্বিকার কর্তৃপক্ষ।

গতকাল শনিবার রাজধানীর জিনজিরা বাজার, বিভিন্ন বাজার ঘুরে খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর রোজার ঈদের আগে ২০০ গ্রামের প্রতি প্যাকেট চিকন সেমাই ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এবার ৪৫-৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পাশাপাশি খোলা চিকন সেমাই বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৮০ টাকা দরে, যা আগে ১০০ টাকা ছিল। ২০০ গ্রামের প্রতি প্যাকেট লাচ্ছা সেমাই বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা, যা আগে ৪০ টাকা ছিল। ৪০০ গ্রামের প্রতি প্যাকেট পাস্তা বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকা, যা আগে ৭৫ টাকা ছিল। পাশাপাশি প্রতি কেজি পোলাও চাল বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৬০ টাকা, যা ১৩০-১৪০ টাকা ছিল। এ ছাড়া গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৭৮০ টাকা, যা গত বছর ৭২০-৭৫০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা, যা গত বছর ১৭০-১৮০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা, যা আগে ১১০-১১৫ টাকা ছিল।

জানা গেছে, ২০০ গ্রামের মিল্কভিটা ঘি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা, যা গত বছর ঈদে বিক্রি হয়েছে ৩০০ টাকা। প্রতি কেজি জিরা বিক্রি হচ্ছে ৮০০-৯০০ টাকা, যা আগে ৬০০-৭০০ টাকা ছিল। দারুচিনি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫২০-৫৩০ টাকা, যা আগে ৪৫০-৫০০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ১৮০০-১৯০০ টাকা, যা আগে ১৫০০ টাকা ছিল। দেশি আদা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৪০-২৬০ টাকা, যা আগে ২২০-২৩০ টাকা ছিল। দেশি হলুদের কেজি ৩০০ টাকা, আগে ২৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া গুঁড়া দুধের মধ্যে প্রতি কেজি ডানো প্যাকেটজাত দুধ বিক্রি হচ্ছে ৮৬০ টাকা, ফ্রেস ব্র্যান্ডের প্রতি কেজি গুঁড়া দুধ বিক্রি হচ্ছে ৮২০ টাকা।

রামপুরা বাজারে পণ্য কিনতে আসা মো. সাঈদ বলেন, বাজারে কোনোভাবেই স্বস্তি নেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রিতে বিক্রেতারা কারসাজি করেন। রোজা এলেই পণ্যের দাম বাড়ান। আবার ঈদ আসার আগেও বিক্রেতারা আরেক দফা পণ্যের দাম বাড়িয়ে ক্রেতাকে নাজেহাল করেন। প্রতি বছরের মতো এবারও একই অবস্থার পুনরাবৃত্তি হয়েছে। এসব দেখার যেন কেউ নেই। প্রতি বছর একই অবস্থা হলেও সংশ্লিষ্টরা তাদের শাস্তির আওতায় আনে না। ফলে ভোক্তার নাভিশ্বাস ওঠে।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, রোজা-ঈদসহ কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান এলে দেশে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অতি মুনাফা করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। তাই ভোক্তাকে স্বস্তি দিতে হলে সংশ্লিষ্টদের কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করতে হবে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক এমকে মুজেরি বলেন, রমজানের আগেই অসাধুরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে ভোক্তাকে দিশাহারা করে তোলে। আবার নাজেহাল করে ঈদের আগে। কারণ বাজারে কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ নেই। পর্যাপ্ত তদারকি না থাকায় কোনো কিছু ফলপ্রসূ হচ্ছে না।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, রোজা ও ঈদ ঘিরে বাজার সার্বিকভাবে তদারকি করা হচ্ছে। অনিয়ম পেলেই আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেক অসাধু ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়েছে। এতে রোজার মধ্যে কিছু পণ্যের দাম কমতে শুরু করে। আশা করা যাচ্ছে ঈদের আগে পণ্যের দাম আরও কমবে। এ জন্য অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close